নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৯:২১ পূর্বাহ্ণ
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকায় বিডি ফ্রেশ সুপার মার্কেটের মালিক আবু চৌধুরী (৩৫)এবং তার স্ত্রী ইফফাত লুবনা (২৪)’র বিরুদ্ধে আরেক প্রবাসীকে মুক্তিপণের জন্যে অপহরণ এবং লাগাতারভাবে অকথ্য নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এফবিআই তদন্ত শেষে এই দম্পতিকে গ্রেফতারের পর ১৮ ডিসেম্বর ব্রুকলীন ফেডারেল কোর্টে সুপর্দ করেছিল। মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্কের ডেইলি নিউজ পত্রিকায় ২৯ ডিসেম্বর ‘কুইন্স বেঙ্গলি কিডন্যাপার্স থ্রিটেন্ড টু পোওর চিলি পাওডার ইন ভিকটিমস ওউন্ড: ফেডস’(Queens Bengali kidnappers threatened to pour chili powder in victim’s wounds: feds ) শিরোনামে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই বাংলাদেশের একটি কলেজের পূর্ব পরিচিত সুন্দরী ইফফাত লুবনার সহায়তা চাইতে গিয়ে উল্টো অপহৃত এবং প্রাণনাশের হুমকির শিকার এই ২৩ বছর বয়েসী যুবকের নাম নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা হয়নি। উল্লেখ্য, বিডি ফ্রেশ সুপার মার্কেটের অন্যতম এই মালিক দম্পতির সাথে আরো কয়েকজনকে এর আগে আরো দুই প্রবাসীকে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সব মামলায় জামিনে থাকাবস্থায়ই তৃতীয় এই প্রবাসীকে ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণের জন্যে নির্দয় নির্যাতন চালানোর ঘটনা ঘটলো।
ব্রুকলীন ফেডারেল কোর্টের কৌশলীরা আরো জানান, আবু চৌধুরীর গাড়িতে হাত-পা বেধে বেশ কদিন আটকের সময় ঐ প্রবাসীকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। বাংলাদেশে তার বাবাকে ফোন করানো হয় অবিলম্বে মুক্তিপণের অর্থ প্রদান এবং পুত্রের জন্যে বিমানের টিকিট পাঠানোর দাবিতে। উল্লেখ্য, যুবকটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে এসে জ্যামাইকার লুবনার সহায়তা চেয়েছিলেন। লুবনা নিজ এপার্টমেন্টে তাকে থাকার ব্যবস্থা করেন। একটি চাকরি সংগ্রহ করে দেয়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। এ সময় যুবকটির পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল কাগজপত্র নিজের কব্জায় নিয়ে নেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি, বাংলাদেশ থেকে যত ডলার এনেছিলেন সেগুলোও লুবনা নিজের কাছে রাখার জন্যে নিয়ে নেন। এসাইলামের আবেদনের সব ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলেন লুবনা। উল্লেখ্য, লুবনার এপার্টমেন্টে বসবাস শুরুর পরের মাসেই লুবনা তার বয়ফ্রেন্ড (তখোনও আবুর সাথে বিয়ে হয়নি লুবনার) আবু সহ তার চক্রের ৫/৬ জনকে নিয়ে নবাগত এই যুবককে নিজ গাড়িতে আটক রাখেন। যুবকটিকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশে তার বাবার কাছে ফোন করানো হয় টাকার জন্যে। এমনি অবস্থায় আরেকটি আবু চৌধুরী তার গাড়িতে যুবকটিকে মারধোরের পর হাতের তালুকে ছিদ্র করা হয়। এক পর্যায়ে শাহ শহিদুল চৌধুরী নামক আরেক অপহরণকারিকে ফোন করে একটি ধারালো স্ক্রু ড্রাইভারসহ মরিচের গুড়া আনতে বলা হয়। ওদের কথা অনুযায়ী টাকা না পাওয়া পর্যন্ত কাটা তালুতে মরিচের গুড়া দিয়ে আরো বেশী কষ্ট দেয়ার হুমকি দেয় আবু ও লুবনা। যথারীতি শাহ চৌধুরী অকুস্থলে চলে আসে। সে সময় ধারালো ছুরি দিয়ে যুবকটিকে কেটে টুকরো টুকরো করার হুমকি-ধামকিও দেন লুবনা। তাকে অসহনীয় যন্ত্রণার মাধ্যমে হত্যা না করা পর্যন্ত লুবনা স্বস্তি পাচ্ছেন না বলেও উল্লেখ করেন সে সময়। স্ক্রু ড্রাইভার চোখ ও কানে ঢুকিয়ে রক্তাক্ত করার পর সেখানেও লবন ও মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেয়ার হুমকি দেন আবু ও লুবনা। যুবকটির আর্তচিৎকারের সময় লুবনা আরো উল্লেখ করেন যে, তার মতো মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কোন অধিকার নেই। সুতরাং তাকে মরতেই হবে। সেই শাহ-কেও এফবিআই গ্রেফতার করেছিল। মামলার বিবরণে আরো প্রকাশ, যুবকটিকে অকথ্য নির্যাতনের চিত্র আবু চৌধরী নিজের মোবাইলে ধারণ করেছেন। এর আগেও অপহৃত দু’জনকে নগ্ন করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণের অভিযোগ রয়েছে দায়েরকৃত মামলায়।
এফবিআই এই চক্রের নাম দিয়েছে ‘বাঙালি ছিনতাই চক্র’। ২০২৩ সালের ১৩ মে পর্যন্ত বন্দি ছিলেন যুবকটি। মুক্তি দেয়া হলেও তার পাাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল কাগজপত্র আটক রাখা হয়। হুমকি দেয়া হয়, এই ঘটনা যদি সে কাউকে বলে তাহলে নিশ্চিত খুন হবে সে। আদালতে তথ্য অনুযায়ী, ১৩ মে এই যুবককে নানা শর্তে ছেড়ে দেয়ার পর একইবছরের জুলাই মাসে আরেক বাঙালি যুবক এবং এ বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিপণ দাবিতে আরেক বাঙালিকে অপহরণ করেছিল এই চক্র। সে সব মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ মামলায় আবু চৌধুরী আড়াই লাখ ডলার এবং লুবনা জামিন লাভ করেছেন লাখ ডলার বন্ডে। অপরদিকে, শাহ শহিদুল চৌধুরী গত বুধবার দেড় লাখ ডলার বন্ডে জামিন লাভ করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এই চক্রের অপর সদস্যরাও জামিনে আছে এবং তারা হচ্ছে সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আঞ্জু খান (২৮)এবং সুলতানা রাজিয়া (৩৮)। সকলের বাড়ি সিলেট ও বৃহত্তর ঢাকায় বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে এই দুর্বৃত্তচক্র ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে সম্পর্কের সুবাদে আরেকটি চক্র বহু প্রবাসীকে বাড়ি ক্রয়ের টোপ দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সে সব নিয়েও কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা চলছে। এই চক্রের সদস্যদের মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চেও দেখা যায় অতিথি হিসেবে। এমনকি, তাদেরকে ‘কম্যুনিটি লিডার’ হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবেই চক্রটি সহজ-সরল প্রবাসীদের সর্বশান্ত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Posted ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
nyvoice24 | New York Voice 24