ধর্ষণ মহামারি: শাস্তি অনিশ্চিত, নিরাপত্তা অনুপস্থিত  

প্রিন্ট
বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণ মহামারি: শাস্তি অনিশ্চিত, নিরাপত্তা অনুপস্থিত  
বর্তমানে বাংলাদেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাটের সাথে সাথে ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপরাধের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। যেখানে শ্লীহীনতা, ইভটিজিং, মেয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা প্রকাশ্যেই ঘটছে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলেই যেন নীরব দর্শক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো যথার্থ পদক্ষেপ না নেওয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির তৎপর না হওয়া যেনো জনগনকে ক্ষুদ্ধ‌ করে তুলছে। জনগনের নিরাপত্তা বিশেষ করে নারী নিরাপত্তা আজ পুরোপুরিভাবেই অনিশ্চিত। সম্প্রতি রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ ঘটনায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও পুলিশের মামলা দায়ের করতে না চাওয়া, আর্মি ক্যাম্প থেকে ভুক্তোভুগীদের কোনোরকম সাহায্য না করা আর একাধিক থানা হতে ফেরত পাঠানোর মত হয়রাণিরমূলক ব্যপারগুলোয় স্পষ্টত যে ন্যায়বিচারও যেন এখন নিরাপত্তার মতই অনিশ্চিত। রাষ্ট্রের এরকম দুর্গম পরিস্থিতিতে সরকার ও বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতা যেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আরো প্রশ্রয় দিচ্ছে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হলেও বাস্তবিকভাবে দেশে তার কোনো মূল্যায়ন নেই বললেই চলে। কারন ঊর্ধ্বগতীতে বৃদ্ধি পাওয়া ধর্ষণ অপরাধের শুধু ন্যায়বিচার নয় এমনকি শুষ্ঠ তদন্তও হচ্ছেনা যার ফলে এখনো মুক্ত বাতাসে ধর্ষকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই রাজশাহীগামী বাসের একজন ভুক্তভোগীর, ধর্ষিতা নারী সম্পর্কে লোমহর্ষক বর্ণনা এক পর্যায়ে  তিনি বলেন, ‘ধর্ষিতা মেয়েটার ঠোট, গলা, বুকে বিশ্রীভাবে কামড়ের দাগ ছিল’। একজন ধর্ষিতা নারী শুধু শারীরিকভাবেই অবর্ণনীয় নির্যাতনের স্বীকার হয় না বরং সারাজীবন চরম মানসিক আঘাত সাথে নিয়ে কাটায়। ভয়াবহ অপরাধ ঘটানো এ ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত আবশ্যক যাতে আর কোনো নারী এরকম বিকারগ্রস্ত অমানুষদের কবলে না পরে। অথচ এরকম ঘৃণ্য ও নীচ অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা আজও মৌন। ফলশ্রুতিতে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মব জাস্টিস করতে বাধ্য হচ্ছে, আত্মরক্ষার্থের জন্য জনগণকেই সচেতন হতে বলা হচ্ছে কিন্তু এগুলো কোনো প্রকৃত সমাধান নয়। মব জাস্টিসে নির্দোষ ব্যাক্তিদের মৃত্যুর মত ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে সবাই অবগত তবুও বর্তমানের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ জনগন আর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেনা। অপরদিকে ধর্ষণ মহামারী এখন এতটাই নিয়ন্ত্রনের বাহিরে যে প্রকাশ্যে মেয়েদের তুলে সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার মত কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটছে। চার বছরের শিশু থেকে মাদ্রাসার পর্দাশীল নারী শিক্ষার্থীর ধর্ষণের স্বীকার হওয়া যেন আবারো প্রমান করে, নারীর পোশাক নয় বরং কিছু মানুষরূপী হিংস্র প্রানীদের বিকারগ্রস্ত মানসিকতাই আসলে দায়ী। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিতে পারলে ধর্ষণ দমন কোনোভাবেই সম্ভব হবেনা, আর নিরাপত্তাহীনতাও ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
বাসা থেকে বের হতে আজ নারীরা ভীত, শঙ্কিত ও অনিরাপদ বোধ করে আর দুশ্চিন্তা, উদ্বেগে থাকতে হয় পরিবার-পরিজনদের। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে নারীর পথচলায় তা সর্বাত্মক বাধা হয়ে দারাবে আর সমাজে সমতা গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি তার ক্রমশ ভঙ্গুর ঘটবে। মনে রাখতে হবে নারী যখন নিরাপদ, সমাজ তখন সমৃদ্ধ। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে ক্রমাগত প্রশ্নের সম্মুখীন করার পাশাপাশি সকলকেও এগিয়ে আসতে হবে। ছোট থেকে ছোট নারী অবমাননাকর বা নির্যাতনের ঘটনাকে এড়িয়ে চলা যাবেনা বরং রাস্তাঘাট কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হোক, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করতে হবে। এটি শুধু নারীর সমস্যা নয় বরং পুরো সমাজেরই ব্যথি তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বর্তমানে একান্ত জরুরী। সর্বোপরি দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলকে তাদের ব্যর্থতার দায় মেনে নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দ্রুত জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ধর্ষণ মামলায় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাও সুনিশ্চিত হয়, কেননা সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও প্রত্যেক নারীর অধিকার।

সামিহা তাসনিম
শিক্ষার্থী,

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম এন্ড কন্টেন্ট রাইটার্স
Facebook Comments Box

Posted ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us