মানবিক কল্যাণে অবিরত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এক অদম্য সংকল্পের সাক্ষ্য

যুক্তরাষ্ট্রের অনূর্দ্ধ ৪০ বছরের সেরা ৪০ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশী কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের অনূর্দ্ধ ৪০ বছরের সেরা ৪০ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশী কাদের

যুক্তরাষ্ট্র তথা গোটাবিশ্বে অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন তরুণ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়িদের সাফল্যকে আরো ব্যাপকতা এবং আগ্রহী তরুণদের উৎসাহিত করার অভিপ্রায়ে কর্মরত ‘বিজনেস এলিট’র ‘ফোর্টি আন্ডার ফোর্টি’ এওয়ার্ড’র জন্যে মনোনীত হয়েছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশী উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী মো. এ কাদের (শিশির)। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কার ২৯ মে ফ্লোরিডার মায়ামির আলোঝলমল মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪০ সেরা তরুণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে ৬ মার্চ আয়োজকরা এ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন। বরাবরের মত আয়োজকরা এবারো প্রত্যাশা করছেন যে, পুরস্কারপ্রাপ্তরা নিজ নিজ ব্যবসায়িক সফলতার ধারাবিবরণী অন্যদের মধ্যেও বিকাশের সুযোগ পাবেন, অনুপ্রেরণার উৎস হবে মানবিক কল্যাণে যুবসমাজকে আত্মনিয়োগে। ‘বিজনেস এলিট’র ঘোষণায় মো, এ কাদের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ অবহেলিত জনগোষ্ঠির মধ্যে নিউইয়র্কভিত্তিক অ্যল কাউন্টি হেলথ্কেয়ার’র সেবামূলক কার্যক্রমের পরিধি মিশিগান, ফিলাডেলফিয়া, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাট স্টেটেও সম্প্রসারিত হয়েছে। হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমেও অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে চিকিৎসা-সেবায় ইতিমধ্যেই অনন্য এক উদাহরণে পরিণত হয়েছে অ্যল কাউন্টি হেলথ্কেয়ার। ওয়ালস্ট্রিটের নিজ কর্মগুণে সুপরিচিত উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী মো. এ কাদের হচ্ছেন অ্যল কাউন্টি হেলথ্কেয়ারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি কাদের তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘পপুলার ক্যাপিটল ইনক’র মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খাদ্য- নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রি (সয়াবিন, ভূট্টা, চিনি, এলএনজি, কটন ইত্যাদি) আমদানি-রফতানীতেও অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্যে পাড়ি দেয়ার আগে তিনি ঢাকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেন।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল কুমিল্লার বড়োরা উপজেলার লগ্নসার গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মদ কাদেরের যাত্রা হচ্ছে একটি অসাধারণ উদাহরণ, যা ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং শিক্ষার পরিবর্তনকারী শক্তির প্রতি গভীর বিশ্বাসের প্রমাণ। তার গল্প একটি অবিরত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এক অদম্য সংকল্পের সাক্ষ্য যা সাদাসিধে শুরুর পরেও সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছে। কাদেরের শৈশব ছিল এক গ্রাম্য সমাজে, যেখানে কঠিন জীবন-যাত্রার পাশাপাশি তিনি শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং তার জন্মভূমির প্রতি গভীর আস্থার মাধ্যমে নিজের জীবন পাল্টে ফেলেন। আজ তিনি বিশ্বের এক গুণী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, সফল উদ্যোক্তা এবং দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরির ওপর মনোনিবেশ করেছেন এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন। এখানে তার জীবনের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা ও সাফল্যের গল্প এখানে তুলে ধরা হলো।
তার বাবা মুহাম্মদ রশিদ, ছিলেন একজন ছোট ব্যবসায়ী এবং মা শিরিন আক্তার, ছিলেন গৃহিণী। পরিবারটি অত্যন্ত সাধারণ একটি ঘরে বসবাস করত, যেখানে বৈদ্যুতিক সুবিধা, পরিশোধিত পানি এবং আধুনিক জীবনযাত্রার কোনো সুযোগ ছিলনা। তবে, তার মা-বাবা তাকে কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং শিক্ষার মূল্য শেখান। কাদেরের মাতৃপিতামহ আকাশ আলী ছিলেন এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী, কাদেরের শৈশবকালীন জীবনে তার উপস্থিতি ছিল, তাঁর উদ্যোক্তা মনোভাব কাদেরের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

