
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
নিউইয়র্ক সিটির অফিস-স্কুল-হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভুল বানানে বাংলা সার্কুলার বিতরণ/পোস্টিংয়ের প্রতিবাদ এবং তা সংশোধনের প্রক্রিয়া অবলম্বনের আহবানে ‘গাইবান্ধা সোসাইটি অব আমেরিকা’ গত ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যতিক্রধর্মী একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল। ভাষার মাসে এ ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও যুক্তরাষ্ট্রে মাদার সংগঠনের দাবিদার ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র কাউকে দেখা যায়নি এ আলোচনায়। এ সময় আয়োজকরা আরো জানান যে, তিন বছর আগে থেকে তারা এই চেষ্টা চালাচ্ছেন। গণস্বাক্ষর সংগ্রহের পর সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে কিন্তু শুদ্ধ বানানের প্রচলন এখনো হয়নি।
গাইবান্ধা সোসাইটির এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সঞ্জীবন সরকার এবং সঞ্চালনা করেন দীলিপ কুমার। মতবিনিময়ের প্রধান অতিথি ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দীলিপ নাথ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মেয়র অফিসের ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্সেস কমিটির মেম্বার। দুই দশকেরও অধিক সময় দেন-দরবারের পর আরো ১৭টি ভাষার সাথে বাংলাকে সিটি অফিস, বোর্ড অব ইলেকশনের অফিস, স্কুল-হাসপাতাল-টিলসি সহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। শুরুতে বানান ও বাক্য ভুলের সীমা ছিল না। প্রথমদিকে ফান্ডিং ছিল না ভুল বানান ধরিয়ে দিতে কিংবা তা শুদ্ধভাবে পরিবেশনের কর্মচারি নিয়োগের জন্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষা বিভাগ থেকে যেসব সার্কুলার এখোন বিতরণ করা হ্েচ্ছ সেগুলোতে ভুলের মাত্রা অনেকটাই কমেছে। আশা করছি আমরা সকলে যদি সচেতন হই এবং ভুলগুলো জোরালোভাবে ধরিয়ে দিতে পারি তাহলে শুদ্ধ বানান ও বাক্যের প্রচলন বিলম্বিত হবে না। ড. দিলীপ নাথ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ভাষা শুদ্ধভাবে সর্বত্র ব্যবহারের জন্যে ফুলটাইম অনুবাদক দরকার। এজন্যে প্রয়োজন তহবিল। সেটি মঞ্জুর করতে হয় স্টেট পার্লামেন্ট থেকে। স্টেট সিনেটর এবং অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে দেন-দরবার জোরদার করার মধ্যদিয়ে তহবিল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি হচ্ছে অন্যতম প্রধান কাজ।
গাইবান্ধা সোসাইটির সভার প্রারম্ভে একুশের গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
এ সময় শিক্ষা বিভাগে বাংলা অনুবাদক হিসেবে কর্মরত মিনহাজ আহমেদ সাম্মু বলেন, শুরুতে লোকবল ছিল না বললেই চলে। সে সময় শিক্ষা বিভাগে ৯টি ভাষার অনুবাদক ছিলেন, তারমধ্যে বাংলার জন্যে ছিলাম একমাত্র আমি। এরপর চারজন নিয়োগ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই নগন্য। সমগ্র কম্যুনিটি এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠাতে পারলে নিশ্চয়ই উদ্ভুত পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সহজ হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, ভুল বানানে অতীষ্ঠ কম্যুনিটির প্রতিক্রিয়া কয়েক বছর আগে আমি সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড লেন্ডারের দৃষ্টিতে এনেছিলাম। তারও আগে এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম শুদ্ধ বানানে সার্কুলার বিতরণের দাবিতে। কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা আজকের আলোচনাতেই অনুমান করা যাচ্ছে। তবে আমি গাইবান্ধা সোসাইটিকে লাগাতারভাবে এই দাবিতে সোচ্চার থাকতে দেখে অভিভ’ত এবং আনন্দিত। গাইবান্ধা সোসাইটির সাথে অন্য সংগঠনগুলোকেও সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। কারণ, এটি একক কোন অঞ্চল বা গোষ্ঠির নয়-সমগ্র বাঙালি কমুূনিটির সমস্যা। জাতিসংঘের শহর এবং এই শহরে অবস্থিত জাতিসংঘে ২৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে বাঙালির রক্তদানের দিনটি তথা ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’র স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বলতে গৌরববোধ করছি যে, সেই রেজ্যুলেশনটির নেপথ্য সংগঠক ছিলেন কানাডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম-সহ কয়েকজন বাঙালি।
গাইবান্ধা সোসাইটির এ দাবি আদায়ে নিউইয়র্কস্থন বাংলাদেশ কন্স্যুলেটও সহায়তা দেবে বলে উল্লেখ করেন কন্স্যুলেটের হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান।
এ সময় শুদ্ধ বানান সমস্যার সমাধানে কম্যুনিটিকে সরব হবার আহবান জানিয়ে আরো কথা বলেন চিত্রশিল্পী ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মুজাহিদ আনসারী, জাকির হোসেন বাচ্চু, আলী হোসেন কিবরিয়া, সূচিত্রা সেন স্মৃতি পরিষদের নেতা গোপাল সান্যাল, সর্দার শাহিদ হাসান লোটন, মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
গাইবান্ধা সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রেজা রহমান এ সময় সকলকে অবহিত করেন যে, বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদানের পরও পরিস্থিতির যথাযথ উন্নয়ন ঘটেনি। সেজন্যেই ভাষা দিবসের প্রাক্কালে আবারো উত্থাপন করতে হলো। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে সঞ্জীবন সরকার বলেন, আমরা আবারো স্মারকলিপি দেব ভুল বানান দূর করার আহবানে। আশা করি কম্যুনিটির অন্যসকল সংগঠন, বিশেষ করে বাংলাদেশ সোসাইটি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে।
এ মতবিনিময়ের আগে ভাষার গান পরিবেশিত হয়। এতে ছিলেন ফাহমিদা চৌধুরী লুনা, মুক্তি সরকার, প্রতিমা সরকার এবং সোসাইটির নেতৃবৃন্দ।
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এবারও নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, বস্টন, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আরিজোনা, টেক্সাস, নিউঅর্লিন্স, আলাবামা, নর্থ ক্যারলিনা, পেনসিলভেনিয়াসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত জনপদে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। অনেক সংগঠন বাংলাদেশের সাথে সময় মিলিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে মহান শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পাশাপাশি ভাষা দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবেন। একুশের গান আর নাচ ছাড়াও প্রবাস প্রজন্মের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথাও জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের এলামনাইরাও সম্মিলিতভাবে নিউইয়র্কে শহীদ দিবস উদযাপনের ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
Posted ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24