
ফ্লোরিডা প্রতিনিধি
প্রিন্ট
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৬:২২ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং ইসলামিক চরমপন্থিদের নির্মূলে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনায় ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার অপরাহ্নে ফ্লোরিডাস্থ মার-এ লাগো’তে ট্রাম্পের বাসভবনের সামনে এক বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে ব্যানার-ফেস্টুনসহ বাংলাদেশী আমেরিকানরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় ডনাল্ড ট্রাম্প সমীপে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয় ‘ইউনিটি কাউন্সিল-ইউএসএ’র পক্ষ থেকে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ইউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুগোপ এবং উপদেষ্টা ড’ দীলিপ নাথ।
‘সাম্প্রদায়িক হামলা-রুখে দাঁও বাংলাদেশ’, ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশী হিন্দুজ’ ইত্যাদি লেখা প্লেকার্ড হাতে নারী-পুরুষেরা সমস্বরে স্লোগান ধরেন বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচার বর্বরতা বন্ধের দাবিতে।
এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ও ইউনিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ড. দীলিপ নাথ ডনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ভরসার স্থল হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কথিত এক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ইসলামিক জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। এই জঙ্গিদের অবিসম্বাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের বন্ধু হওয়ায় ড. ইউনূস জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোন আইনেরই পরোয়া করছেন না। এরফলে নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারি ইউনূসের অনুসারিরা বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের ওপর হামলা শুরু করেছে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ব্যবসা ও বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে। মন্দিরে হামলা এবং মূর্তি ভাঙচুর করছে। তরুনী এবং নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। লুটতরাজের মহোৎসব চলছে গোটা বাংলাদেশে। ড. দীলিপ নাথ উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের থেকে এ যাবত কমপক্ষে ২ হাজারের অধিক হামলা ও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ইউনূসের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে। ড. দীলিপ নাথ উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে উৎখাতের পর প্রগতিশীল চিন্তা- চেতনার লেখক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক কর্মী-অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং রাজনৈতিক কর্মীরাও অত্যাচার-নির্যাতনে অতীষ্ঠ। ৫০ লাখের অধিক মানুষের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের এবং ৫০ হাজারের অধিক বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারাই ইউনূস বাহিনীর অবিচারের প্রতিবাদ করছে তাদেরকেই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে গোটা বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।
ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাসার সামনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের র্যালি। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
ড’ দীলিপ নাথ উল্লেখ করেন, এহেন অন্যায়-অবিচার বন্ধ এবং দায়ীদের বিচার দাবিতে গত কয়েক মাসে আমরা হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাতিসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের অফিসের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছি। স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বিস্তারিত উল্লেখ করে। কেউই আমাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি বলেই আজ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাসার সামনে জড়ো হয়েছি। আশা করছি মানবতার প্রশ্নে আমরা ট্রাম্পের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবো না।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই সমাবেশ চলাকালে ভেতরে ট্রাম্পের সাথে নীতি-নির্দ্ধারকদের বৈঠক চলছিল বলে জানা গেছে। সেই বৈঠকের লোকজন বাইরে এসে সামগ্রিক পরিস্থিতি অবলোকন করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন ২০ জানুয়ারির মধ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করবেন না। উল্লেখ্য, ৫ নভেম্বরের কদিন আগে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের হিন্দুদের পরিস্থিতির ওপর একটি মতামত দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এহেন বর্বরতার পরিপ্রেক্ষিতে।
হিন্দু বাঙালি সোসাইটি অফ ফ্লোরিডা আয়োজিত এবং বাংলাদেশী হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ সহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী-আমেরিকান ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত দুই ঘন্টাস্থায়ী এই সমাবেশে শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে এসেছিলেন।
