অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের বিল পাশ কংগ্রেসে

ট্রাম্পের ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল’র আদেশ থামিয়ে দিলো আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ট্রাম্পের ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল’র আদেশ থামিয়ে দিলো আদালত

অবৈধ অভিবাসীর গর্ভে কিংবা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আগত নারীর ঔরসে জন্ম নেয়া সন্তানের নাগরিকত্বের সুযোগ বাতিলের যে আদেশ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি জারি করেছিলেন, সেই আদেশকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক’ হিসেবে অভিহিত করে তার কার্যকারিতা ২৩ জানুয়ারি বৃহস্প্রতিবার সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিলেন ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটলস্থ ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট জজ জন কোহেনুর। আমেরিকার কয়েকটি সিটি এবং মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে ও ২২টি স্টেটের পক্ষ থেকে পৃথক ৫টি আদালতে দায়েরকৃত মামলার একটি শুনানী অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্প্রতিবার। প্রাথমিক শুনানীতেই মাননীয় জজ ঐ আদেশের বিরুদ্ধে সাময়িক স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা অন্যসব আদালতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঐ আদেশ জারি করেন এবং তা ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবার কথা ছিল। সিয়াটল ফেডারেল কোর্টে আরিজোনা, ইলিনয়, ওরেগণ এবং ওয়াশিংটন স্টেটের এটর্নী জেনারেলরা সম্মিলিতভাবে মামলাটি দায়ের করেছেন। সেটির শুনানীতে অংশ নিয়ে ট্রাম্পের পক্ষাবলম্বনকারী অর্থাৎ বিচার বিভাগের এটর্নী ব্রেট শুম্যাটি জোরালো ভাবে চেষ্টা করেছিলেন মাননীয় আদালতে ঐ আদেশের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে। কিন্তু মাননীয় জজ তাকে পাত্তা দিতে চান নি। জাজ কোহেনুর তাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এটা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের পরিপন্থি। তিনি চার দশকের অধিক সময় যাবত ফেডারেল কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। সংবিধানের রক্ষক হিসেবে শপথগ্রহণকারি কাউকে এভাবে সংবিধান লংঘনের মত ঔদ্ধত্ব প্রদর্শনে দেখেননি বলেও উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মনোনয়নে তিনি বিচারপতি হয়েছেন। এই স্থগিতাদেশের কোন প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে পড়বে না। কারণ, আদেশটি জারির ৩০ দিন পর তা কার্যকর হবার কথা। তবে মাননীয় আদালত সংবিধান বিরোধী এই আদেশ রুখে দেয়ার নির্দেশ প্রদানের ফলে ঐসব নবজাতক শিশুর জন্যে ফেডারেল সরকারের বরাদ্দের ব্যাপারটি থেমে থাকবে না। জানা গেছে, বছরে দেড় লাখ শিশুর জন্ম হয় যাদের মা-বাবা অথবা মা যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক নন অথবা ট্যুরিস্ট বা স্টুডেন্ট ভিসায় আগতদের সন্তান।যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে জন্মগ্রহণকারি শিশুরা সংবিধানের চতুর্দশতম সংশোধনীর মাধ্যমে আপনা-আপনি ইউএস সিটিজেন হিসেবে গণ্য হয়। সে আলোকেই বিভিন্ন আদালতে ট্রাম্পের আদেশকে সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে যুক্তি দেখিয়ে ঐ আদেশ বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে।

শুনানীর পর ওয়াশিংটনের এটর্নী জেনারেল নিক ব্রাউন গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ইস্যুতে অনেক কিছুই রয়েছে যা অমানবিক। ১৮৫৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ড্রেড স্কটের একটি রায়ের কারণে আফ্রিকান-আমেরিকানরা কখনো ইউএস সিটিজেন হতে পারতেন না। এটর্নী ব্রাউন বলেন, শিশু জন্মাবে আজ, কাল এবং প্রতিদিনই। এবং জন্মাবে সারা আমেরিকাতেই। তাই এক্ষুণি আমাদেরকে সবকিছু সুধরে নিতে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমেরিকার সীমানার মধ্যে জন্মগ্রহণ করলেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন হবে। এবং এই বিধি অনাদিকাল ধরে চলতে দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট হলেই তিনি সে বিধি বদলাবেন-তা হতে পারে না। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো সহ ৩০ দেশে সিটিজেনশিপ প্রদানের এমন রীতি বহুবছর ধরেই চলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশতম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এদেশে জন্মগ্রহণকারি অথবা ন্যাচারালাইজদের সিটিজেনশিপ প্রদানের নিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এই রীতি শতাধিক বছরের পুরনো।

অপরদিকে, গুরুতর অপরাধে দন্ডিত বা চিহ্নিতরা ছাড়াও মামুলি অপরাধে লিপ্ত কাগজপত্রহীন অভিবাসীদেরকে ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও বহিষ্কারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পরিপূরক একটি বিল ২২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে (২৬৩-১৫৬) পাশ হয়েছে। রিপাবলিকানদের সাথে বেশ ৪৬ জন ডেমক্র্যাট কংগ্রেসম্যানও ছিলেন এই বিলের পক্ষে। গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত আটকে রাখার জন্যে আরো ১১০টি ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণসহ গ্রেফতার অভিযানে প্রথম বছরেই ব্যয় হবে ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার-এমন একটি হিসাবও রয়েছে ঐ বিলে। বিলটি শীঘ্রই ট্রাম্পের টেবিলে যাবে স্বাক্ষরের জন্যে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই দক্ষিণের সীমান্তে ‘জাতীয় জরুরী অবস্থা’ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানকার সীমান্ত সুরক্ষায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এজেন্ট ছাড়াও দেড় হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্প্রতিবার হোয়াইট হাউজের সূত্রগুলো জানায় যে, আরো ১০ সহস্রাধিক সৈন্য নেয়া হবে দক্ষিণের সীমান্তে। একইসাথে সীমানা দেয়াল নির্মাণের অসমাপ্ত কাজও শুরু করা হবে। ট্রাম্পের এমন কঠোর মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকো সরকার আশ্রয় কেন্দ্র এবং ট্রেনিং সেন্টার খোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রমের সময় গ্রেফতারকৃতরা এসাইলাম প্রার্থনা করেও রেহাই পাবে না। তাদেরকে সরাসরি মেক্সিকো-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে এসাইলামের ব্যাপারে যাবতীয় শুনানী শেষে চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা মেক্সিকো-তেই অবস্থান করবেন। এর বাইরে যেসব অবৈধ মেক্সিকানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে-তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মশক্তিতে পরিণত করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মেক্সিকো সরকার।

Facebook Comments Box

Posted ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us