মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সেই বাচ্চু রাজাকার

পাকিস্তান থেকে ফিরলেন ঢাকায়, কেশাগ্র স্পর্শ করেনি কেউ

ঢাকা থেকে সংবাদদাতা   প্রিন্ট
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তান থেকে ফিরলেন ঢাকায়, কেশাগ্র স্পর্শ করেনি কেউ

যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি টের পেয়েই দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান জামায়াতে ইসলামীর নেতা কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকার, যার প্রকৃত নাম আবুল কালাম আজাদ। দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে দেখে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরলেন তিনি।
জানা গেছে, গতকাল ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার ঢাকার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২৭ মিনিটে অনুমিত সময়ের ৩ মিনিট আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১৪ নম্বর রানওয়ে স্পর্শ করে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২১ ফ্লাইট। বোয়িং ৭৭৭- ২ডি৭ (ইআর) মডেলের এয়ারক্রাফটটি থেকে টার্মিনালে নেমে আসেন বাচ্চু রাজাকার। যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু হওয়ায় ১৪ বছর আগে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্রগুলো তার এই আগমনের ব্যাপারে তথ্য রাখলেও বিস্ময়করভাবে কোনো গ্রেপ্তার ছাড়াই জামায়াতে ইসলামীর নেতা বাচ্চু রাজাকার বেরিয়ে যান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে ১৪ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে থাকা এক ইউটিউবারের কাছে সাক্ষাৎকারে সামনে আসেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত ১১ মার্চ পাকিস্তানের লাহোর থেকে স্থানীয় সময় ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪৬ ফ্লাইটে করে ব্যাংককের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বোয়িং ৭৭৭ মডেলের এয়ারক্র্যাফটি ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট আকাশে উড়ে ব্যাংককে পৌঁছায় সেখানকার স্থানীয় সময় ১২ মার্চ ভোর ৫টা ৩২ মিনিটে।
ব্যাংককে প্রায় ৫ ঘণ্টার ট্রানজিট শেষে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে তিনি থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২১ ফ্লাইটে করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ঢাকায় পৌঁছতে তার সময় লাগে ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট।

কে এই বাচ্চু রাজাকার
মুক্তিযুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অপহরণের দায়ে তার মৃত্যুদন্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল ফরিদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। সে থেকেই পলাতক তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করতে ২০১২ সালের ৩রা এপ্রিল পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগেই ২০১২ সালের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে দাবি করে র‌্যাব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক তার গাড়িতে করে বাচ্চু রাজাকারকে সীমান্তে নিয়ে যান বলে সে সময় সংবাদ মাধ্যমকে জানায় সংস্থাটি। অপরাধীকে পালিয়ে যেতে সহায়তার অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ছেলে শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল আজাদ, আবুল কাশেম মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ এবং তার শ্যালক কাজী এহতেশামুল হক লিটনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তার দুই ছেলে র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন, তাদের বাবা পাকিস্তানের উদ্দেশে ভারতে যান। হিলি সীমান্তে যাওয়ার পর তার বন্ধু আবুল কাসেম আজাদের ক্যাপিলা হোটেলে আশ্রয় নেন। সেই হোটেল মালিককেও গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। সে সময় পরপর কয়েকদিন ধরে প্রতিবেদক গিয়েছিলেন বাচ্চু রাজাকারের উত্তরখানের বাড়িতে। প্রথমদিন ভেতরে নারী কণ্ঠের সাড়া পাওয়া গেলেও পরে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। সব ছিল নিরব-নিস্তব্ধ।
বাচ্চুর পুত্র জিহাদের ভাষ্যমতে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরখানের নিজ বাড়ি থেকে বের হন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। একটি কালো কাচের মাইক্রোবাসে রোগী সেজে শুয়ে থেকে বাড়ির বাহির হন বাচ্চু রাজাকার। মাইক্রোবাসটি যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অধ্যাপক ড. ইউসুফের বাড়িতে। সেখানে খেয়ে, রাস্তায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাত ৮টার দিকে মাইক্রোবাসটি দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন অধ্যাপক ইউসুফের নিজস্ব গাড়ির বিশ্বস্ত চালক আলীম। মধ্যরাতে বগুড়ার শেরপুরের ফুড ভিলেজে গাড়ির অন্যরা খাওয়া-দাওয়া করলেও বাচ্চু রাজাকার খাবার খান গাড়ির ভেতরে বসেই। রাত প্রায় ২টার দিকে জয়পুরহাট পৌঁছলে আলীমকে বদল করে জিহান নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে হিলির সেই ক্যাপিলা হোটেলে পৌঁছান। সেখানে তিনতলার একটি রুমে ওঠেন বাচ্চু রাজাকার। জিহাদ আরও জানান, ২ এপ্রিল বাবা এসএমএস করে জানান, তার মোবাইলে (বাসায় থাকা) ডাক্তার এমরান নেপাল নামে একটি নম্বর সেভ করে রেখেছেন। সেই নম্বরটি দেবার জন্য বলেন। আমি নম্বরটি বাবাকে এসএমএস করে দেই। ডা. এমরান সম্পর্কে জিহাদ তার জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, এমরান ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক এহতেশামের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার সঙ্গেও এমরানের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। বর্তমানে তিনি নেপালে থাকেন। মাঝে মধ্যে ঢাকায় এলে তাদের বাসায় আসতেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বাচ্চু রাজাকার ও তার দুই ছেলে নতুন তিনটি সিটিসেল নম্বর নেন। তাতেই চলছিলো তাদের যোগাযোগ। জিহাদের কথায়, ৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় ওয়ারেন্ট ইস্যুর খবর জেনে নতুন নেওয়া সিটিসেল নম্বরে এসএমএস করে তার বাবাকে জানান। কিন্তু ওই এসএমএস-এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে ওই দিন বিকেলে বাচ্চু রাজাকার তার শ্যালক এহতেশামকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি ভাল আছেন।
জিহাদ জানান, ওই ফোনটি যে নম্বর থেকে এসেছিলো সেটি ভারতের নম্বর। তখনই তারা নিশ্চিত হন তাদের বাবা দিনাজপুর সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র মতে, এরপর কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই পাকিস্তানে পৌঁছে বাচ্চু রাজাকার আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথাও বলেন। পাকিস্তান থেকে বাচ্চু রাজাকার বাংলাদেশে অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর জেলায় প্রথমে রাজাকার ও পরে আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রোকন থাকলেও পরে প্রত্যক্ষ রাজনীতি ছেড়ে দেন। খাড়াদিয়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার জেলা আলবদরের প্রধান ও রাজাকার কমান্ডার হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে বাচ্চু রাজাকার হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী ধণাঢ্য ব্যক্তি। তিনি ৫টি এনজিও পরিচালনা করায় তার অনেক অনুসারী ছিল। ওয়াজের মাধ্যমে তিনি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করতেন।

