
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৬:২১ পূর্বাহ্ণ
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি রাতে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগ আয়োজিত সমাবেশে টেলিফোনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারি অধ্যাপক ইউনূস ও তার সরকারের কঠোর সমালোচনা’ করে বলেন, যাদের কোন জনগণের ম্যান্ডেট নেই, ভিত্তি নেই, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি, বলতে গেলে সেই মেটিক্যুলাসলি ডিজাইন করে মাস্টারমাইন্ডের মাধ্যমে প্ল্যান করে অস্ত্র ও অর্থের জোড়ে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক অবৈধভাবে, সেই ইউনূস সরকার ছাত্রলীগকে ব্যান করে। ছাত্রলীগকে ব্যান করার অধিকার কারো নেই। একটা অবৈধ সরকারের যে কোন ঘোষণাই অবৈধ। ঐ ঘোষণার কোন কার্যকারিতা থাকে না, থাকতে পারে না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের শাস্তি একদিন পেতেই হবে বাংলাদেশের জনগণের আদালতে। হত্যা মামলা হামলা করে মানুষকে কোনমতে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এদের মনে রাখা উচিত জাতির পিতার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, ৭ মার্চে বলেছিলেন আমাদেরকে কেই দাবাইয়া রাখতে পারবা না। ছাত্রলীগকেও দাবাইয়া রাখতে পারবে না। ছাত্রলীগ বরাবরের মত জনগণের পাশে থেকেই কাজ করবে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এর আগেও নিষিদ্ধ করেছিল আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার মত স্বৈরশাসকেরা। কখনো কি সবকিছু থমকে দাঁড়িয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন হয়ে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভ’মিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজকের বাংলাদেশে যতগুলো অর্জন-সব অর্জনের পেছনে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কোট করে বলতে চাই, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস’।
ছাত্রলীগ সবসময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ছিল বলেই শিবির আর ছাত্রদলের হামলার শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের নেতা মাহমুদুল হাসান, রায়হান মাহমুদ, হৃদয় হোসেন প্রমুখের সম্মিলিত উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলের এ সমাবেশে শেখ হাসিনার টেলিফোন বক্তব্যের সমন্বয় করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন ড. প্রদীপ কর, ডা. মাসুদুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, সোলায়মান আলী, আব্দুল হামিদ, ইমদাদ চৌধুরী, রফিকুর রহমান, শাহীন আজমল, শাহানারা রহমান, দরুদ মিয়া রনেল, তারেকুল হায়দার চৌধুরী, জাহাঙ্গির এইচ মিয়া, জেড চৌধুরী জয় প্রমুখ। ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ছিলেন সমাবেশে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশটি বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছিল, সেটি আজ জঙ্গিবাদে পরিণত হয়েছে জঙ্গিদের নেতা ইউনূসের কারণে। এ অবস্থায় আমি ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলবো অবৈধ সরকারের ছাত্রলীগকে ব্যান করার ষড়যন্ত্র মানবো না, ছাত্রলীগ তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এ সময় উপস্থিত সকলে সমস্বরে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে পার্টি হলকে মুখরিত করেন।
সব শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর আগস্টের আগ পর্যন্ত কেমন ছিল তা যেন তারা দূরদৃষ্টিতার সাথে খতিয়ে দেখে। তিনি বলেন, সংস্কারের নামে আবারো ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে। বই ছাপাচ্ছে। পাঠ্যবই থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলছে। বই ছাপানোর জন্যে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা। আগের তুলনায় মাত্র ৫০০ বই অতিরিক্ত ছাপানো হচ্ছে। তাহলে এতটাকা ব্যয় হচ্ছে কীভাবে-এ প্রশ্ন করতে হবে সুদখুর ইউনূস আর জঙ্গি সাঙ্গপাঙ্গদেরকে। শেখ হাসিনা বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা সারাদেশে স্কুলে বই পাঠিয়েছি। জানুয়ারির ১ তারিখ নতুন বছরের আমেজে ছাত্র-ছাত্রীরা তা বিনামূল্যে পেয়েছে। কিন্তু এবার তো বাচ্চারা বই পায়নি। তাহলে অতিরিক্ত ৭০০ কোটি টাকা কার পকেটে গেল?
