নিউইয়র্কে বিজয় দিবসের সমাবেশে টেলিফোনে শেখ হাসিনা বললেন

‘জনগণের আস্থা আমার ওপর আছে, আমি জনগণের পাশে আছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪   সর্বশেষ আপডেট : ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

‘জনগণের আস্থা আমার ওপর আছে, আমি জনগণের পাশে আছি’

টেলিফোনে শেখ হাসিনার ভাষণের সমন্বয় ঘটান। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে টেলিফোনে প্রদত্ত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমার কথা বন্ধ করতে পারবে না। আমি জনগনের পাশে আছি। জনগণের আস্থা আছে আমার ওপর। আমি দাবি করতে পারি যে, আওয়ামী লীগের আমলেই বাংলাদেশের মানুষ ভালো ছিল। শান্তিতে ছিল, তাদের জীবন-মান উন্নত হচ্ছিল। তারা দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছিল। হতদরিদ্র একেবারেই থাকবে না-আমি সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। দারিদ্রসীমা ২৫.১ ভাগ থেকে মাত্র ৫.৬ ভাগে নেমে এসেছিল। আমরা আরো ২১ হাজার ঘর-বাড়ি তৈরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দিয়েছিলাম। সেটি সম্পন্ন হলে অতিদরিদ্র আর থাকতোই না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আশ্রায়ন প্রকল্পে যাদেরকে ঘর দিয়েছি, তাদের ঘরগুলোও দখল করে নিচ্ছে ইউনূস বাহিনীর লোকেরা। এরফলে আবার তারা ভ’মিহীন, গৃহহীনে পরিণত হচ্ছে-এটাই হলো দুর্ভাগ্যের বিষয়।’ শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘গরিবের পেটে লাথি মারা আর জনগণ নিয়ে তামাশা করাই হচ্ছে তার চরিত্রের বৈশিষ্ট।’ নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ ও প্রবাসের সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই ফ্যাসিস্ট খুনী মাস্যলম্যান ইউনূস, তার ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই’ বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছে সন্ত্রাসীদের দ্বারা, অস্ত্র আর অর্থ দ্বারা। সারা বাংলাদেশে সে (ইউনূস) এজেন্ট নিয়োগ করেছে। গ্রাম-গঞ্জে, ইউনিয়নে জেলা পর্যায়ে খোঁজ করতে হবে যে তার এজেন্টরা কী করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা, অর্থ নিয়ে সন্ত্রাসীকে জড়ো করা, আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের খুঁজে বেরাই হচ্ছে ঐসব এজেন্টের কাজ। কাজেই জনগণেরও কাজ হবে তাদেরকে খুঁজে বের বরা যে, অপকর্ম কারা করছে। আজকে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই ইউনূন ক্ষমতায় থাকলে এদেশের মানুষের কখনো অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। জীবনের শান্তি আসবে না। নিরাপত্তা আসবে না। নিরাপদে চলতেও পারবে না। নিরাপদে বাড়িতে ঘুমাতেও পারবে না। এখোন কিন্তু মানুষের জীবন-মালের কোনই নিরাপত্তা নেই। এরকমই দুরাবস্থা’। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। যে বাংলাদেশ ছিল শান্তির দেশ, সেই দেশকে সে সন্ত্রাসী জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই এই জঙ্গিদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আর জঙ্গিদের লিডার হচ্ছে ইউনূস। এটাই আমার নির্দেশ যে, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে। ’৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা স্বাভাবিকভাবে আমরা করতে পারি তার জন্যে আওয়ামী লীগকেই সরকার গঠন করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত করে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রবাসীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সংঘবদ্ধ পরিকল্পনাতে বাংলাদেশে এখন গণহত্যা চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, ধর্মস্থান এবং ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের উপর হামলারও নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মুহাম্মদ ইউনূসই ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে একটি সুনিপুণ পরিকল্পনার মাধ্যমে গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছেন। তারাই মাস্টারমাইন্ড।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ থেকে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, তার হাতে মারা যাওয়া ৩৫ জন মৃত ব্যক্তি ইতোমধ্যে জীবিত হয়ে ফিরে এসেছেন। এভাবে তার নামে এ পর্যন্ত আড়াই ‘শ মামলা হয়েছে যার অধিকাংশই হত্যা মামলা। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নন, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মীরাও ইউনূস বাহিনীর মামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। মহিলা সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তিনি সকল মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বস্টন, ওয়াশিংটন ডিসি, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সি, মিশিগানসহ বিভিন্ন স্টেটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রবাসীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে যত জঙ্গি ছিলো ড .ইউনূস সব জঙ্গিদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। নরসিংদি জেল খুলে দেওয়া হয়েছিল। বগুড়া জেল হাজতে নির্যাতনে আওয়ামী লীগের ৭/৮ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যত ষড়যন্ত্র-পরিকল্পনা করাই হোক না কেন আওয়ামী লীগকে ধংস করা এতটা সহজ নয়। আইয়ুব খানও চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে ধংস করতে পারেন নাই। জিয়া-এরশাদ-খালেদা পারেনি। ইউনূস বাহিনীও পারবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি গণহত্যা চাইনি। আমি যদি ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইতাম, তাহলে গণহত্যা হত। যখন নির্বিচারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমার চলে যাওয়া উচিত। আমাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমার নিরাপত্তারক্ষীরা তা ঠেকাতে যদি গুলি চালাতেন তবে গণভবনে বহু মানুষের মৃত্যু হত। আমি তা চাইনি।’
শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশনায় সমাবেশে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুদুল হাসান, আব্দুর রহিম বাদশা, যুবলীগ নেতা আবু তাহের, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশরাফউদ্দিন প্রমুখ। উল্লেখ্য, এটি ছিল নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দ্বিতীয় টেলি-ভাষণ।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৪৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us