‘জয় বাংলা’ স্লোগানে নিউইয়র্কে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

‘জয় বাংলা’ স্লোগানে নিউইয়র্কে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে নিউইয়ক সিটির কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কসে বেশ কটি স্থানে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে প্রবাসীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছেন। হাড় কাঁপানো শীত আর তুষারপাত উপেক্ষা করেই সন্তান-সন্ততি সহ পরিবারের অন্যান্যদেরও নিয়ে এসেছিলেন ফুল হাতে। অনেকের পরনে ছিল বাংলা অক্ষর এবং শহীদ মিনার অঙ্কিত শাড়ি-পাঞ্জাবি। নানা সীমাবদ্ধতায় প্রভাত ফেরীর আয়োজনে সক্ষম না হলেও সকলের কন্ঠেই ধ্বনিত হয় আমর সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। সবচেয়ে বড় আয়োজনগুলো ছিল বাংলাদেশ সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, জেবিবিএ, একাত্তরের প্রহরি এবং ‘আমরা মুজিব’ নামক সংগঠনের ব্যানারে। সন্ধ্যা থেকেই প্রবাস প্রজন্মের অংশগ্রহণে একুশের গান, একুশের কবিতা আবৃত্তি, নাচ এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে চার প্রবাসীর উদ্যোগে বাঙালির মায়ের ভাষার জন্যে রক্তদানের দিনটি কিভাবে আর্ন্তাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হলো সেই সব কথকথা। উল্লেখ্য, রফিক ও সালাম নামক কানাডার ভ্যাঙ্কুভার প্রবাসী দুই বাঙালিসহ চারজনে গঠন করেন ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামক একটি সংগঠন। দীর্ঘ দেন-দরবারে তদান্তিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপনের পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোতে তা গৃহিত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শহীদ দিবসকে গোটাবিশ্ব ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। ইতিহাসের বর্ণাঢ্য উপস্থাপনার মধ্যদিয়ে প্রতিটি আয়োজনেই কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামের নাম গভীর শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়।

কুইন্সের উডসাইডে তিব্বতিয়া মিলনায়তনে অর্ধ শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সুশঙ্খলভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের সময় জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়। এসময় বিএনপির সমর্থকেরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করলেও পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে। বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ানসহ কর্মকর্তাগণের সার্বিক সমন্বয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের বিশাল এ আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

অপরদিকে, জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় জেবিবিএ এবং ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড ‘আমরা মুজিব’ নামক সংগঠনের স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারেও প্রবাসীদের ঢল নেমেছিল মধ্যরাতে। একুশের গান পরিবেশন ছাড়াও দিবসটির প্রেক্ষাপট আলোচনা এবং একুশের চেতনায় সকল প্রবাসীকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানানো হয়। কোন কোন বক্তা বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান কামনা করেন এবং বলেন, অন্যথায় বিদেশী বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে না। একুশের চেতনায় উজ্জীবিত থেকেই অবিলম্বে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার অধিষ্ঠিত করার আবশ্যকতাও উপস্থাপন করেন কয়েকজন বক্তা।

চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে বাংলাদেশী বাণিজ্যিক পাড়ায় স্থাপিত শহীদ মিনারে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণকারি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল কাদের মিয়া, আমরা মুজিব’র মোহাম্মদ নোয়াব, মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন তুহিন, আবু তাহের, সফিকুল আলম, হুমায়ূন কবির, মনিরুল কাউছার, আবু ইউসুুপ লিটন, আবুল হাসান মহিউদ্দিন, মোসাদ্দেকুর রহমান পেয়ারু, মোহাম্মদ সাহাদাত, আব্দুল হামিদ, মাসুম, পারভেজ, রাজু, সাহাদাত হোসেন, মার্শাল, মামুন, শামসুদ্দিন, মাকসুদ আলম, ব্রুকলীন বরো আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরল ইসলাম নজরুল এবং আওয়ামী লীগ নেতা ইসমত হক পাশা খোকন।

এদিকে, জ্যামাইকাস্থ অ্যল কাউন্টি হেলথ্ কেয়ার গ্রুপ’র মিলনায়তনে সংস্থাটির উদ্যোগে ভাষা দিবস স্মরণের অনুষ্ঠানে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সংস্থার প্রধান আব্দুল কাদের শিশিরের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক ও বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ। তিনি তার বক্তব্যে বাংলা ভাষার জন্যে রক্তদানের ধারাবাহিকতায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এখন সময় হচ্ছে বাঙালি জাতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার। গিয়াস আহমেদ বলেন, আমরা মূলধারার রাজনীতিতে সরব রয়েছি বলেই বহুজাতিক এই সিটির রেল স্টেশন, বগী, বাস, হাসপাতালে বাংলা সংযোজিত হয়েছে। ব্যালটেও বাংলা স্থান করে নিয়েছে। বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

একুশের প্রথম প্রহরে জামালপুরের প্রবাসীরা। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

এ অনুষ্ঠানে মূলধারার অপর রাজনীতিক শাহ শহিদুল হক বলেন, বাঙালির মায়ের ভাষার জন্যে রক্তদানের দিনটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের মধ্যদিয়ে আমরা সম্মানীত হয়েছি। সেই মর্যাদাকে অনাগত দিন ধরে অটুট রাখার অভিপ্রায়ে প্রবাস প্রজন্মকেও বাংলারর সাথে পরিচিত রাখতে হবে। এতে আরো বক্তব্য দেন জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এ বি এম ওসমান গণি, সাবেক সেক্রেটারি জে মোল্লাহ সানী, জেবিবিএর নেতা জাহাঙ্গির আলম জয়, মো. রায়ান, আনিসুর রহমান প্রমুখ।

 

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us