
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৭:০১ পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন বর্ডারে (ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, টেক্সাস এবং নিউ মেক্সিকো স্টেট সংলগ্ন মেক্সিকো) ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির পর গোটা আমেরিকায় এক ধরনের অস্থিরতা তৈরী হয়েছে। সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষের বেআইনী প্রবেশ-প্রবণতা রোধকল্পে বিশেষ এই ঘোষণা প্রদানের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, আমেরিকার সার্বভৌমত্ব আক্রমণের মুখে। আমাদের দক্ষিণ সীমান্ত সশস্ত্র ছিনতাইকারি, খুনী, অপরাধী চক্র, পরিচিত সন্ত্রাসী, মানব পাচারকারী, চোরাকারবারী, বিদেশী প্রতিপক্ষের অনুগত যুব-সমাজ এবং আমেরিকা সহ আমেরিকানদের ক্ষতি করে এমন অবৈধ মাদকদ্রব্য দ্বারা আচ্ছন্ন। এই আগ্রাসন গত ৪ বছরে আমাদের দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। এমন অবৈধ অভিবাসীদের হাতে নারী ও শিশু সহ অনেক নিরীহ আমেরিকান ভয়ঙ্কর আক্রমণের শিকার এবং ধর্ষিতা হয়েছে। কাউকে কাউকে হত্যা করাও হয়েছে। বিদেশী অপরাধী গ্যাং এবং ঘাতক হিসেবে চিহ্নিতরা বেশ কিছু সিটির কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে। আমাদের সবচেয়ে দুর্বল নাগরিকদের আক্রমণ করছে এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে আমেরিকানদের আতঙ্কিত করছে। দুর্বৃত্তরা আমাদের দক্ষিণ সীমান্তের ঠিক দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণ করে, কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, মেক্সিকো থেকে কে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবে এবং আর কে পারবে না৷ দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে আসা অবৈধ মাদকদ্রব্যের কারণে কয়েক হাজার আমেরিকান মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় মর্মান্তিকভাবে মারা গেছে।
আমেরিকান জনগণের উপর এই আক্রমণ এবং আমেরিকার সার্বভৌম সীমান্তের অখন্ডতা আমাদের জাতির জন্য একটি গুরুতর হুমকিতে পরিণত করেছে। এমন বিপদ এবং আসন্ন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই জরুরী অবস্থায় দক্ষিণ সীমান্তের সম্পূর্ণ অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ পেতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সমস্ত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই জরুরী অবস্থা জারির পরই টেক্সাসের ব্রাউনসভিল শহরের গেটওয়ে আন্তর্জাতিক সেতুটি আকস্মিকভাবে বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ পোশাক পরিহিত কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) অফিসারদের একটি দলকে সুশৃঙ্খলভাবে মার্চ করতে করতে অস্থায়ীভাবে সেতুটি বন্ধ করতে দেখা যায়। তা দেখে অভিবাসীরা অবাক এবং ক্ষুব্ধ হন। উল্লেখ্য, সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন সম্পর্কিত ব্যাপক নির্বাহী আদেশ জারি করার পর ১৮ জন অফিসার হেলমেট এবং ফেস শিল্ড পরিহিত অবস্থায় ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা উপেক্ষা করে সীমান্তে উপস্থিত হন। তারা আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের দক্ষিণে সরিয়ে দেয়ার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেন। ব্রাউনসভিলের ১৯ বছর বয়েসী জাইলি ক্যাড্রিয়েল জানান, তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। সিবিপি অফিসাররা তাকে স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। ক্যাড্রিয়েল বলেন, ‘আমি এখানে গাড়ি পার্ক করে আমার স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারা আমার জানালায় নক করল না বা ভদ্রভাবে কিছু বলল না। তারা শুধু চিৎকার করতে লাগল, ‘এখান থেকে চলে যাও! এখান থেকে চলে যাও! যাও! যাও!’ আমি একজন মার্কিন নাগরিক, কিন্তু এমন ব্যবহার কখনো দেখিনি। এটা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে।’
ক্যাড্রিয়েল আরও বলেন, প্রত্যেকের সাথেই, মেক্সিকান কাগজপত্র থাকুক বা না থাকুক। তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করে, তা খুবই অশোভন। টেক্সাস একসময় মেক্সিকোর অংশ ছিল তাই অন্তত আমাদের প্রাপ্য সম্মানটা দিন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের অংশ হিসেবে ‘মাইগ্র্যান্ট প্রোটেকশন প্রোটোকলস’ বা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি পুনরায় চালু করা হয়েছে। এই নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের অভিবাসন কার্যক্রম চলাকালীন মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য করা হয়। অনেক অভিবাসী এই সময়কালে সীমান্ত সেতুগুলোর কাছে অস্থায়ী ক্যাম্পে বা বিপজ্জনক মেক্সিকান সীমান্ত শহরগুলোর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত শহরের রাস্তা দিয়ে অফিসারদের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ পোশাকে মার্চ করাটা এখানে বিরল দৃশ্য এবং ক্যাড্রিয়েলসহ অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, এটি সীমান্ত অঞ্চলে একটি ভয়ানক বার্তা প্রেরণ করছে। এই কঠোর পদক্ষেপে অনেক অভিবাসী এবং স্থানীয় বাসিন্দারাই নিজেদের নিরাপত্তা এবং সম্মানের বিষয়ে শঙ্কিত।
এদিকে, মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বেনজামিন হাফম্যান ঘোষণা করেন যে, সংস্থাটি মাইগ্র্যান্ট প্রোটেকশন প্রোটোকলস (এমপিপি) পুনরায় চালু করেছে যা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে। হাফম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে এবং ২০১৯ সালের এমপিপি নীতির পুনরায় প্রয়োগের জন্য মাঠের বাস্তবতা এখন অনুকূল। মঙ্গলবার মেক্সিকোর মাতামোরোস এবং রেইনোসার স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অভিবাসনপ্রার্থীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যারা আগে জানতেন না এখন তারা জানার চেষ্টা করছেন যে সীমান্তে তাদের আর কতদিন থাকতে হবে। ট্রাম্পের নতুন এক আদেশ এই বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। আদেশে সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল করা হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে এই অ্যাপটি অভিবাসীদের মার্কিন সীমান্ত পোর্টগুলোতে আশ্রয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করতে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজও ছিল। সাইডওয়াক স্কুলের কো-ডিরেক্টর ফেলিসিয়া রেঞ্জেল-স্যাম্পোনারো বলেন, ‘মানুষ শুধু হতবাক হয়ে আছে। তারা এই তথ্য বুঝতে এবং গ্রহণ করতে চেষ্টা করছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকা কিছু অভিবাসী এখনও ব্রিজে গিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন যে তারা ঢুকতে পারবেন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বেশিরভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও বিশেষ ঘোষণায় অভিবাসী হতে ইচ্ছুকরা যেমন হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, একইভাবে জো বাইডেন আমলে নিয়োজিত সহস্রাধিক ফেডারেল কর্মকর্তাকেও ২০ তারিখ থেকেই বরখাস্ত করা হয়েছে। সে সব শুন্য পদে ট্রাম্প-ভক্তদের নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ প্রথম মেয়াদে আমলারা যেভাবে ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপে বাধ সেধেছিলেন, এবার তেমন পরিস্থিতির আশংকা রাখতে চান না।
Posted ৭:০১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24