টেলিফোনে শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনছেন নেতা-কর্মীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি-শৃঙ্খলা ছিল। লেখাপড়ার পরিবেশ ছিল। তার আগে ছিল বোমাবাজি-খোনাখুনি আর হানাহানি। ছিল ৫/৬ বছরের সেশন জট। আমরা ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষিত জনগোষ্ঠি তৈরীর জন্যে ইউনিভার্সিটি চালু করেছি। বহুমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তির সংকট লাঘবে বহু পদক্ষেপ নিয়েছি। সারাবিশ্বের সাথে আমাদের সন্তানেরা চলতে পারে-সেভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছি। কর্মসংস্থানের জন্যে প্রত্যেকটি বেসরকারী খাত আমরা উম্মুক্ত করেছিলাম। ডিজিটাল ল্যাব আমরা তৈরী করেছিলাম। হাইটেক পার্ক করেছি। সারাদেশে ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন এবং সেসব থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা সরকারী-আধা সরকারী সেবা পেয়েছেন। ছোট্টবেলা থেকেই যাতে ডিজিটাল সিস্টেমে সাথে শিশু শিক্ষারীরা পরিচিত হতে পারে সেজন্যে স্কলসমূহে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছি। বাংলাদেশ যাতে পিছিয়ে না থাকে। সবসময় এগিয়ে চলতে পারে-সেদিকে খেয়াল রেখেই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু আজ একেএকে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদেরকে শক্তিশালী থাকতে হবে, জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ১০ হাজার শিক্ষককে অপমান-অপদস্ত করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে উষ্কে দেয়া হয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের অভিপ্রায়ে। এসব বিষয় মানুষকে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। কারাগারে যত জঙ্গি ছিল, যাদেরকে আমরা গ্রেফতার করেছিলাম, বিচারের মাধ্যমে যারা দন্ডভোগ করছিল, যত সন্ত্রাসী ছিল সকলকে মুক্তি দিয়েছে ইউনূস সরকার। বৈষম্যহীন আন্দোলনের নাম করে ক্ষমতা দখল করে সব জঙ্গিদের মুক্তি দিয়েছে। কী অদ্ভ’ত এ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখোন জঙ্গিদের রাজত্ব। বাংলাদেশে এখোন জঙ্গি-শাসন।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গির, একসময় বিডিআরের ডিজি ছিলেন। বিডিআরের ঘটনায় যে অফিসারেরা (৫৭)মারা গেছেন সেখানে আওয়ামী লীগেরই ৪৫ জনের মত রয়েছে। তাহলে বিডিআরের ডিজিসহ ৪৫ জন আওয়ামী পন্থি অফিসারকে কারা হত্যা করেছে? আসলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সহজভাবে যারা নিতে পারেনি, যারা সহ্য করতে পারেনি, তারাই বিডিআরের ঘটনা ঘটিয়েছিল। যদিও এখোন আমাদের নামে দোষ দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পর আমরা সরকার গঠন করেছি। তাহলে আমরা কেন গোলমাল করতে যাবো? আমরা কেন আমাদের সরকারকে অশান্ত করতে যাবো? আর একটি কথা হয়তো অনেকের স্মরণ আছে যে, সেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়েছিল। তখোন আমাদেরই নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর অফিসারেরা তাদেরকে রক্ষা করেছিল। এবং সাথে সাথে আমি ডিসি-এসপিদেরও বলে দিয়েছিলাম এদের পরিবারকে নিরাপদে নিয়ে যেতে। প্রত্যেকটি বোর্ডার এলাকায় আমাদের নেতা-কর্মীরা, ডিসি-এসপি সবাই মিলেই বিভিন্ন ইউনিটে আটকা পড়া পরিবারের সদস্যদেরকে উদ্ধার করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। এই কথাটা একবারও তাদের মুখ থেকে বের হয় না যে, ঘটনাটা এক জায়গায় ছিল না। চুয়াডাঙ্গা, সাতকানিয়া– ওরাতো রাস্তায় নেমেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের প্রতিটি ঘটনার বিচার হয়েছে। অথচ এখোন দন্ডিতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এত্থেকেই তো বুঝা যায় যে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে।
Posted ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24