
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শেষ অর্থ বছরে ( ২০২৩ সালের ১অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দৈনিক গড়ে ৩১০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে আরো ৪০৯জনকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঢাক-ঢোল পেটানোর পর গত দুদিনে (২৫ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত) মাত্র ৫০০ জনকে গ্রেফতার এবং ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ৩৭৩ জনকে। সরকারী সূত্রে প্রাপ্ত এ তথ্য অনুযায়ী ডেমক্র্যাট আমলেও অপরাধে লিপ্ত অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযান থেমে থাকেনি। যদিও গত নির্বাচনের আগে সকল প্রচারাভিযানেই ডনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা হরদম জো বাইডেন ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, ডেমক্র্যাটরা অপরাধী অভিবাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এমন অভিযোগের কারণেই গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পাল্লা ভারি হয় এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণের সে প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবেই ষাড়াশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ নির্দেশের টার্গেট হচ্ছে সারা আমেরিকায় কাগজপত্রহীন এক কোটি ১৭ লাখ অভিবাসী। নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, ডেনভার, আটলান্টা, সিয়াটল, মায়ামি, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগোসহ বিভিন্ন সিটিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা মাঠে নেমেছেন। গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পরই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে গোটা কম্যুনিটি। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি স্টোর এবং নিউজ স্ট্যান্ড-সহ খুচরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংকট দেখা দিয়েছে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে কঠোর পরিশ্রমী মানুষের পেটে লাথি মারার মত পরিস্থিতি তৈরীর জন্যে। একইসাথে তারা অভিযোগ করেছেন যে, নিজ দেশে নিরাপত্তার অভাবে কিংবা সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে নতুন সংকটে নিপতিত হয়েছেন। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, ট্রাম্পের এই নির্দেশ পালনে বিচার বিভাগীয় কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা অপারগতা প্রকাশ করলে ভয়ংকর পরিণতির হুমকি দেয়া হয়েছে বিচার বিভাগীয় এক গোপন সার্কলারে। নিউইয়র্কের এটর্নী জেনারেল লেটিশা জেমস এহেন সার্কূলার প্রসঙ্গে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কোনই এখতিয়ার নেই্ স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি প্রশাসনকে অভিবাস-বিরোধী অভিযানে সহায়তায় বাধ্য করার।
নিউইয়র্কে আগে থেকেই ৫ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। গত চার বছরে সে সংখ্যায় যোগ হয়েছে আড়াই লাখ। এসব অভিবাসীর অনেকেই রেস্টুরেন্ট, নিউজ স্ট্যান্ড অথবা গ্রোসারি স্টোরে কাজ করছে। ট্রাম্পের অভিযান শুরু হওয়ায় সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে। এরফলে রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, সিটিজেনদের নিয়োগ করলে ন্যূনতম মজুরি ঘন্টা হিসেবে বেতন (১৬.৫০ ডলার করে) দিতে হবে। অবৈধদের তার অর্ধেকেরও কম দিয়েই চালিয়ে নেয়া যায়। একইভাবে লসএঞ্জেলেস সিটিতেও সাড়ে ৯ লাখের মত অবৈধ অভিবাসী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মারিয়া সালাজার অভিবাসী তাড়ানোর ঢালাও অভিযান বন্ধের জন্যে কংগ্রেসে বিল পাশের দাবি জানিয়েছেন। শুধু গুরুতর অপরাধে দন্ডিতরা ছাড়া অন্য কাউকে গ্রেফতার থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনার কথাও তিনি বলেছেন। এ আহবানে হোয়াইট হাউজে একটি ই-মেইলও পাঠিয়েছেন বলে শনিবার রাতে জানা গেছে।
আরিজোনার কংগ্রেসওম্যান (ডেমক্র্যাট)ইয়াসামিন আনসারি গভীর উদ্বেগের সাথে বলেছেন যে, ট্রাম্পের এই নির্দেশ জারির পর চিহ্নিত একটি দুর্বৃত্ত চক্র অভিবাসী-সমাজে ফোন করছে এবং গ্রেফতার-অভিযান থেকে রক্ষার অঙ্গিকার করে নগদ ফি চাচ্ছে। আইনগত সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়ে এহেন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে এবং ইয়াসামিন আনসারির নির্বাচনী এলাকার অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই ভিকটিম হয়েছেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী আরিজোনা স্টেটের মোট জনসংখ্যার ১৩.১% হলেন অভিবাসী। এর ৮.৬% কাগজপত্রহীন। এই স্টেটের সিনেটর লিলা অ্যলস্টন (ডেমক্র্যাট) বলেছেন যে, ট্রাম্পের আদেশের পর গোটা কম্যুনিটিতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক অস্থিরতায় গ্রাস করেছে দিনাতিপাতের আহার জোটানোর অনিশ্চয়তা।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, স্কুল, মসজিদ-মন্দির-গীর্জা, এমনকি হাসপাতালেই অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরফলে কাগজপত্রহীনরা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন পরিচিত স্থান ত্যাগ করে। কারণ, কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া ঠিকানাতেই হানা দেয়া হচ্ছে।
অবস্থার ভয়াবহতা বিবেচনা করে কংগ্রেসওম্যান আনসারি ইতিমধ্যেই সহকর্মীগণের সাথে পরামর্শ করেছেন যে, প্রথম মেয়াদের মত এবারও “ট্রাম্প মুসলিন ব্যান” আদেশ জারি করতে পারেন। তাই আগে থেকেই কংগ্রেসকে সরব রাখতে হবে। উল্লেখ্য, আগের টার্মে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সুদান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া একটি সামরিক বিমানকে মেক্সিকো অবতরণের অনুমতি দেয়নি। শুক্রবার মার্কিন সামরিক বিমান দুটি ফ্লাইটে প্রায় দেড়শ অবৈধ অভিবাসীকে গুয়াতেমালায় নামিয়ে আসে; কিন্তু অবতরণের অনুমতি না মেলায় সি-১৭ পরিবহন বিমান মেক্সিকোতে নামানোর পরিকল্পনা কার্যকর করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দুই কর্মকর্তা ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানকে অবতরণের অনুমতি না দেওয়ার এ খবর প্রথম দেয় এনবিসি নিউজ। শুক্রবার পরের দিকে মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ‘খুবই চমৎকার সম্পর্ক’ বিদ্যমান এবং অভিবাসনের মতো বিষয়গুলোতে তারা একে অপরকে সহায়তা করে যাচ্ছে। “যখন প্রত্যাবাসনের বিষয় আসে, আমরা সবসময় আমাদের ভূখন্ডে আগত মেক্সিকানদের অবাধে হাতে গ্রহণ করবো,” বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কোন বক্তব্য/ব্যাখ্যা দেয়নি শনিবার পর্যন্ত। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, তারা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নামে পরিচিত অবৈধ অভিবাসীদের মেক্সিকোতে রাখার কর্মসূচিটি ফের চালু করতে যাচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে মেক্সিকোর নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদেরও আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তি আসার আগ পর্যন্ত মেক্সিকোতে অপেক্ষায় থাকতে হতো। ফের এমন কর্মসূচির আগে আশ্রয়প্রার্থীদের যারা নেবে সেই গ্রহণকারী দেশের অনুমতি লাগবে, মেক্সিকো এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অনুমতি দেয়নি-বুধবার এমনটাই বলেছিলেন মেক্সিকোর বামপন্থি প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাউম। মেক্সিকোতে বিমান নামানোর অনুমতি না মেলার ঘটনায় মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পেন্টাগনের সাড়া মেলেনি।
Posted ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24