
লন্ডন প্রতিনিধি
প্রিন্ট
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং ধর্মান্ধ ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের প্রতিবাদে, ইউরোপীয় নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজা ক্যালাসের কাছে একটি জরুরি চিঠি প্রেরণ করেছে। চিঠিতে, ইউরোপিয়ান নাগরিক সমাজের সংগঠন সমূহ, যেমন ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম, দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম, নেদারল্যান্ডসের সাবেক সংসদ সদস্য হ্যারি ভান বোমেল এবং জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি অঞ্চলের বাংলাদেশ গ্রুপসহ আরও কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও আক্রমণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, জুলাই-২০২৪ থেকে বাংলাদেশে সহিংসতা ব্যাপক আকারে বেড়েছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি-৩২ এলাকায় অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন (যেটি একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর ছিল) উচ্ছেদ করা হয়। এই হামলা শুধু একটি ভবন ধ্বংসের ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এবং জাতির পিতার ত্যাগের প্রতীক ধ্বংস করার এক ঘৃণ্য ঘটনা।
প্রতিবাদী সংগঠনগুলোর দাবি, সরকারের প্রতি অত্যন্ত আনুগত্যশীল ব্যক্তিরা এই আক্রমণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদের “বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন” বা ‘স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন’ এর নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম, ধানমন্ডি-৩২ বাড়িটি ভাঙার হুমকি দিয়েছিলেন এবং সরকারের একজন প্রভাবশালী ছাত্র উপদেষ্টা এতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কিত ব্যক্তিরা ‘বুলডোজার মার্চ’ নামক এক অনুষ্ঠানের ডাক দিয়েছিলেন। এসব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, সরকার এই সহিংসতা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
শুধু তা-ই নয়, সরকার পক্ষের চুপ থাকা এবং পরে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের বিতর্কিত মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করেছে। আক্রমণকারীদের সহিংসতা এবং লুটপাট শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সীমিত ছিল না, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংস্কৃতির উপর এক অমানবিক আঘাত।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, চিঠি প্রেরক সংগঠনগুলো জাতিসংঘ থেকে কয়েকটি দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে: ৫ ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা ও ধ্বংসের জন্য তাদের দায়ী করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বেআইনি অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাকান্ড বন্ধ করা, উগ্র ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান বন্ধ করা, যারা সহিংসতা এবং অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যাতে অপরাধে অভিযুক্ত না হলে সবাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে, হিন্দু এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আওয়ামী লীগের সদস্যদের উপর চলমান অত্যাচার এবং সহিংসতা থেকে রক্ষা করা।
সংগঠনগুলোর মতে, যদি এই সহিংসতা এবং ধ্বংসের চক্র বন্ধ করা না হয়, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার পুরো অঞ্চলের জন্য একটি বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে আরও রক্তপাত এবং দুর্ভোগের হাত থেকে এই জাতিকে রক্ষা করা যায়।
এ চিঠির মাধ্যমে ইউরোপীয় নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো বাংলাদেশে শান্তি, সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, ইবিএফ কম্যুনিকেশন্স ডিরেক্টর, ইইউ ও ইউকে হ্যারি ভ্যান বোমেল (সমাজতান্ত্রিক দল), প্রাক্তন ডাচ এমপি, এমস্টারডাম, পাওলো কাসাকা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম, ব্রাসেলস ক্লাউস স্ট্রেম্পেল ও লোয়ার স্যাক্সনি’র ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ, জার্মানি।
Posted ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24