নিউইয়র্কে গতবছর বাংলাদেশ ডে প্যারেডের মঞ্চে সিটি মেয়রের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত মো. এ কাদের শিশির।

শৈশব থেকেই কাদের জ্ঞান অর্জনের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, যদিও তার চারপাশে শিক্ষার কোনো সুবিধা ছিলনা। লগ্নসারের অধিকাংশ শিশুর মতো কাদেরও কম শিক্ষার সুযোগ পেতেন, কিন্তু তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে আলাদা করে তুলেছিল। তিনি ছিলেন এমন একজন ছাত্র, যিনি প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তার পড়াশোনায় সফল ছিলেন। স্থানীয় কাপাসতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা শুরু হলেও, দ্রুত আরো বেশি শিখতে চেয়েছিলেন, এবং সেই লক্ষ্যেই অনেক কঠিন সত্ত্বেও তিনি নিজের পড়াশোনায় সফল হন।
কাদেরের প্রাথমিক জীবনে শিক্ষায় অর্জিত সাফল্য তাকে ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানীতে পাঠানোর সিদ্ধান্তে উদ্বুদ্ধ করে। তার বাবা-মা, যারা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতেন, তাকে সমর্থন দেন, যদিও এতে তাকে তার বাড়ি থেকে দূরে চলে যেতে হয়েছিল। ঢাকায় এসে তিনি প্রথমে ওয়েস্টএন্ড হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা সিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। তার কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পান, যা বাংলাদেশের একটি প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে কাদেরের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পায়, এবং তিনি নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে থাকেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারেন যে, শুধু শিক্ষাগত সাফল্যই নয়, বরং একটি সমাজের উন্নয়নে শিক্ষার কী ভূমিকা তা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। মাস্টাসর্ ডিগ্রি শেষ করার পর, কাদের জানতেন যে তার যাত্রা এখানেই থামবে না। তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড় যা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন পরিবর্তনের সুযোগ

কাদেরের শিক্ষাজীবনের এক নতুন দিগন্ত খুলে যায় যখন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। গ্রাম থেকে আসা একজন ছাত্রের জন্য এটি ছিল এক অসাধারণ অর্জন। হার্ভার্ডে তার প্রবেশ কাদেরের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এবং তার জ্ঞানের প্রতি অটুট ইচ্ছাশক্তির একটি চিহ্ন ছিল। হার্ভার্ডে তার শিক্ষাজীবন আরও বিস্তৃত হয়, যেখানে তিনি বিশ্বমানের শিক্ষক, গবেষক এবং সহপাঠিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে বিশ্বব্যাপী সুযোগের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। সেখানে থাকাকালীন কাদের বিশ্বঅর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন, যা ভবিষ্যতে তার উদ্যোক্তা উদ্যোগ এবং মানবিক প্রকল্পগুলির ভীত তৈরি করে।

একটি দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম: “আই অ্যাম বাংলাদেশ”
২০১৭ সালে কাদের নিউইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন। এখানে তিনি একজন উদ্ভাবনী-উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের স্থান তৈরি করতে শুরু করেন। নিউইয়র্কে এসে তিনি উপলব্ধি করেন যে, তার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যবসায় সফল হওয়া নয়, বরং বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা। তার দেশে প্রচারিত গল্প প্রায়শই দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চারপাশে ঘুরত, কিন্তু কাদের একটি ভিন্নচিত্র দেখতেন একটি দৃঢ়তা, উদ্ভাবন এবং অপ্রকাশিত সম্ভাবনার গল্প।

