১২ বছরে ২০ হাজার আদম পাচার, আন্তর্জাতিক পাচারকারী দলের দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

১২ বছরে ২০ হাজার আদম পাচার, আন্তর্জাতিক পাচারকারী দলের দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ

আরিজোনার দুর্গম সীমান্তে এমন সতর্ক-সাইন ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েক বছর আগে। ছবি-সংগ্রহ।

মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল-সহ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহের ২০ হাজারের অধিক নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারকারি একটি আন্তর্জাতিক চক্রের দুই নেতাকে শুক্রবার গ্রেফতারের পর সোমবার ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অন্তত: ৭ জনকে খুনের অভিযোগও দেয়া হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন যে, এডয়ার্ডো ডুমিঙ্গো রিনোজ-মাটুল ওরফে টুরকো এবং তার সহকারি ক্রিস্টোবাল মেজিয়া-ছাজ নামক দুজনই গুয়াতেমালার নাগরিক। এদের নেটওয়ার্ক কর্তৃক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকিয়ে দেয়ার সময় অনেকের প্রাণহানী ঘটেছে। আবার চুক্তি অনুযায়ী যারা যথাসময়ে টাকা দিতে সক্ষম হয় না বা দিতে টালবাহানা করেছেন তাদেরকে জিম্মি করার ঘটনাও ঘটেছে গত ১২ বছরে। বিচার বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, এই দু’জনের বিচার ২২ এপ্রিল শুরু হবে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বিভিন্ন পথ মাড়িয়ে মেক্সিকো-তে আস্থানা গাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় ঢুকতে আগ্রহী একেকজনের কাছে থেকে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার ডলার করে দাবি করা হয়।

দাবি অনুযায়ী যারা পরিশোধে সক্ষম তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয় দুর্গম পথে, হিংস্র যন্ত্রুর সাথে ছলচাতুরি করে গভীর বন-জঙ্গল অতিক্রমের জন্যে। আর যারা টাকা দিতে চান না বা টালবাহানা করেন তাদেরকে মেক্সিকো সীমান্তের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে আটকে রাখা হয়। সেজন্যে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করার ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্ত অতিক্রমের পর যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন পুলিশের হাতে গ্রেফতার এবং ডিটেনশন সেন্টারে বেশ ক’সপ্তাহ কাটানোর পর প্যারলে মুক্তিপ্রাপ্ত ডজনখানেক বাংলাদেশী যুবক ইতিপূর্বে এ সংবাদদাতার সাথে তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ভয়ংকর স্মৃতি রোমন্থনকালে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশেই ঐ নেটওয়ার্কের দালালেরা টাকার চুক্তি করে। ২৫ লাখ থেকে ২৮ লাখ টাকা করে নেয়ার পরই বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং এরপর ব্রাজিলের ঘাঁটিতে নেয়া হয়। ব্রাজিল থেকে শুরু হয় মেক্সিকো অভিমুখে যাত্রা। সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং মেক্সিকো-তে পৌঁছার পর অপেক্ষার পালা শুরু হয়। ছোট্ট খুপরিতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা দালালেরাই করে। এরপর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে পাচারকারিরা। কখনো কখনো ৮/১০ জনকে একত্রে, আবার কখনো বা এককভাবে ছেড়ে দেয়া হয় সীমান্ত অতিক্রমের দুর্গম পথে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের ফেডারেল কোর্টে অপর এক আন্তর্জাতিক আদম পাচারের মামলায় দুই বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। এরা ছিলেন মোহাম্মদ মিলন হোসেন (৪৫) এবং মোক্তার হোসেন। এদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল মেক্সিকোর টাপাচোলা আস্থানা থেকে। বর্তমান মামলাতেও ঐ চক্রের সাথে কয়েকজন বাংলাদেশীও জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে ফ্লোরিডার মায়ামীস্থ সমুদ্র উপক’ল থেকে ৪ বাংলাদেশীসহ বেশ কজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অভিযোগে। সেই পাচারকারি চক্রের হদিস উদঘাটনে ব্যস্ত রয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের এজেন্টরা।
ছবির ক্যাপশন-হিউম্যান স্মাগলিং আরিজোনার দুর্গম সীমান্তে এমন সতর্ক-সাইন ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েক বছর আগে। ছবি-সংগ্রহ।

 

Facebook Comments Box

Posted ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us