গাজায় ইসারয়েলি বর্বরতার প্রতিবাদকারি ছাত্রনেতা মাহমুদ আব্বাসের গ্রীণকার্ড বাতিল

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১:০৫ অপরাহ্ণ

গাজায় ইসারয়েলি বর্বরতার প্রতিবাদকারি ছাত্রনেতা মাহমুদ আব্বাসের গ্রীণকার্ড বাতিল

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা ও প্রতিবাদকারিদের শায়েস্তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিউইয়র্কে বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ভার্সিটির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল মঞ্জুরি বাতিলের পর গত বছরের ঐ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মাহমুদ খলিলকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। কলম্বিয়ার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং ফিলিস্তিন থেকে আসা মাহমুদ খলিলের গ্রীণকার্ড থাকা সত্বেও তাকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এজেন্ট তথা আইস এজেন্ট কর্তৃক গ্রেফতারের ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো রোববার সন্ধ্যায় মাহমুদ খলিল গ্রেফতার প্রসঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করেছেন, আমেরিকায় যারা হামাসের সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, আমরা তাদের ভিসা অথবা গ্রীণকার্ড কেড়ে নিচ্ছি , যাতে তাদেরকে যুুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা যায়। এ প্রসঙ্গে হোমলান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রী ত্রিসিয়া ম্যাকলোলিন শনিবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী ইসরায়েল বিরোধী যে কোন অপতৎপরতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টের সমন্বয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কলম্বিয়া ভার্সিটির সাবেক গ্র্যাজুয়েট মাহমুদ খলিলকে গ্রেফতার করেছে। কারণ খলিল নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গ্রুপের তালিকায় থাকা হামাসের পক্ষে চলমান আন্দোলনে। তাই ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে সুসংহত রাখতে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন যে, কলেজ ক্যাম্পাসে যারা জিহাদি সমর্থনে আন্দোলন প্রতিবাদ করেছে তেমন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের বহিষ্কার করা হবে। আর কলম্বিয়া ছিল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী গত বসন্তে গড়ে উঠা তুমুল ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার।

এদিকে, মাহমুদ খলিলের এটর্নী অ্যামি ই গ্রী রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, শনিবার আইসের এজেন্টরা নিউইয়র্কে তার গতিরোধ করেন। তাকে জানানো হয় যে, সরকার তার স্টুডেন্ট ভিসা প্রত্যাহার (বাতিল) করেছে। সে সময় খলিল তাদেরকে জানিয়েছেন যে, তিনি গ্রীণকার্ডধারী। কিন্তু তার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করা হয়নি। তাকে গ্রেফতার করেই নিউজার্সির এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়েছে, যেখাকে অবৈধ অভিবাসীদের রাখা হয় বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত। এটর্নী গ্রী আরো জানান যে, মাহমুদের গ্রেফতার বেআইনী এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি প্রদানের জন্যে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতে। ৮ মাসের অন্তস্বত্তা মাহমুদ খলিলের স্ত্রী (যিনি ইউএস সিটিজেন) রোবার গিয়েছিলেন ঐ ডিটেনশন সেন্টারে স্বামীর সাথে সাক্ষাতের জন্যে। কিন্তু কমকর্তারা তাকে মিথ্যা বলেছেন যে, মাহমুদ খলিল সেখানেই নেই। এটর্নী গ্রী উল্লেখ করেছেন যে, খলিলের মুক্তির জন্যে আইনী লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তাকে যে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে, তা আদালতের মাধ্যমেই প্রমাণ করবেন। এটর্নী গ্রী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, চলমান অভিবাসন বিরোধী অভিযানকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছেন; যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। এদিকে, ইতিমধ্যেই মাহমুদ খলিলের গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যদি কোন অপরাধের জন্যে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তার ভিসা বাতিল হয়ে যায়। অথবা সাসপেন্ড হবার কারণে যদি তারা নিয়মিত কোর্স সম্পন্নে সক্ষম না হন তাহলেও ভিসা আপনা-আপনি বাতিল হয়ে যায়। তবে কলেজ বা ভার্সিটি ক্যাম্পানে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের কারণে কারো ভিসা কেড়ে নেয়ার এখতিয়ার নেই ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে যদি কোন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সমর্থনে কেউ কাজ করেন। মাহমুদ খলিলকে সেভাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
এদিকে, খলিলের অবিলম্বে মুক্তি দাবিতে চলমান গণস্বাক্ষর অভিযানে রোববার সন্ধ্যা নাগাদ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার তিন লক্ষাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষর মিলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমে জানান।

Facebook Comments Box

Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us