ন্যাশনাল হেলথ্কেয়ার চ্যাম্পিয়ন এওয়ার্ড নিচ্ছেন মো. এ কাদের শিশির। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

ঐ বছরই তিনি “আই অ্যাম বাংলাদেশ” উদ্যোগ চালু করেন, যা একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে বাংলাদেশের চিত্র বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাদের বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিশ্বে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়, বিশেষত বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে, যারা তাদের ঐতিহ্যে গর্বিত হয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে নিতে উৎসাহিত হন। এই উদ্যোগটি কাদেরকে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উচ্চকিত করতে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশের জন্য একটি বৈশ্বিক দূত

কাদেরের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং ২০১৮ সালের মধ্যে তিনি ৩৫টিরও বেশি দেশ সফর করেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে প্রচার চালাতে শুরু করেন এবং বিশ্বব্যাপী নেতৃবৃন্দ, উদ্যোক্তা এবং নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। কাদেরের কঠোর প্রচেষ্টা শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক প্রচারণায় সীমিত ছিলনা, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য কার্যকর ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি করতে মাঠে নামেন। তার কাজ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি আশা এবং অনুপ্রেরণার চিত্র, যারা বিদেশে সফল হতে চায়।
কাদেরের বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২৪ সালে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে “রিবিল্ড বেটার বাংলাদেশ সামিট” আয়োজন করেন। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বৈশ্বিক নেতারা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এই সম্মেলনটি কাদেরের ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা তার দেশের অগ্রগতির জন্য তার ভূমিকা আরও শক্তিশালী করেছে।

ব্রিজ তৈরি: কাদেরের জীবন লকাস্ট ভ্যালিতেআজ কাদের নিউইয়র্কের অভিজাতশ্রেণীর এলাকা লকাস্ট ভ্যালির বোভিল এলাকায় বসবাস করছেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগে কাজ করেছেন। তার বাড়ি এখন একটি উদ্ভাবনের এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে বাংলাদেশে উন্নতি নিয়ে নানা ধারণা এবং প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। যদিও কাদেও আর্থিকভাবে সফল এবং পারিবারিকভাবে সুখী, তবুও তিনি তার শৈশবের মূল্যবোধে বিশ্বাসী -এগুলো হলো সেবা, পরিশ্রম এবং স্থায়ী পরিবর্তন আনার অদম্য বাসনা।

উদ্যোক্তা এবং পপুলার গ্রুপ

কাদের তার সাংস্কৃতিক প্রচারণার পাশাপাশি, পপুলার গ্রুপ নামক একটি বৈশ্বিক ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। পপুলার গ্রুপ একটি বৈচিত্রময় কর্পোরেট গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার ব্যবসার ক্ষেত্রগুলি স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, প্রকাশনা এবং প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত। গ্রুপের পোর্টফোলিওতে রয়েছে কায়লি কাদের হোল্ডিংস ইনক, পপুলার ক্যাপিটাল ইনক, ক্যাপসুলএইড (একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান), সিমএসবিডি (স্কুল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) এবং নর্থ আমেরিকা শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস ইনক, ইত্যাদি। পপুলার গ্রুপের বিকাশ কাদেরের এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিফলন, যা এক বৈশ্বিক ব্যবসা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ছিল, যা শুধুমাত্র বাজারে সফল হবেনা, বরং তার নিজের দেশের উন্নয়নেও সহায়ক হবে। তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির মাধ্যমে কাদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য সহজতর করেছেন এবং একাধিক সেক্টরে উদ্ভাবন চালিত করেছেন। বর্তমানে, পপুলার গ্রুপ ৩৫টিরও বেশি দেশে কাজ করছে এবং ১,২০০এরও বেশি কর্মচারী নিয়োগ করেছে। এই কোম্পানির সফলতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (ফ্রিডম টাওয়ার) ৮৫ তলায় তার কর্পোরেট সদর দফতর স্থাপন করা হয়েছে।

গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে এশিয়ান আমেরিকান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ড’র সেরা উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীর পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মো. এ কাদের। ছবি-এনওয়াইভয়েস24।

স্বীকৃতি এবং অর্জন

কাদেরের সাফল্য কোনোভাবেই অগ্রাহ্য হয়নি। ২০২৪ সালে তাকে ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যা ব্যবসা এবং সমাজে তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে সম্মানিত করেছে। একই বছর, তাকে ন্যাশনাল হেলথকেয়ার চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যা স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বেও প্রতি স্বীকৃতি। ২০২৫সালে, কাদের আবারো এক মাইলফলক অর্জন করেন যখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিজনেস এলিট ফোর্টি আন্ডার ফোর্টি’ (ইঁংরহবংং ঊষরঃব ৪০ টহফবৎ ৪০)তে মনোনয়ন দেয়া হয়। এটি ২৯ মে ফ্লোরিডার মায়ামিতে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে হস্তান্তর করা হবে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে এই সম্মান লাভ করেন। এই পুরস্কারটি তার অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্রেও শীর্ষস্থানীয় তরুণ নেতাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এবং তার প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে স্পষ্ট করেছে। এছাড়াও পেয়েছেন কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড ফ্রম কংগ্রেসওম্যান গ্রেসে মেং এবং নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার থেকে স্টেটের প্রক্লেমেশন ।

দৃষ্টিভঙ্গিও সম্প্রসারণ: মুহাম্মদ কাদেরের ভবিষ্যত

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, কাদেরের দৃষ্টিভঙ্গি স্বাস্থ্যসেবা উদ্ভাবন এবং তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোকে এমন জনগণের সেবায় বিস্তৃত করার দিকে মনোনিবেশ করছে, যারা এখনও অবহেলিত। তার একটি প্রধান প্রকল্প হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে নিউইয়র্কে অলকাউন্টি হেলথকেয়ার গ্রুপকে ডুয়্যাল এসএনএপি হেলথ প্রোগ্রাম (এমএপিপ্রোগ্রাম) হিসেবে সম্প্রসারণ করা। এই প্রোগ্রামটি প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ইন্টিগ্রেট করবে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে রোগীর সেবা এবং চিকিৎসকদের পারিশ্রমিকের প্রক্রিয়া উন্নত করা হবে।
এছাড়াও, কাদের বাংলাদেশে সরকারী সহযোগিতায় ছয়টি নার্সিং স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা দেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে যোগ্য নার্সের চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি করা হবে। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রশিক্ষিত পেশাদারদের অভাব পূরণের জন্য এবং এমন একটি টেকসই কর্মীবাহিনী তৈরি করার জন্য নেওয়া হবে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখতে পারবে।
মুহাম্মদ কাদেরের এক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে শুরু করে বিশ্বের এক গুণী সৎ ব্যবসায়িক মেগনেট হয়ে ওঠার যাত্রা মূলত: একটি অনুপ্রেরণার উদাহরণ। তার গল্প কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের ধারাবিবরণী নয়, এটি তার সম্প্রদায়েকে উন্নীত করার, তার মাতৃভূমিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি অনন্য গল্প। কাদের তার মেয়ে কায়লি কাদের এবং তার স্ত্রী শিফা আমিনকে নিয়ে দিনাতিপাত করছেন লং আইল্যান্ডে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি বাড়িতে । শিক্ষা, ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং দানশীল প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে কাদের দেখিয়েছেন যে, জীবনের যেকোনো শুরুও পরিপ্রেক্ষিতে, মহানুভবতার পথটি দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৈরি করা যায়। তিনি তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে এবং বিশ্বে একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলতে কাদের ভবিষ্যতের প্রজন্মের স্বপ্নদ্রষ্টা, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনকারী মানুষের জন্য একটি আশার বাতিঘর হিসেবে রয়ে যাবেন বলে অনেকে মনে করছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us