বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ
ক্ষমতা গ্রহণের পরই শতাধিক নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিশ্বের সচেতন মহলে আলোড়ন সৃষ্টিকারি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার ২২ স্টেট এবং দুটি সিটির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়েরকৃত মামলায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্দেশ প্রদানের এখতিয়ার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেই বলে দাবি করা হয়েছে এবং সেই আদেশকে বাতিলের আহবান জানানো হয়েছে। কারণ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশতম সংশোধনীর মাধ্যমে চালু হয়েছে। ম্যাসেচুসেটস স্টেটের বস্টনে মামলা দায়েরকারী এটর্নী জেনারেলরা হচ্ছেন নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ম্যাসেচুসেট্্স, ক্যালিফোর্নিয়া, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড, মিশিগান, কলরাডো, দেলওয়ারে, নেভাদা, হাওয়াই, ম্যারিল্যান্ড, মেইন, মিনেসোটা, নিউ মেক্সিকো, ভারমন্ট, উইসকনসিন এবং নর্থ ক্যারলিনা স্টেটের। এর বাইরে রয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক নিউ হ্যামশায়ার স্টেট কোর্টে এবং আরেকটি মামলা হয়েছে সিভিল রাইটস এটর্নীগণের পক্ষ থেকে। সানফ্রান্সিসকো এবং ওয়াশিংটন ডিসির কোর্টেও আলাদা মামলা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে। উল্লেখ্য, এই স্টেট ও সিটিসমূহের গভর্ণর ও মেয়রের সকলেই ডেমক্র্যাটিক পার্টির। অর্থাৎ ডেমক্র্যাটরা জোট বেঁধেছেন ট্রাম্পের সংবিধান বিরোধী (তাদের ভাষায়) পদক্ষেপ রুখে দিতে। উল্লেখ্য, অবৈধ অভিবাসীর গর্ভে অথবা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জন্মগ্রহণকারি সন্তানেরা যাতে নাগরিকত্ব না পায় সেই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আরো উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও এমন একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। দায়েরকৃত মামলাসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের চতুর্দশতম সংশোধনী অনুযায়ী এ দেশে জন্মগ্রহণকারিরা নাগরিক হিসেবে গণ্য হয়।
এই আদেশ প্রসঙ্গে খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠক ও অভিবাসন বিষয়ক এটর্নী অশোক কর্মকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার লিগ্যাল টিমের সকলেই জানেন যে সাংবিধানিক কোন সিদ্ধান্তকে সংশোধন ব্যতিত নির্বাহী আদেশ দ্বারা বাতিল করা যায় না। এটা কেবলমাত্র সংবিধানকে সংশোধনের মাধ্যমেই সম্ভব। এটা আমরা যেমন জানি, তেমনি তাঁর আইনজীবীরাও জানেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন হলো যে, তবুও কেন এমন আদেশ জারি করলেন? আমার ধারণা, এই আদেশের বিরুদ্ধে যে মামলা হবে তা তিনি জানেন এবং মামলা হলে তা ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট, এরপর সার্কিট কোর্টে যাবে। সেখান থেকে আল্টিমেটলি সুপ্রিম কোর্টেও যাবে। সুপ্রিম কোর্টে গেলে মাননীয় বিচারপতিগণ হয়তো কন্সটিটিউশনাল প্রভিশনটাকে ব্যাখ্যার নামে হয়তো উল্টায়ে দিতে পারেন। এমন একটা ধারণা থেকেই তারা (ট্রাম্প টিম) হয়তো করেছেন যে, এটা সুপ্রিম কোর্টে নিতে পারলে সুপ্রিম কোর্ট উইল ইন্টারপ্রেট দিস কন্সটিটিউশনাল প্রভিশন ইন অ্য ওয়ে দ্যাট, বাথ রাইট ডাজ নট মীন এদেশে জন্মগ্রহণ করলেই সিটিজেনশিপ পাবে যাদের মা-বাবার লিগ্যাল স্ট্যাটাস আছে। ইল্লিগ্যাল কোন জায়গা থেকে জন্ম নেয়া কিছুই লিগ্যাল হতে পারে না। খারাপ কোন কিছু দিয়ে কখনো ভালো কিছু হয় না। পয়জনাস ট্রি হিসেবে যাকে আমরা ট্রিট করে থাকি। এদেশে যার নিজেরই কোন আইনগত অধিকার নেই, তার মাধ্যমে যে সন্তান হবে, সে কীভাবে সিটিজেনশিপ পাবে? যদিও বিদ্যমান সংশোধনীতে