
অনলাইন ডেস্ক
প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা অন্য দেশের নীতি-নির্দ্ধারণীতে অংশ নিতে পারেন না। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ৩৪৯(এ)(৪) সেকশন অনুযায়ী ভিন্ন দেশের নীতি-নির্দ্ধারণে অংশ নিলে সেই মার্কিন নাগরিকের সিটিজেনশিপ বাতিল হয়ে যাবে। অনেক আগেই প্রনীত এই আইনের সর্বশেষ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় এ বছরের ১২ মার্চে। সে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরিহার না করেই কেউ যদি অন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোন দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হোন এবং এ তথ্য যদি নিকটস্থ কন্স্যুলেট জানতে পারে তাহলে ঐ আমেরিকানের নাগরিকত্ব বাতিলের সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট, মন্ত্রি পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ, সংবিধানসহ আইন সংস্কারের নানা কমিটিতে মার্কিন নাগরিকেরা অংশ নিচ্ছেন। এদের অনেকেই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় সিটিজেনশিপ পরিত্যাগ করেননি। অর্থাৎ সেই তথ্য গোপন করেছেন। সর্বশেষ এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ঐ ধরনের আচরণে লিপ্তরা এখোন থেকে আর ছাড় পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক অঞ্চলে ইমিগ্রেশন বিষয়ক খ্যাতনামা এটর্নী অশোক কর্মকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন লংঘনের ব্যাপারগুলো গুরুতর অপরাধের সামিল নয়। এজন্যে সিটিজেনশিপের তথ্য গোপন করে অন্য দেশের নীতি-নির্দ্ধারণীতে অংশ নিলে কেবলমাত্র সেই ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে। অন্য কিছু নয়। তবে নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারটি সামনে আসবে অবশ্যই। নৈতিক স্খলনজনিত আচরণের পর্যায়ে পড়বে। কারণ, আপনি একইসাথে দুটি দেশের প্রতি অনুগত থাকতে পারেন না। বিশেষ করে যদি রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্দ্ধারণীতে থাকেন। সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার, সচিব, এমপি, মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি পদগুলো এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এটর্নী অশোক উল্লেখ করেন, তবে যারা সাধারণ নাগরিক, অন্য দেশের নীতি-নির্দ্ধারণীতে লিপ্ত নেই, তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারেন এবং অনেকে নিচ্ছেন-এটা কোন অন্যায়ের নয়। নৈতিকভাবেও প্রশ্ন নেই।
ইদানিং প্রবাসেও গুঞ্জন উঠেছে যে, আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণকারি অনেকেই বাংলাদেশে গিয়ে এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা হচ্ছেন। কয়েক বছর আগে এক ব্যক্তি প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছেন একাধিক ইউএস সিটিজেন। বাংলাদেশের আইন এ ব্যাপারে কী বলে জানতে চাইলে এটর্নী অশোক বলেন, যদি শপথ গ্রহণের ব্যাপারটি থাকে অর্থাৎ দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের শপথ নিতে হয়। আর এটি করার পর ধরেই নেয়া হয় যে, আপনার আনুগত্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রতিই, অন্য কোন দেশের প্রতি নয়। এতদসত্বেও যারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের তথ্য গোপন করেন বা মিথ্যা বলেন সেটিকে শপথ ভঙ্গের সামিল বলে গণ্য করা হয়। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব নিতে একইসাথে দুটি দেশের স্বার্থ সুরক্ষা সম্ভব হয় না। এজন্যে পার্লামেন্ট মেম্বার পদে মনোনয়নের ফরম পূরণের সময় অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব নেই বলে ঘোষণা দিতে হয়। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের শপথ নামায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ‘অন্য দেশের সাথে সকল সম্পর্ক-আনুগত্য ছিন্ন করছি। —-আমি যুক্তরাষ্টে্রুর সংবিধান ও আইন মেনে চলবো, সমর্থন করবো, —-Õ(Ihereby declare, on oath, that I absolutely and entirely renounce and abjure all allegiance and fidelity to any foreign prince, potentate, state, or sovereignty of whom or which I have heretofore been a subject or citizen; that I will support and defend the Constitution and laws of the United States of America against all enemies, foreign and domestic; that I will bear true faith and allegiance to the same; that I will bear arms on behalf of the United States when required by the law; that I will perform noncombatant service in the Armed Forces of the United States when required by the law; that I will perform work of national importance under civilian direction when required by the law; and that I take this obligation freely without any mental reservation or purpose of evasion; so help me God.)
এ প্রসঙ্গে ডেমক্র্যাটিক পার্টির এশিয়ান-আমেরিকান প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স সম্পর্কিত লিডারশিপ কাউন্সিলের মেম্বার এবং ম্যারিল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী আমেরিকান আনিস আহমেদ বলেন, যে মুহূর্তে তারা শপথ নেবেন সেই সময়েই ধরে নেয়া হবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরিহার করেছেন। আনিস আহমেদ আরো উল্লেখ করেন, তারা যদি শপথ না নিয়েও অন্য দেশের নীতি-নির্দ্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব শুরু করেন তখোন আপনা-আপনি ইউএস সিটিজেনশিপ বাতিলের মত পরিস্থিতি তৈরী হয়। অর্থাৎ গত ১২ মার্চের সার্কুলারের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সিটিজেনশিপ পরিহারের আবশ্যকতা নেই। আনিস আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তবে কেউ যদি অন্য দেশের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হবার পর জানতে পারেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইন লংঘন করেছেন, তাহলে সাথে সাথে যদি নিকটস্থ ইউএস কন্স্যুলেটে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন তাহলে আইন লংঘনের দোষে দোষী হবেন না। এক্ষেত্রে সময়টি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ আপনি দায়িত্বের পুরো সময় অতিবাহিত করে যদি নিজের অজ্ঞতার অজুহাত দাঁড় করান তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ ব্যবস্থায় বিশেষ খ্যাতি অর্জনকারি নিউ অর্লিন্স ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস অধ্যাপক ড. মোস্তফা সারোয়ার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের অন্য দেশে যেমন ধরুন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। ইমিগ্রেশন এবং ন্যাশনালিটি এ্যাক্ট সেকশন ৩৪৯ (এ) (৪)তে এর উত্তর মিলবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক যখন অন্য দেশে নীতিনির্ধারণী পদে বহাল হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারে। নীতিনির্ধারণী পদ যদি হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী (অথবা সমমর্যাদার পদ), পররাষ্ট্রমন্ত্রী (অথবা সমমর্যাদার পদ), সে ক্ষেত্রে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সক্রিয় পর্যালোচনা করে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পের এটা প্রয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে।”
Posted ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
nyvoice24 | New York Voice 24