অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযানে শুনানীর অপেক্ষায় থাকা নিউইয়র্কে আরেক বাংলাদেশী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযানে শুনানীর অপেক্ষায় থাকা নিউইয়র্কে আরেক বাংলাদেশী গ্রেফতার

আগামী বছর ৫ ফেব্রুয়ারিতে চ’ড়ান্ত শুনানীর তারিখ ছিল। এমন এক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশীকেও ৪ মার্চ নিউইয়র্ক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কামরুল হাসান নামক ঐ বাংলাদেশীকে ফোন করে ম্যানহাটানস্থ আইসের (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে গেলেই তাকে আটক করার সংবাদটি কম্যুনিটিতে ভীতির মাত্রা চরমে উঠিয়েছে। যদিও বলা হয়েছে যে, গুরুতর অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদেরকে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে। নোয়াখালীর চাটখিলের সন্তান হাসান ২৮ লাখের অধিক টাকা দালালকে দিয়ে বহুদেশ ঘুরে জীবনের ঝুকি নিয়ে বছর তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার পর ওয়ার্ক পারমিটও পেয়েছেন অর্থাৎ কোনভাবেই অবৈধ অভিবাসীর পর্যায়ে ছিলেন না। তবুও কেন তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলো? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের ডাইরেক্টর এবং ডেমক্র্যাটিক পার্র্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী ৫ মার্চ এ সংবাদদাতাকে জানান, আবেদন পেন্ডিং থাকাবস্থায় গ্রেতারের ঘটনাটি সত্যি দু:খজনক এবং উদ্বেগের। অর্থাৎ এখোন গ্রীণকার্ডধারী, এমনকি সিটিজেনশিপ থাকা লোকজনকেও সবসময় আইডি সাথে রাখা জরুরী। এছাড়া, যারা গ্রেফতারের পর বন্ডে জামিন পেয়েছেন তাদের জামিনের শর্তগুলি মেনে চলা উচিত। কামরুল হাসানের ব্যাপারটি অনেকের জন্যে শিক্ষনীয় হতে পারে। এটর্নী মঈন আরো উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর যে কার্যক্রম চলছে তার টার্গেট হবার আশংকা থাকা প্রবাসীদের প্রতি আবারো অনুরোধ রাখছি তারা যেন নিজ নিজ এটর্নীর পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করেন। সিটি, স্টেট অথবা ফডারেলের আইন লংঘিত হতে পারে এমন কোন কাজ/কথা না বলাই শ্রেয়। আইস কিংবা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা বয়ান অথবা ডকুমেন্ট সাবমিট করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সি, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন মেট্র এলাকা থেকে ২১ জানুয়ারির পর অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশীকে গ্রেফতারের সংবাদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন স্টুডেন্টও রয়েছেন। তারা স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম লংঘন করায় তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আইসের কাছে থেকে দেশভিত্তিক গ্রেফতারের তথ্য এখোন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আইসের তথ্য অনুযায়ী বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের সাড়ে ৫ সপ্তাহে ৮৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়, উপরোক্ত সময়ে গ্রেফতার অভিযানের সময় বাসা-ব্যবসা-চলতি পথ থেকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে ১৭ হাজার। বাইডেন আমল থেকে ডিটেনশনে থাকাসহ বর্তমান আমলে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের এক মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের সংখ্যা ৩৭৬৬০জন। অর্থাৎ নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর টার্গেটের সিকি ভাগেও পৌছা সম্ভব হয়নি।
এহেন অবস্থায় হোয়াইট হাউজের অনুরোধে গত মাসে কংগ্রেসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাশ হয়েছে। এ অর্থ ইমিগ্রেশন বিভাগ ছাড়াও ব্যয় করতে হবে প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানী খাতে।

কংগ্রেসে পাশ হওয়া এই অর্থকে নিতান্তই কম বলে মনে করছেন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কারণ, সাার্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ১৪ মিলিয়ন অর্থাৎ এক কোটি ৪০ লাখ। দৈনিক কতজনকে গ্রেফতার ও বহিষ্কার করতে হবে-সেটি নিয়ে যারা হিসাব কষছেন তারাই প্রচন্ড হতাশা ব্যক্ত করছেন বলে ৫ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ফেডারেল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস আরো লিখেছে যে, ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেফতারের মোট সংখ্যা হচ্ছে ২৩ হাজার। জানুয়ারির শেষ ১০ দিনের সংখ্যা ৯ হাজারের নীচে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের টানা চার বছরের অব্যবস্থাপনা আর ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে টাম্প প্রশাসনকে। তেমন একটি নাজুক অবস্থা থেকে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে টেনে উঠাতে কিছুটা সময় দিতেই হবে।
এদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বুধবার টেক্সাসের ঈগলপাস সীমান্ত এলাকা পরিভ্রমণের সময় বলেছেন যে, চলতি মেয়াদের মধ্যেই মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র বরাবর পুরো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। এ সময় তার সাথে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটে হেগসেথ, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলশী গ্যাবার্ড। বেআইনীভাবে সীমানা অতিক্রম বন্ধে দেয়ালের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। ভাইস প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, দেয়ালে থাকবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা, কেউ বেআইনীভাবে ঢুকতে চাইলেই ধরা পড়বে। এজন্যে লাগবে না কোন জনবল। এক্ষেত্রে কৃত্রিম গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তা নেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমান্তকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। উল্লেখ্য, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৪৫০ মাইল দেয়াল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। এরপর আরো ৩০০ মাইল নির্মাণের কাজ চলাবস্থায়ই ২০০০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ায় সেটি থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। এমনকি, দেয়াল নির্মাণের জন্যে সংগৃহিত সামগ্রিও নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করেছেন জো বাইডেন। শেষ মূহূর্তে সেই নিলামের প্রক্রিয়া স্থগিতে সক্ষম হয়েছিলেন টেক্সাসের এটর্নী জেনারেল কেন প্যাক্সটন আইনী লড়াইয়ে। এখোন পুনরায় সেই দেয়াল নির্মাণে আর কোন বাধা থাকলো না বলে জানা গেছে।

 

Facebook Comments Box

Posted ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

.

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us