
অনলাইন ডেস্ক
প্রিন্ট
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট।
বাংলাদেশে নির্বাচনের ডামাডোলের সাথে সঙ্গতি রেখে আমেরিকাতেও একই স্রোত বইছে সম্ভাব্য প্রার্থীগণের মধ্যে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ডজনখানেক নেতা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন শীঘ্রই বাংলাদেশে নিজ এলাকায় ফিরে জনসংযোগে অংশগ্রহণের। এরমধ্যে একাধিক নেতা রয়েছেন যারা দীর্ঘ ১২ বছরেরও অধিক সময় পর দেশে ফেরার কথা ভাবছেন। তবে এসব নেতার প্রায় সকলেই নিজ এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী এবং অসহায় মানুষের সাথে নানাভাবে সংযুক্ত ছিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও যে কোন বিপদে তহবিল সরবরাহ করেছেন। সাবেক সরকারের রোষানলে পড়া নেতা-কর্মীগণকে মামলা পরিচালনাতেও তহবিল দিয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের পর কয়েকজন ছুটে গেছেন প্রিয় মাতৃভ’মিতে। যুক্ত হয়েছেন এলাকার বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সাথে। এসব নেতা পৃথক পৃথকভাবে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন যে, দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতায় নিজ এলাকা তথা প্রিয় মাতৃভ’মিকে গড়তে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার প্রয়োজন। সে অভিপ্রায়ে দলের মনোনয়ন নিয়ে লড়তে চাই।
সামনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবাসীগণের অন্যতম হচ্ছেন আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট (নড়াইল-১), গিয়াস আহমেদ (ঢাকা-১), জিল্লুর রহমান (সিলেট-৬), আলহাজ্ব সোলায়মান ভ’ইয়া (ফেনী-৩), দিনাজ খান (মুন্সিগঞ্জ-২), ইলিয়াস খান (শেরপুর-২), মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল (চট্টগ্রাম-৩), মিল্টন ভ’ইয়া (চট্টগ্রাম-৩), পারভেজ সাজ্জাদ (চট্টগ্রাম-১) এবং হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা (ঝালকাঠি)। এমন মনোভাব পোষণকারি আরেকজন হচ্ছেন হাসানুজ্জামান হাসান (নিলফামারি-২ অথবা রংপুর-২)। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী ত্যাগী ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী হলেন আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট। ‘৬২ এর হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে গোপালগঞ্জ মহকুমায় তদানিন্তন কায়েদে আজম মেমরিয়্যাল কলেজে নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর বাংলাদেশে চাকরি জীবনে সেক্টর কর্পোরেশন জাতীয়তাবাদি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বরত অবস্থায়ই যুক্তরাষ্ট্রে এসে বিএনপির হাল ধরেন আব্দুল লতিফ সম্রাট। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১/১১ তে মঈন-ফখরুদ্দিনের কথিত কেয়ারটেকার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন লতিফ সম্রাট। এক পর্যায়ে বহিবিশ্বে বিএনপির সাংগঠনিক নেটওয়ার্কেরও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। সে সময় জাতিসংঘ, মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপিয়ো ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির পক্ষে দেন-দরবারেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের সন্তান হলেও তিনি নড়াইল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে এ সংবাদদাতাকে জানালেন। এবং ৮ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় গেছেন।
গিয়াস আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অপর কান্ডারি গিয়াস আহমেদ ঢাকা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঢাকায় গেছেন ১৫ ডিসেম্বর। প্রবাসে আসার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। নিউইয়র্কে অবতরণের পর যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের হাল ধরেছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এবং সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে মার্কিন রাজনীতির সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রচনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। একইসাথে তিনি ডেমক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ নেতা হিলারি ক্লিন্টন, যোসেফ ক্রাউলি, রিপাবলিকান পার্টির সাবেক কংগ্রেসম্যান বেঞ্জামীন গিলম্যান, পিটার কিং-এর সাথেও বিএনপির রাজনীতির পরিপূরক দেন-দরবারে জড়িয়ে ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে নিউইয়র্ক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। গিয়াস আহমেদ বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, দলের নীতি-নির্দ্ধারকরা না চাইলে নির্বাচনে প্রার্থীতার কোন ইচ্ছা নেই। তবে যেহেতু বিএনপির সাথে বহুদিন যাবত জড়িয়ে আছি, তাই দলের প্রয়োজনে আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হবে তা মাথা পেতে নেব।
জিল্লুর রহমান