হিন্দু বাঙালি সোসাইটি অফ ফ্লোরিডার সভাপতি সঞ্জয় সাহার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিটন মজুমদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শ্যামল চক্রবর্তী, হিন্দু বেঙ্গলি সোসাইটি অফ ফ্লোরিডা, ইউ.এস.এ-এর সভাপতি সঞ্জয় কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক লিটন মজুমদার, ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভবতোষ মিত্র, হিন্দু অ্যাকশন নেটওয়ার্কের পরিচালক শিবু চৌধুরী, ফ্লোরিডা হিন্দু বাঙালি সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি সাধন সরকার ও সদস্য রতন মজুমদার, ইউনাইটেড হিন্দু কাউন্সিল অফ ইউ. এস. এ’র পরিচালক পীযূষ বর্ধন এবং আটলান্টার হিন্দু অ্যাকশন নেটওয়ার্কের পরিচালক শিবু চৌধুরী, ভূপাল ধর প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বকালের বৃহত্তম সমাবেশ করার পরই ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সাজানো একটি মামলায়। এরপর আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আইনজীবীরা তার পক্ষে কথা বলতে পারেননি সরকারের লেলিয়ে দেয়া জঙ্গিদের হামলার আতংকে। এভাবেই সারাদেশের বিচারালয় আজ চরমপন্থিদের হুমকি-ধামকির মুখে থমকে দাঁড়িয়েছে। বক্তারা উল্লেখ করেন, সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের উচ্ছেদের নিরব একটি পরিকল্পনা সুপরিকল্পিতভাবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি বন্ধ করা সম্ভব না হলে অচিরেই বাংলাদেশও আফগানিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হতে বাধ্য। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতি বিপন্ন হয়ে পড়ার আশংকা বিরাজ করছে।
Memorendum to President-elect Donald Trumpবক্তারা অভিযোগ করেন যে, ইসলামী জাতীয়তাবাদী, মৌলবাদী, আইএসআই, ও আল-কায়েদার মত আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠী সমর্থিত বাংলাদেশী ধর্মীয় চরমপন্থীদের সক্রিয় সহযোগিতায় সংঘটিত ৫ আগস্ট’র গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় এসেই সকল জঙ্গী সন্ত্রাসীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সরাসরি অভিযুক্ত করে, বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য বক্তারা উভয়ের প্রতি আহবান জানান। তাঁরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে শূন্য-সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করা এবং প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীকে অবিল¤ে ^বিচারের আওতায় এনে তাদেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের আহ্বান জানান। বক্তারা তাঁদেও মনে করিয়ে দেন যে, তাঁরা ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের উপর দুই হাজরেরও বেশি নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং নয়টি হত্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল, এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বক্তারা বলেন, যার প্রমান পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্রিস্টানদের উপর বড় দিনে সন্ত্রাসী হামলায় সতেরটি খ্রিস্টান বাড়ি পুড়ে ধ্বংস হওয়া। বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তারা যদি তাঁদের নিজস্ব দেশের বিপন্ন সংখ্যালঘু নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হন, তা’হলে তাঁরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অধীনে বিদেশে শান্তি রক্ষার কাজ করতে পারে কীভাবে। কোন কোন বক্তা এই বিষয়টার প্রতি অবিলম্বে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বলেন। বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেনা বলে ড. ইউনূস এবং তার উপদেষ্টাবৃন্দ যে ঘোষণা দিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বক্তারা প্রশ্ন তোলেন দেশকে ইসলাম পন্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তাঁদের এত আগ্রহ কেন। ড. ইউনূসকে এই সত্যটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁরা বলেন যে, যদিও ঠিক আওয়ামী লীগের মতই বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী খুন, লুট তরাজ ও ম্যাসাকারের অপরাধে অপরাধী ছিল, তবুও ড. ফখরুদ্দিন এবং জেনারেল মঈনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল। তাঁরা উল্লেখ করেন লোগাঙে ছয় থেকে নয়শ অদিবাসীকে বি. ডি. আর পঠিয়ে হত্যা করার অপরাধে বেগম জিয়ার আজও বিচার হয়নি, তাঁর দলকে তো নির্বাচন করতে বাধা দেওয়া হয়নি।
