অনলাইন ডেস্ক
প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম নতুনভাবে নির্ধারণ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিশোধের একটি অংশ হতে পারে। ইতিহাস পুনর্লিখন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মুছে ফেলার কৌশল বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর জাতীয় প্রতীক ও ইতিহাস বদলের নজির রয়েছে। তবে এই ধরনের পরিবর্তন ভবিষ্যতে জাতির ঐক্য ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্বব্যাপী এই ধরনের পরিবর্তন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পর অনেক রাস্তা ও ভবনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, কিন্তু তা হয়েছিল দীর্ঘ পর্যালোচনা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট নেতাদের নামে থাকা স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশে চলমান প্রক্রিয়াটি কেবল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নাকি রাজনৈতিক পুনর্বাসনের অংশ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন একটি সংবেদনশীল বিষয়, যা কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় করা উচিত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আমিনুল হক বলেন, ‘একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতিমুক্ত রাখা উচিত। অতীতকে মুছে ফেলে নতুন ইতিহাস গড়ার চেষ্টা কোনো জাতির জন্য শুভ হতে পারে না।’
কেউ মানবিক বিকাশের চিন্তা চেতনায় লব্ধ জ্ঞান চর্চায় ভালো মানের সুশীল, কেউ দুর্নীতিবাজ। তাই বলে দলীয় রাজনীতিবিদ, নেতাকর্মী ও সমর্থক সবাই নিম্নমানের চিন্তা লালন করে না। বিষয়টি ভিন্ন মত লালন-পালনকারী কোনো ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও জ্ঞানের আলো মানুষের মধ্যে সভ্যতা ও ক্ষমাশীলতার ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারে, যা দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আপনার জ্ঞানের আলোয় অন্য কেউ নিজেকে আলোকিত করতে আপনার সান্নিধ্য পেতে আসলেই ওনি আপনার সমর্থক, দলের সমর্থক, এমন ধারণা লালন ও পালন যে কোনো দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, পৃথিবীর বুকে উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ তৈরির পথ খুলবে। মানুষ শৃঙ্খলের বন্ধনকে শৃঙ্খলা মেনে স্বাধীন ভাবনায় এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে, পৃথিবীর মানচিত্রে সত্যিকারের মানবতার উর্বর নক্ষত্র হবে বাংলাদেশ।
মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী, নেতিবাচক আবেগ যেমন ক্ষোভ, প্রতিহিংসা ও শত্রুতার বোধ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। ‘Confirmation Bias’ বা পূর্বধারণার প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা মানুষকে এমন তথ্য অনুসন্ধান করতে বাধ্য করে, যা তার বিদ্যমান বিশ্বাসকে সমর্থন করে, এবং বিরুদ্ধ মতামতকে প্রত্যাখ্যান করতে শেখায়। এছাড়া, ‘Cognitive Dissonance’ তত্ত্ব অনুযায়ী, যখন কেউ নিজের আদর্শ ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য দেখতে পায়, তখন মানসিক অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, যা অনেক সময় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এই পরিবর্তন মানতে চাইবে না, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিবর্তন কখনোই দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আনতে পারেনি। একদিকে যেমন এটি নির্দিষ্ট মহলের জন্য ন্যায়বিচার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, অন্যদিকে তা সমাজে নতুন বিভাজনও সৃষ্টি করতে পারে। জ্ঞানের আলোয় মানুষকে আলোকিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে, দল ও জাতি উভয়ের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হবে। সৌজন্যে: বিজনেস আই
Posted ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24