
ডিসি থেকে
প্রিন্ট
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ
নরেন্দ্র মোদির সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের সময় বাইরে আওয়ামী লীগের মানববন্ধন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
হোয়াইট হাউজে ১৩ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নে নরেন্দ্র মোদির সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের সময় বাইরে আওয়ামী লীগ, ইউনাইটেড হিন্দুজ-সহ বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই হত্যা করা হচ্ছে অথবা বাগি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মত বর্বরতা চলছে কিংবা সাজানো মামলায় গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণের পর গত ৬ মাসে বাংলাদেশে আইনের শাসনের বালাই নেই, কথিত আন্দোলনকারিদের হুমকি-ধমকি ও বর্বর আচরণের কারণে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে মহাসংকটে দিনাতিপাত করছেন বলেও অভিযোগ করা হয় মানববন্ধন থেকে। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করা গভীর ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হোয়াইট হাউজসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় মানববন্ধন থেকে। এই মানববন্ধনের প্রত্যাশার পরিপূরক একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে যৌথ প্রেস কনফারেন্সে। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা জানি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জড়িত ছিল, সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুনিয়র সোরেসের (জর্জ সোরেসের ছেলে) বৈঠকেও তা প্রমাণিত। তো বাংলাদেশ নিয়ে আপনি কী বলবেন? জবাবে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, না, আমাদের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এখানে কোন ভ’মিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (ভারতের) এই বিষয়টা নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছেন। কাজেই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ছেড়ে দেবো’-পাশে বসা নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন মি. ট্রাম্প।
সংবাদ সম্মেলনে নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি খান। পাশে দুই সহকর্মী। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বাইরে মানববন্ধনের সকলেই গগনবিদারি স্লোগানে প্রকম্পিত করেন গোটা এলাকা। এ সময় নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত এবং বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যখোন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এমন সরগরম অবস্থা চলছিল তখোন ২৬০ মাইল দূর নিউ হ্যামশায়ার স্টেট পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রেজ্যুলেশন (এইচআর ১১) পাশ হয় ৩২৮-৪১ ভোটে। এই রেজ্যুলেশনে হোয়াইট হাউজ, কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হয় অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মত হিংসার আচরণ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে। রেজ্যুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামিক মৌলবাদিদের উষ্কানীতে তথাকথিত ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিধন, ধমীয় উপাসনালয় ধ্বংস, জাতিরজনকের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রথিতযশা সাংবাদিকদের হেনস্থা, গ্রেফতার ও খুন করা, মাজার ধ্বংস করা, এমনকি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই খুন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদেরকে; শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এমন মন্ত্রী-এমপি, রাজনীতিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি শতশত পুলিশ অফিসারকেও হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো পুলিশের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে গোটা বাংলাদেশে(– that government was overthrown by a so-called student uprising supported by Islamicfundamentalists that is hostile to religious minorities; and Whereas, attacks on places of religious worship and cultural figures, harassment and attacks on Hindu religious centers, have increased resulting in many deaths and injuries; and
Whereas, at least 50 Shrines, including the Shah Paran shrine, the Dewanbagh shrine in
Narayanganj, and the Garibullah Shah shrine in Chittagong, were attacked and set on fire; and
Whereas, Muhammad Yunus, the current leader of Bangladesh, has attempted to erase the
history of Bangabandhu by canceling national holidays such as the father of the nation
Bangabandhu’s birthday and removing plaques and renaming institutions that were placed or
named in his honor; and Whereas, there have been extradjudicial killings of citizens who either have spoken out against the Yunus government or who were members of the previous government, including members Bangladesh Awami League, and including the killing of police officers; and; now, therefore, be it Resolved by the House of Representatives: the United States government is urged investigate
allegations of abuse of minorities, especially Hindus, Buddhists, Christians, and other religious
minorities by the interim government of Bangladesh.
Let it be further resolved that copies of this resolution be sent to the members of the New
Hampshire Congressional delegation, the Secretary of State of the United States, the President of
the United states, and the White House Press Office.)|
নিউ হ্যামশায়ার স্টেট পার্লামেন্টে রেজ্যুলেশন পাশের পর প্রবাসী নেতৃবৃন্দ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
এই রেজ্যুলেশন উত্থাপন করেছিলেন নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ (রিপাবলিকান) আবুল বি খান। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অন্যতম সহ-সভাপতি আবুল বি খানের উত্থাপিত রেজুলেশনটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পাশের পর পার্লামেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কো-স্পন্সর ডোগ থমাস এবং জোনা হুইলারকে পাশে নিয়ে বাংলাদেশী আমেরিকান আবুল বি খান বলেন, মাতৃভ’মি ছেড়ে ৪৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এলেও মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে যাই নাড়ির টানে। কিন্তু গত ৫ আগস্টে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কথিত এক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উচ্ছেদের পর বাংলাদেশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। হত্যা করা হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের সামনে। এমনকি কদিন আগে বোলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে জাতিরপিতার স্মৃতি বিজড়িত ভবনটিকে। লুট-তরাজের পর আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা হয় সেনা বাহিনীর সামনে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অথচ তারা কথিত ছাত্র-আন্দোলনকারীদের অপকর্ম বন্ধে ন্যূনতম কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এরফলে সাধারণ মানুষেরাও সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। আবুল খান উল্লেখ করেন, নিজের দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে চরম ব্যর্থতা প্রদর্শনকারি সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে রাখার যৌক্তিকতা আদৌ আছে কিনা তা খতিয়ে দেয়া দরকার। আবুল খান বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ন্যূনতম স্বাধীনতা নেই। হুমকির মুখে সাংবাদিকগণের পেশা আজ বিপর্যস্ত। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা না থাকায় অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধের উপক্রম। কথিত আন্দোলনের সমন্বয়কারি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা মোটা অংকের চাঁদাবাজি করছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগনের কাছে। চাঁদা না দিলে মামলা-হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এভাবে গোটা সমাজকে অসহনীয় অবস্থায় নিপতিত করা হয়েছে-যা কখনোই মানবতার পরিপূরক নয়।
নরেন্দ্র মোদির সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের সময় বাইরে প্রবাসীদের মানববন্ধন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
এদিকে, নিউ হ্যামশায়ার স্টেট পার্লামেন্টে এই বিল পাশের সময় গ্যালারিতে নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম ফজলুল হক, যুগ্ম সম্পাদক আলিম খান আকাশ, মোহাম্মদ জাফরউল্লাহ, আফসার আলী, নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতা বিন্দু সফেদা বসু, টিপু চৌধুরী প্রমুখ।
নরেন্দ্র মোদির সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের সময় বাইরে আওয়ামী লীগের মানববন্ধন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
এদিকে, হোয়াইট হাউজ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনের মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন ড. প্রদীপ কর, ড. সিদ্দিকুর রহমান, ড. দীলিপ নাথ, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল হাসিব মামুন, শরাফ সরকার, সাখাওয়াত আলী, ইমদাদ চৌধুরী, সোলায়মান আলী, রকিবউদ্দিন মন্টু, জালালউদ্দিন জলিল, ফারুক হোসেন, শাহানারা রহমান, শাহাদৎ হোসেন, শেখ জামাল, ইনাইটেড হিন্দুজ ইন ইউএসএ’র ডা. প্রভাত দাস, দীনেশ মজুমদার, প্রিয়তোষ দে, ভবতোষ মিত্র, সমর রায়, নির্মল পাল, ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, রমেশ নাথ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে।
Posted ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24