বিশ্ব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন মানুষ মানবতা বিরোধী অপরাধকে প্রশ্রয় দেবে এটা বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করেনা বলে উল্ল্রখ করে সমাবেশের পক্ষ থেকে ড. ইউনূস ও জেনারেল ওয়াকার সাহেবের প্রতি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্মূল অভিযান স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এরমধ্যে ছিল (১) অবিল¤ে ^হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেওয়া; (২) সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার নামে ‘ধর্মনিরপেক্ষ-গণতন্ত্র’ এবং বাঙালির ‘ভাষা-ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী“ পরিচয় অক্ষুন্ন রাখা; (৩) ২০১১ সালে সরকারের কাছে হস্তান্তরিত জজ্ সাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদন যাতে কয়েক হাজার সংখ্যালঘু নিপীড়কের তালিকাভুক্ত রয়েছে (যার মধ্যে ২,৬০০ জন সরাসরি বিচারযোগ্য) , সেটার ভিত্তিতে সংখ্যালঘুনির্যাতকদের বিচার ও শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু করা, (৪)দেশের প্রগতিশীল মুসলমান এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী সমস্ত প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এছাড়া, সংখ্যালঘু নির্যাতন সমস্যার দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই সমাধান অর্থাৎ সংখ্যালঘু সুরক্ষায় স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে একটি বিশদ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে ১. হিন্দু, বৌদ্ধ,এবং খ্রিস্টানদের “সংখ্যালঘু” মর্যাদা এবং আদিবাসীদের “আদিবাসী” মর্যাদা প্রদান করা, ২.যেহেতু কোনও সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধ করতে ইচ্ছুক নয়, তাই কয়েকটি সংখ্যালঘু এনক্লেইভ তথা ছিটমহল প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে বেসামরিক প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সংখ্যালঘু প্রশাসক/কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। ছিটমহলগুলিতে জমিক্রয় এবং ব্যবসাস্থাপনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিটি প্রশাসনিক-জেলায় এবং প্রতিটি শহরে বা যেখানেই সংখ্যালঘুরা ঘনীভূত রয়েছে সেখানে এই ধরনের ছিটমহল স্থাপন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা বা সেপারেট ইলেক্টরেট প্রতিষ্ঠা করা, যেমন ব্রিটিশ-ভারতের মুসলমানদের ১৯০৯ সালে দেওয়া হয়েছিল এবং যা ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের জন্য কার্যকর ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদলে একটি ঘৃণাত্মক-অপরাধ ও বক্তব্য নিষিদ্ধকরণ আইন প্রতিষ্ঠা করা, যা কোন ব্যক্তিকে শারীরিক বা মৌখিকভাবে আক্রমণ করা, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার হুমকি দেওয়া, যেমন, “ইসলাম ধর্মান্তরিত হও অথবা এই দেশ ছেড়ে চলে যাও”, বা তাঁদের উপাসনালয় অক্রমণের যে ধুম পড়েছে সেটা বন্ধ করবে। এই আইনের ফলে সংখ্যালঘু নাগরিকদের সম্পত্তি দখল, উপাসনালয়,সংস্কৃতি ধ্বংস করা, তাঁদের “মালাউন,”, ”ডেঁডাইয়া,” “কাফের” প্রভৃতি ঘৃণাত্মক, অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে সম্বোধন করা,পাঠ্য পুস্তকে এবং ওয়াজে অমুসলমানদেও “পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট ” বলা কিংবা “অমুসলিমদের সম্পত্তি বা নারী সম্ভোগে পাপ হয়না বলে বক্তৃতা করাও বন্ধ হবে। এই আইন যথার্থ অর্থে কার্যকর করা বিচার বিভাগের অধীনে হাইকোর্টে — একটি ঘৃণাত্মক অপরাধ ও বক্তব্য বিষয়ক বিভাগ খুলে, সরকার বাদী হয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন অফ পুলিশ (র্যাব) কর্তৃক দ্রুত প্রতিটি হেইট ক্রাইম ও স্পীচ অপরাধের তদন্ত এবং দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া, তত্বাবধান, সাক্ষী সুরক্ষা ব্যবস্থা, ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান রাখতে হবে। এজন্য দেশের প্রতিটি জেলাসদরে একটি করে ফাস্টট্র্যাক কোর্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে শুধু হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের বিচার হবে। একটি ধর্মীয় ঐতিহ্য ও দেবোত্তর সম্পত্তি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে-যার বলে সরকারকে প্রতিটি ধর্মীয় ঐতিহ্য, যেমন মন্দির, আশ্রম, শ্মশান, দেবতা প্রভৃতি লুণ্ঠন, দখল, বিকৃত, ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করা থেকে রক্ষা, পুনরুদ্ধার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাধ্য করবে। এই আইন দেবতা, মন্দির, আশ্রম, আখড়া, শ্মশান এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দানকৃত সম্পত্তি বা সম্পদ হস্তান্তর ও নিষিদ্ধ করবে। এমন যেসব সম্পত্তি বেদখল হয়েছে সেগুলোও এই আইনের অওতায় পুনরুদ্ধার করে যাদের সেটা মূলত: দান করা হয়েছিল তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ধর্মীয়-ঐতিহ্যগত আইনের সুরক্ষা আইন, যার বলে যে কোন ধর্মীয়-ঐতিহ্যগত কোন আইন রদ বা বদল করতে সংশ্লিষ্ট সমপ্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে তাঁদের উত্থাপিত উদ্বেগসমূহের সমাধান করার পর, দেশব্যাপী ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে করা। সুপ্রিমকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত নিরপেক্ষ বিচারপতি, দুইজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, এবং দুজন সংখ্যালঘু-অধিকার কর্মীর সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করত: এর মাধ্যমে সকল সংখ্যালঘু নির্যাতককে সনাক্ত করে একটি শ্বেতপত্র তৈরি করা, যেমনটা ২০০১- ২০০৫ এর জন্য জজ্ সাহাবুদ্দীন কমিশনের মাধ্যমে করা হয়েছিল। ধর্ম নিরপেক্ষ-গণতন্ত্র বা রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণে এবং বাঙালিদের ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী পরিচয় সুরক্ষার বিধান করা।
Posted ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
nyvoice24 | New York Voice 24