১৯৭১ সালে বাচ্চু রাজাকার ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমানে ছাত্রশিবির) সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এবং ফরিদপুর ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ‘৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে মুসলিম লীগ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় কাজ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠনের পূর্ব হতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপকর্মের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মে মাসের শুরুতে ফরিদপুর জেলায় আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুসহ অন্যদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। পরে ফরিদপুরের আলবদর বাহিনী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাচ্চু রাজাকার মাদ্রাসায় লেখাপড়ার কারণে ভালো উর্দু বলতে পারতেন। এটাকে পুঁজি করে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে তিনি এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে পাকিস্তানি সেনাদের মন জয়ে সচেষ্ট হন।
১৯৭০-১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা কমিটির সদস্য আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর স্টেডিয়ামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাচ্চু রাজাকার পাক বাহিনীর কাছে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে অস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্রগ্রহণ করেন। তার ইন্ধনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্টেডিয়ামের ভেতরে হাজারো নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভেতরেই মাটিচাপা দেয়। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরে ময়লারগাড়ি নামক স্থানে ফেলে দেয়। বাচ্চু রাজাকারের গ্রুপে অনেক রাইফেল ছিল। এতে বাচ্চুর অত্যাচারের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছিল। হাসামদিয়া গ্রামে হিন্দুপাড়ার মালামাল লুটপাট করেন ও ৪০-৫০টি ঘরে আগুন দেন বাচ্চু। ফরিদপুর শহরে যে কটি বধ্যভূমিতে শত শত মানুষ শায়িত আছেন, তাদের হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ এবং নির্দেশদাতা বাচ্চু রাজাকার। তিনি নিজে গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন বিভাগ যে সমস্ত অভিযোগ এনেছিলে- তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২) (এ) (সি-আই) (জি) (এইচ) তৎসহ ৪(১) হত্যাজনিত গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত করা।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকার খ্যাত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও দেশান্তরী, নারীদের পাকিস্তানি সেনাদের কাছে তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
জগদ্বন্ধু আশ্রমে হামলা, লুটপাটের পর ৮ পূজারিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া, শহরের চকবাজারস্থ বদ্রিনারায়ণের বাড়ির রামকৃষ্ণ আগরওয়ালার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট করে ও তাদের দেশান্তরে বাধ্য করা হয়। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে কলারন গ্রামে তৎকালীন জমিদার শুধাংশু মোহন রায়কে অপহরণ ও হত্যা করা হয় । পরবর্তীতে তার ছেলে মণিময় রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে জখম করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের অভিযোগপত্র উপস্থাপনে এ সমস্ত তথ্য প্রমাণিত হয়।
১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল বাচ্চু রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানি সেনাদের অভ্যর্থনা করে ফরিদপুর শহরে নিয়ে আসেন। হানাদারদের অত্যাচারও বাচ্চুর কাছে হার মানে। এমন কোনো জঘন্য কাজ ছিল না, যা তার দলের লোক দ্বারা সম্ভব হয়নি। বাচ্চুর দল বিভিন্ন হিন্দু বসতিপূর্ণ গ্রামের মালামাল লুট করে। সে কাহিনী বড়ই মর্মান্তিক।
পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগীদের মধ্যে বাচ্চু রাজাকার ছিলেন অন্যতম। ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী থানা, সালথা থানা, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় খাড়াদিয়ার আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে। বড়খাড়াদিয়ার নিকটবর্তী হিন্দু গ্রাম, যেমন- ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজিরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া প্রভৃতি গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। বাচ্চু রাজাকার এ সমস্ত এলাকার হিন্দুদের মালামাল লুট করে তাদের সর্বস্বান্ত করেন। অনেক হিন্দুকে বাচ্চু রাজাকার গুলি করে হত্যা করেন। হিন্দু মেয়েদের ধরে এনে তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছেন। সোনাদানা ও টাকা ফরিদপুর পাক আর্মি মেজরের কাছে জমা দেন বাচ্চু রাজাকার।

সেই বাচ্চু রাজাকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির একদিন আগে পালিয়ে যান। ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়টি হয় আসামির অনুপস্থিতিতে। বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আইন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে তারা প্রতিবেদন দিয়েছিল হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে সুইডেন চলে যান বাচ্চু রাজাকার। পরে আসেন পাকিস্তানে। পাকিস্তানের জামায়াত নেতাদের আশ্রয়ে ছিলেন তিনি।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us