ট্রাম্পের নয়া পদক্ষেপ অবৈধদের স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের

নাম তালিকাভুক্ত করুন অন্যথায় জেল-জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

নাম তালিকাভুক্ত করুন অন্যথায় জেল-জরিমানা

ধর-পাকড়ের চলমান অভিযান স্থিমিত হয়ে পড়ায় অবৈধ অভিবাসীদেরকে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের অভিনব একটি পন্থা অবলম্বন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রি) ক্রিস্টি নয়েমের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলোলিন বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং সেক্রেটারি নয়েমের সুস্পষ্ট বার্তা হচ্ছে : এক্ষুণি চলে যাও। এখনি যদি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করো তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আসার সুযোগ পাবে এবং আমেরিকার মুক্তজীবন উপভোগে সচেষ্ট হবে এবং আমেরিকান স্বপ্ন পূরণেও সক্ষম হওয়া যাবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বলা হয়েছে যে, ১৪ বছরের অধিক বয়সের সকল অবৈধ অভিবাসীকে নিকটস্থ ফেডারেল অফিসে গিয়ে নাম তালিকাভুক্ত (রেজিস্ট্রেশন) করতে হবে। সে সময় টিপসই দিতেও হবে। অন্যথায় তাদেরকে গুরুতর অপরাধী হিসেবে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। একইসাথে মোটা অংকের জরিমানাও দিতে হবে। এমন ঘোষণা অবৈধ অভিবাসীদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলেছে-যার প্রভাব গোটা কম্যুনিটিতে পড়ছে। কারণ, সোয়া কোটির অধিক অবৈধ অভিবাসীরা লসএঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, বস্টন, মায়ামী, আটলান্টা, ডেট্রয়েট, ওয়াশিংটন মেট্র এলাকা, প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, বাফেলো, সিয়াটল, ওরেগণ,ফিনিক্স, ডালাস, হিউস্টন ছাড়াও বহু সিটিতে বাস করছে।
অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নী এবং ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে এ সংবাদদাতাকে বলেন, সংশ্লিষ্টরা যেন নিজ নিজ এটর্নীর পরামর্শ অনুযায় এই তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ফেডারেল অফিসে গিয়ে টিপসই প্রদানে ইচ্ছুকরাও যেন এটর্নী সাথে নিয়ে যান। তবে যাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের নির্দেশ ঝুলে রয়েছে তারা তো ফেরার, ধরা পড়লেই বহিষ্কারের খড়গ নেমে আসবে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে কিন্তু অন্য কোন প্রোগ্রামে আবেদন করেননি, কিবা শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে আসার পর ১৪ বছর বয়স অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু বৈধতা পাননি-তাদের এই রেজিস্ট্রেশনে যাওয়া উচত।

ইমিগ্রেশন বিষয়ক খ্যাতনামা এটর্নী জান্নাতুল রুমা বলেছেন, রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ পালনে ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে এটর্নীর পরামর্শ নেয়া জরুরী। এর আগেও প্রেসিডেন্ট বুশ এমন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। সেটির ফলাফল কেমন ছিল এখনো ভুলেননি অনেকে। এভাবে কম্যুনিটিকে আতংকগ্রস্ত করে অবৈধরা যাতে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যায়-তেমন ফন্দি আঁটা হয়েছে বলে মনে করছেন । তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় ফিরলে পরবর্তীতে যে কোন ভিসায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ থাকবে। আর গ্রেফতার করার পর বহিষ্কার করলে ১০ বছর পর্যন্ত অন্য কোন প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ থাকবে না।
মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন দফতরের দেখভালের দায়িত্ব পালনরত সেক্রেটারি নয়েম বলেছেন, গত নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প যে অঙ্গিকার করেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালনে যা করা দরকার সেটি করা হচ্ছে। আমরা চাই অবৈধরা স্বেচ্ছায় চলে যাক। অণ্যথায় তাদের সমুচিত শাস্তির মুখামুখী হতেই হবে।

এমন রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ আদৌ পালিত হবে বলে মনে করছেন না কেউই। কারণ, যারা অবৈধভাবে বাস করছেন, তারা টিপসই দিতে রাজি হবেন না। টিপসই দিলে তারা যে অভিবাসন আইনের সাথে প্রতারণা করেছেন সেটি উদঘাটিত হবে এবং কোনক্রমেই আইসকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, নানাবিধ কারণে অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান নিরূপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাই বড় ধরনের সুযোগ আত্মগোপনে থেকে ট্রাম্পের অভিযানের আড়ালে থাকার। এছাড়া, সর্বত্র তল্লাশী চালিয়ে অবৈধদের ঢালাওভাবে গ্রেফতারের মত জনবল কিংবা প্রযুক্তিগত সামর্থ্যও নেই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের। এসব কারণেই রেজিস্ট্রেশনের পুরনো একটি প্রথা(যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং সর্বশেষ ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা পর চালু করা হয়েছিল বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জন্যে)’র ঘোষণা দিল ট্রাম্প প্রশাসন।
এটর্নী মঈন চৌধুরী অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, আরো কিছু নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তেমন নিষেধাজ্ঞা এই রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে এটর্নীর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ইউনিডোসইউএস’র সিনিয়র এডভাইজার ক্রিস র‌্যামন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, যে কোন উপায়েই অবৈধদের গ্রেফতারের অভিযানকে জোরদারকল্পে প্রশাসনের একটি আরেকটি পদক্ষেপ। তারা চাচ্ছে স্বল্প সময়ে অধিক অবৈধকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করতে। আর এরফলে কম্যুনিটিতে আতংকাবস্থাকে আরো বৃদ্ধি করবে। ২০ জানুয়ারির ও সৃষ্ট সন্ত্রস্ত্র অবস্থাকে আরো জটিল করা হচ্ছে সর্বশেষ এই রেজিস্ট্রেশনের পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে।
জানা গেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)’র চীফ অব স্টাফ জন ফিয়ারে শুরু থেকেই অবৈধদের চিহ্নিত করার কৌশল হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের এই প্রক্রিয়া অবলম্বনের তাগিদ দিচ্ছিলেন।

Facebook Comments Box

Posted ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us