সিলেটের সন্তান জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংগঠনিকভাবে সারা আমেরিকায় তার নেটওয়ার্কের পাশাপাশি সিলেটের সন্তান হিসেবে পৃথক একটি অবস্থান তৈরীকে সক্ষম হয়েছেন। একইভাবে নিজ এলাকার প্রবাসীদেরকেও উজ্জীবিত রেখেছেন প্রার্থী হিসেবে বিজয়ের পথ সুগম করার অভিপ্রায়ে। কয়েক মাস আগে জিল্লুর রহমানকেও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। একইভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত মিল্টন ভ’ইয়াও সন্দ্বীপ থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি মোস্তফা কামাল পাশা বাবুলও আগে থেকেই সন্দ্বীপ আসনে প্রার্থীতার চেষ্টা করছেন। এবারও দ্বিগুণ আগ্রহে এলাকাবাসীর সাথে সম্পর্ক রচনা করেছেন।
দিনাজ খান।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফ্লোরিডা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিনাজ খান। তিনিও বহুবছর ধরেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি এলাকা এবং প্রবাসের আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এজন্যে তার নেতৃত্বাধীন একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে ফ্লোরিডায়। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত দিনাজ খান এ সংবাদদাতাকে বললেন, আমি সারাটি জীবন বিএনপির সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছি। চরম দু:সময়েও নিরব হইনি। সামনের নির্বাচনে দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।
আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়া
ফেনীর সন্তান আলহাজ্ব সোলায়মান ভ’ইয়া বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারিগণের অন্যতম নির্মাণ ব্যবসায়ী হিসেবে অর্জিত অর্থের বড় একটি অংশ ব্যয় করেছেন নিজ এলাকার মানুষের কল্যাণে। দলের গরীব কর্মীরাও তার আশির্বাদ পেয়েছেন সবসময়। আলহাজ্ব সোলায়মান ভ’ইয়া ফেনী-৩ (সোনাগাজী এবং দাগনভঁ’ইয়া )আসন থেকে এমপি হতে আগ্রহী। ফেব্রুয়ারিতে যাচ্ছেন নিজ এলাকায়। তবে ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ফেলেছেন।
ইলিয়াস খান।
শেরপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস খান ইতিমধ্যেই এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। গ্রেফতার-নির্যাতনের ভয়ে বহুবছর এলাকায় যেতে না পারলেও সকল সময়েই সাংগঠনিক নেটওয়ার্কে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছেন। নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম অর্জনকারি ইলিয়াস খানেরও একই অভিমত, বিএনপি যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে শেরপুর-২ আসনটি অবশ্যই ধানের শীষের বিজয়ে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে-এতে কোন সন্দেহ নেই।
পারভেজ সাজ্জাদ।
ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা পারভেজ সাজ্জাদ এবং হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা নিউইয়র্কে এসে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। উভয়েই পরীক্ষিত সংগঠক হিসেবে কম্যুনিটিতেও সুপরিচিতি রয়েছে। পারভেজ সাজ্জাদ চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকা থেকে এমপি হবার প্রত্যাশায় ইতিমধ্যেই এলাকা ঘুরে এসেছেন। নেতা-কর্মীরাও তাকে কাছে পেয়ে উজ্জীবিত বলে জানা গেছে।
হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা
অপরদিকে হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ দেড় দশক পর নিউইয়র্কে ঢাকা হয়ে ঝালকাঠিতে গমনের সময় বিশাল শো-ডাউন করেছেন। তার সমর্থকেরা মিছিল করে এলাকায় নিয়ে গেছেন। ছাত্রদলের সাবেক নেতা সেলিম রেজা বিএনপির চরম দু:সময়ে এই প্রবাসে থেকেও সকল কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপি (দক্ষিণ)’র সভাপতি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। কদিন আগে ফিরেছেন নিউইয়র্কে। পুনরায় নির্বাচনী এলাকায় যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এ সংবাদদাতার সাথে কথা বলার সময়।
হাসানুজ্জামান হাসান
উপরোক্ত নেতৃবৃন্দের সমর্থকেরাও ইতিমধ্যেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে হাই কমান্ডে যোগাযোগ শুরু করেছেন প্রার্থীতা নিশ্চিতে। এক্ষেত্রে সকলেই লন্ডনে বসবাসরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সান্নিধ্য কামনা করছেন। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে এরা প্রায় সকলেই লন্ডনে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। অপরদিকে, এক সময়ের সাংবাদিক এবং পরবর্তীতে নিউইয়র্কে বসতি গড়ে নির্মাণ ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছিলেন হাসানুজ্জামান হাসান। প্রবাসে অর্জিত অর্থে রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকায় ‘ব্লিং লেদার প্রডাক্টস’ নামক একটি জুতা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন কয়েক বছর আগে। সেটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্যে নয়া মাত্রা যোগ করেছে। সেখানকার মানুষেরা দাবি জানাচ্ছেন সামনের নির্বাচনে তিনি যেন প্রার্থী হোন। এছাড়া, নিজ এলাকা নিলফামারি সদর থেকেও অনেকে চাচ্ছেন হাসানুজ্জামান হাসানকে। নিরব সমাজকর্মী এবং মৃদুভাষী হাসান জানালেন, নিজ এলাকার পাশাপাশি দেশমাতৃকার কল্যাণে জনগণ যদি সুযোগ দেন তাহলে দ্বিধা করবো না সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
Posted ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
nyvoice24 | New York Voice 24