‘ইউনূস সরকারের প্রথম একশত দিন’ গ্রন্থের আলোচনায় মন্তব্য

‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান’

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান’

প্যানেলিস্টগণকে পাশে নিয়ে ‘ইউনূস সরকারের প্রথম একশত দিন’ গ্রন্থের আলোচনায় লেখক ড. দীলিপ নাথ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।

‘ড. ইউনূস সরকারের প্রথম ১০০ দিন’ উপলক্ষে প্রকাশিত একটি গ্রন্থের পর্যালোচনা এবং সামনের দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় সম্পর্কে নিউইয়র্কে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো ৫ জানুয়ারি রোববার অপরাহ্নে। স্মরণকালের ভয়াবহতম ঠান্ডা সত্বেও কিছু প্রবাসীসহ বিপুলসংখ্যক আমেরিকানের সমাগমে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রথম ১০০দিনের অভিজ্ঞতাকে অনেকেই দু:খজনক হিসেবে অভিহিত করেন। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় জনমনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবুও তারা আশাবাদি যে, বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনে গঠিত সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। পরবর্তী একশত দিনের এ প্রত্যাশা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনারত প্রবাসী ও আমেরিকান বন্ধুদের।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য বলেন, ইউএস কংগ্রেস, জাতিসংঘ মহাসচিবকে ফোন করতে হবে যাতে সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। তা না হলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। ড. দ্বীজেন বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি শতশত মানুষ হত্যা করেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনে ওরা চ্যাম্পিয়ন ছিল। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৬ শতাধিক মানুষকে হত্যার জন্যে বিএনপিকে দায়ী করে ১৭ কংগ্রেসম্যান সে সময় প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন। এরপরও ২০০৮ সালের কেয়ারটেকার সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল। তিনি জোরদিয়ে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। তিনি অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পরবর্তী ব্যবস্থায় বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে বাংলাদেশে ইসলামিক জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। এজন্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিধনের ঘটনা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না।

নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এম এ বাতেন বলেন, বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের পর্যায়ে নিতে চাচ্ছে অনেকে। এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। দুর্নীতি যারা করেছেন তাদের বিচার হউক। কিন্তু এখোন সাবেক সরকারের সকলকেই গ্রেফতার-নির্যাতনের ভিকটিম হতে হচ্ছে। এরফলে জনমনে আতংক বিরাজ করছে।

‘ইউনূস সরকারের প্রথম একশত দিন’ গ্রন্থের আলোচনা-সমাবেশে সুধীর একাংশ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।

শিক্ষাবিদ, লেখক-গবেষক এবং মানবাধিকার সংগঠক ড. জিতেন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার অঙ্গিকারে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই চেতনাকে ধুলিসাত করতে দেয়া যাবে না। কিন্তু মুহম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদে এমন লোকজনের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে যারা বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থি কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়েছেন। তারা সামনের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করেছে। এজন্যেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চাচ্ছে না।

গ্রন্থটির লেখক নিউইয়র্কের কুইন্স ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ বলেন, ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের মূল চেতনাকে ধুলিসাতের ষড়যন্ত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসকে একটি মহল দাবার গুটিতে পরিণত করেছে। ওরা ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠির প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করার দু:সাহস দেখাচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের কথা স্মরণ করেই সকলকে সজাগ থাকতে হবে সামনের দিনগুলোতে যাতে বাংলাদেশের মূল চেতনা কেউ ধ্বংস করতে না পারে।

নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলওম্যান জোহনা কারমোনা বলেন, চলতি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মধ্যদিয়েই উন্নয়ন পরিক্রমা অব্যাহত রাখা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে যদি ইসলামিক জঙ্গির উত্থান ঘটে, আফগানিস্তানের মত অবস্থা তৈরী হয় তাহলে বাংলাদেশ আবারো থমকে দাঁড়াতে বাধ্য। এ আলোচনার সঞ্চালনা করেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারী বাসভবন ‘গ্র্যাসী ম্যানশন’র নির্বাহী পরিচালক এটর্নী রোন্ধা বিন্দা।

‘ইউনূস সরকারের প্রথম একশত দিন’ গ্রন্থের আলোচনা-সমাবেশে সুধীর একাংশ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।

এ সমাবেশে অংশগ্রহণকারিরা ড. দীলিপ নাথের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তথ্যভিত্তিক গ্রন্থটি প্রকাশের জন্যে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাবার পর কথিত আন্দোলনকারিরা রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতার দায় চাপানোর জন্যে ভারত-বিদ্বেষী কথকতা বলছেন বলে সমাবেশে অংশগ্রহণকারিরা উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থার অবসানে দ্রুততম সময়ে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। একইসাথে ড. দীলিপ নাথের লেখা ‘রাইজিং ফ্রম দ্য অ্যাশেষ’ নামক আরেকটি গ্রন্থের ওপরও আলোচনা করেন বিদগ্ধজনেরা। সেখানে আলোচনা করেছেন অন্যান্যের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ড. সচি দস্তিদার। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের করুণ অবস্থা এবং দেশ ছেড়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়তে বাধ্য হচ্ছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরাও-এমন অভিমত পোষণ করা হচ্ছে। এহেন অবস্থার অবসানে দরকার ধর্মীয় সম্প্রীতিকে জোরদার করা। কিন্তু কোন সরকারই এ ব্যাপারে মনোযোগী হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করা হয়। বিশিষ্ট প্রবাসীদের মধ্যে আরো ছিলেন ড. প্রদীপ কর, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, ডা. মাসুদুল হাসান, সরাফ সরকার, রুপকুমার ভৌমিক, ভজন সরকার, ইমদাদ চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, রোকেয়া খাতুন, উৎপল চৌধুরী, বিষ্ণু দে প্রমুখ।

Facebook Comments Box

Posted ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us