
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশে মানবিক -খাদ্য সহায়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো ও চিকিৎসা-গবেষণামূলক প্রকল্পে অর্থ প্রদানকারি ইউএসএইডের বিলুপ্তির নির্দেশের প্রতিবাদ-নিন্দা এবং অবিলম্বে সেই আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও নেমেছেন ইউএসএইড তথা আমেরিকান ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের কর্মচারিরা। কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিত ইউএসএইডের বিলুপ্তি ঘটানোর অভিপ্রায়ে নির্দেশ জারির এখতিয়ার এককভাবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেই বলে অভিযোগ করেছেন বরখাস্তের হুমকির মুখে পড়া কর্মচারি-বিজ্ঞানী-শিল্প-কারখানার পদস্থ কর্মকর্তারা। ৬ ফেব্রয়ারি তারা ক্যাপিটল হিলের সামনে বিক্ষোভ করে অবিলম্বে ইউএসএইডের মাধ্যমে বিতরণকৃত অর্থ ৯০দিনের জন্যে বন্ধের যে নির্দেশ গতমাসে জারি করা হয়েছে তাকে আত্মঘাতি হিসেবে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য, ইউএসএইডের ১০ হাজারের অধিক কর্মচারিকে দীর্ঘকালিন ছুটিতে যাবার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অথচ ইউএসএইডের মাধ্যমে বার্ষিক যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মত ব্যয় করা হয় তার বিনিময়ে বিপুল অর্থ মার্কিন অর্থনীতিতে যোগ হয় বলে বিক্ষোভকারিরা যুক্তির অবতারণা করেন। কারণ, ইউএসএইডের আওতায় চাল, গম-সয়াবিন-সহ বিভিন্ন খাদ্য-সামগ্রি বিভিন্ন দেশে পাঠানোর জন্যে কৃষি খামারগুলোতে প্রতি মওসুমে লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ অথবা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত অঞ্চলে ওষুধ সামগ্রি প্রেরণের জন্যে বিভিন্ন দেশে ইউএসএইডের নিয়ন্ত্রণে গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল-সেগুলোও থমকে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য-সামগ্রি প্রেরণের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রোবিও বলেছেন যে, ইউএসএইডের অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম তার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে। তবে কোন কোন প্রকল্প চালু থাকবে সেটি স্পষ্ট করে বলেননি। এমনি অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসএইডের পক্ষ থেকে সকল কর্মচারি-কর্মকর্তাকে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শুক্রবার রাতের মধ্যে সবেতন ছুটিতে এবং বিভিন্ন দেশের কর্মচারিদেরকে ৩০ দিনের মধ্যে কর্মস্থল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চাকরি খুইয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার অভিপ্রায়ে নয়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিলিয়োনেয়ার ইলোন মাস্ক ফেডারেল সরকারের কর্মচারি হ্রাসের যে টার্গেট স্থির করেছেন সে অনুযায়ী ইউএসএইডকে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব দেশ সর্বক্ষণ আমেরিকার বিপক্ষে রয়েছে, ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা করছে, কুৎসা রটাচ্ছে-তাদেরকে আমেরিকার ট্যাক্স প্রদানকারিদের তহবিল দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন মাস্ক। ইলোন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’এ গত মঙ্গলবার উল্লেখ করেছেন, আমেরিকানদের ট্যাক্সের অর্থ আমেরিকার স্বার্থে ব্যয় হওয়া উচিত। অন্যথায় ট্যাক্সের পরিমাণ কমানো দরকার।
ট্রাম্পের এই নির্দেশ জারির পর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ৫ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-সামগ্রির প্যাকেট করার যে কাজ আমেরিকার বিভিন্ন খামার-কলকারখানায় চলছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পাঠানোর জন্যে আরো ১ লাখ ৮০ হাজার ১২৬ মেট্রিক টন খাদ্য ক্রয়ের জন্যে আমেরিকার খামারকে ওয়ার্কঅর্ডার প্রদানের প্রস্তুতি চলছিল-সেটিও থমকে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে যে, এরফলে বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা প্রবল হচ্ছে।
বৃহস্প্রতিবার ওয়াশিংটনে ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলাটির তাৎক্ষণিক কোন রুলিং আসেনি। সোমবার নাগাদ পজিটিভ রেজাল্টের প্রত্যাশায় কর্মচারিরা রাজপথে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। এই আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর-কংগ্রেসম্যানরা। তারা ট্রাম্পের অ-আমেরিকান নীতি রুখে দিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
Posted ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24