লেখা আছে যে, এদেশে জন্মগ্রহণ করলেই সিটিজেন হবে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট হয়তো ব্যাখ্যা প্রদানের সময় উল্লেখ করতে পারেন যে, মা-বাবারই বৈধতা নেই, তার সন্তানেরা কীভাবে সিটিজেনশিপ পাবে। এটর্নী অশোক কর্মকার বলেন, এমন ব্যাখ্যা/ইন্টারপ্রিটেশনের আশায় ট্রাম্প হয়তো এ আদেশ জারি করেছেন। ইট উইল বি অ্য বিগ ফাইট। ইমিডিয়েটলি মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প এটা করেছেন বোকার মত, কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না । ইস্যুটিকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে কন্সটিটিউশনকে ইন্টারপ্রিটেশনের মাধ্যমে তাদের এ আদেশকে জায়েজ করতে চাচ্ছেন।
নিউইয়র্কে আরেক জনপ্রিয় ইমিগ্রেশন এটর্নী জান্নাতুল রুমা বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ সংবাদদাতাকে বলেন, বিষয়টি খুবই অমানবিক। এমন চরম একটি সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া যায়না। কারণ, জন্মগ্রহণকারি শিশুটি তো কোন দোষ করেনি। সিটিজেনশিপ প্রাপ্তির বিদ্যমান অধিকার খর্ব করা হলে শিশুটি কোন দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবে? তারা তো রাষ্ট্রহীন শিশু হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং নাগরিক হিসেবে সারাটি জীবন প্রশ্নবোধক চিহ্নে আবর্তিত হতে থাকবে। অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা আমেরিকা এতটা নির্দয় হতে পারে না। আশা করছি মাননীয় আদালত তার সুচিন্তিত এবং ন্যায়-নিষ্ঠ রায় দেবেন।
ইউএস সুপ্রিম কোর্টে প্রথম বাংলাদেশী এটর্নী ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ মঈন চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবিধান পরিপন্থি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমীচিন নয়। ট্রাম্প তার রিপাবলিকান শাসিত কংগেসের মাধ্যমে এমন পদক্ষেপ নিলে সকলেরই জন্যেই তা শুভ হতো। এটর্নী মঈন বলেন, প্রেসিডেন্ট অবশ্যই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তবে তিনি কিং নন। সংবিধানকে নিজের মত করে ব্যবহারের অধিকার তার নেই।
ওয়াশিংটনের এটর্নী জেনারেল নিক ব্রাউন বলেছেন, ট্রাম্পের এমন আদেশ কার্যকরী হলে বার্ষিক গড়ে দেড় লাখের অধিক শিশুর সিটিজেনশিপ প্রাপ্তির পথ বন্ধ হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, ওরেগণ, আরিজোনা এবং ইলিনয় স্টেটের সাথে ওয়াশিংটন স্টেটের এই এটর্নী ট্রাম্পের ঐ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেছেন।
ইয়েল ল’ স্কুলের অধ্যাপক অখিল রীড অমর এ প্রসঙ্গে বলেন, ট্রাম্পের আদেশটি এতটাই প্রতিহিংসা পরায়ন যে, সদ্য বিদায়ী কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারতেন না। কারণ, তিনি যখোন জন্মেছেন তখোন তার মা ছিলেন বিদেশী ছাত্রী। সেদিকে খেয়াল রেখেই কী ট্রাম্পের অনুগতরা এমন একটি খসড়া তৈরী করেছেন?
এই নির্বাহী আদেশ ২০ তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিন পর কার্যকর হবার কথা। এরইমধ্যে মামলা হওয়ায় আদেশটির কার্যকারিতা এখোন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। শতাধিক বছর আগে অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে (অং কিম আর্ক বনাম ইউএস)’র মামলার রায়ে এবং সংবিধানে চতুর্দশতম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারিদের সিটিজেনশিপ প্রদানের বিধি চালু হয়েছে। শুধুমাত্র ক’টনীতিক মর্যাদায় বসবাসকারীর গর্ভে জন্মালে আপনা-আপনি সিটিজেনশিপ না পাবার কথা রয়েছে। এবং দখলদার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কিন ভ’খন্ডে জন্ম নেয়া শিশুরাও আপনা-আপনি সিটিজেনশিপ পায় না।
Posted ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24