‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’: গবেষণা জরিপের তথ্য মেধা আর শ্রম এবং বিপুল ট্যাক্স প্রদানের পরও মর্যাদা নেই অভিবাসীগণের

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’: গবেষণা জরিপের তথ্য মেধা আর শ্রম এবং বিপুল ট্যাক্স প্রদানের পরও মর্যাদা নেই অভিবাসীগণের

ফেডারেল ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে আদি আমেরিকানের চেয়ে অভিবাসীরা এগিয়ে থাকলেও ফেডারেল সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা অভিবাসীরা ৫৪% কম পাচ্ছেন আদি আমেরিকানদের তুলনায়। এতদসত্বেও ডনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আদি আমেরিকান এবং ন্যাচারাইজড সিটিজেনদের জীবন-যাপনের আলোকে গবেষণামূলক একটি রিপোর্ট মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে, সেখানেই ‘যত দোষ নন্দঘোষ’ প্রবাদটি উচ্চারিত হয়েছে। ‘দেখতে নারীর চলন বাঁকা’র মত বিদ্বেষী আচরণ করা হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবি অভিবাসীদের সাথে। গবেষণা জরিপে ২০২২ সালের ফেডারেল বরাদ্দ নিয়ে পর্যালোচনাকালে দেখা গেছে যে, সে বছর সরকার নাগরিকদের বিভিন্ন খাতে সুযোগ-সুবিধা বাবদ ব্যয় করেছে ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘ক্যাটো ইন্সটিটিউট’ পরিচালিত এই গবেষণা জরিপ অনুযায়ী এই ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে অভিবাসী (ন্যাচারালাইজড সিটিজেন ও গ্রীণকার্ডধারী) সমাজের জন্যে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১০৯ বিলিয়ন ডলার। ক্যাটো ইন্সটিটিউটের অর্থনীতি এবং সমাজ বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্স নৌরাস্টে এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেছেন, মোট জনসংখ্যার ৭% হলেন অভিবাসীরা। অথচ ফেডারেল মঞ্জুরির মাত্র ৩.৫% পেয়েছেন তারা। এমনি অবস্থারও পরিবর্তন ঘটাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সুযোগ পেলেই দোষারোপ করা হয় অভিবাসীদেরকে। অথচ সারা আমেরিকায় যত অন্যায়-অপকর্ম হচ্ছে তার ৮% এর সাথেও অভিবাসীরা জড়িত নন।

নৌরাস্টে এবং তার সহকর্মী জেরোমি ফ্যামোলারো আরো উল্লেখ করেছেন, ঐ জরিপে ফেডারেল সুযোগ পাওয়া নন-সিটিজেনরা মাথাপিছু গড়ে ৪৫৬৪ ডলার করে পেয়েছেন। অপরদিকে, আদি আমেরিকানরা পেয়েছেন ৯৬২৩ ডলার করে। আর ন্যাচরালাইজড সিটিজেনরা পেয়েছেন ১১১৩৫ ডলার করে। কারণ ন্যাচারালাইজড সিটিচেজনরা স্বাভাবিক কারণেই প্রবীন হওয়ায় সোস্যাল সিকিউরিটি বেনিফিট বেশী পেয়ে আসছেন। তবে চিকিৎসা খাতে ঘটছে অন্যরকম ঘটনা। আদি আমেরিকানরা পাচ্ছেন ২৫০৪ ডলার করে। অপরদিকে ন্যাচারাইজড সিটিজেনরা পাচ্ছেন ২০৯৯ ডলার। এ ধরনের বৈষম্য চলছে অভিবাসীদের সাথে। অথচ মেধা এবং শ্রমে অভিবাসীদের আশেপাশেও নেই আদি আমেরিকানরা। বাইডেন আমলে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের ঘটনা বাড়তে থাকাও শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় হিসপ্যানিকরা ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা কম পাচ্ছেন। তার চেয়ে আরো কম পাচ্ছেন এশিয়ানরা। যদিও তথ্য-প্রযুক্তিসহ উদিয়মান অনেক সেক্টরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এশিয়ানরা। তাদের মেধার ক্বদরও করা হচ্ছে প্রশাসন থেকে। তবুও ফেডারেল সুবিধা প্রদানে বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে বলে ঐ জরিপে উদঘাটিত হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক আরেকটি থিঙ্কট্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত বছর অভিবাসীরা ফেডারেল ট্যাক্স প্রদান করেছেন ৩৮৩ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থে সকল নাগরিকের কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিবাসীরা বিশেষ কোন সুবিধা পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি।

এদিকে, সিটিজেনশিপের জন্মগত অধিকার বন্ধে ট্রাম্পের একটি আদেশের বিরুদ্ধে তাঁরই প্রথম মেয়াদে নিযুক্ত এক বিচারপতি ড্যানিয়েল ফরেস্টও অবস্থান নিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ইউএস নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিল এ রায় দিয়েছেন। এই কোর্টে ৩ সদস্যের বিচারপতির একজন হচ্ছেন ট্রাম্প নিযুক্ত।

এ নিয়ে টানা ৪টি আদালত ট্রাম্পের ঐ আদেশকে থামিয়ে দিলো এবং মার্কিন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে হোয়াইট হাউজের খবরদারির বিরুদ্ধে আদালতে লড়ছে ‘আমেরিকা সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’সহ বেশ কটি মানবাধিকার সংস্থা। উল্লেখ্য, অবৈধভাবে বসবাসরত এবং টু্যূরিস্ট/ব্যবসায়ী ভিসায় আগতদের গর্ভে জন্মগ্রহণকারিরা শিশুরা আপনা-আপনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারে। বহু পুরনো সেই নির্দেশ বন্ধের নির্দেশ জারির বিষয়টি ছিল গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের দ্বিতীয় ঘটনা। প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশ থামিয়ে দিতে অন্তত: ৩টি নিম্ন আদালত যে রুলিং ইতিপূর্বে দিয়েছে তার ওপর স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়েছিল বিচার বিভাগ এই নবম সার্কিট কোর্টে। এরফলে বিষয়টি আর কার্যকর করা সম্ভব হবে না।

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us