
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১:৪২ অপরাহ্ণ
নিউইয়র্কে বহুল আলোচিত ১৮টি হোমকেয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিউইয়র্ক স্টেট স্বাস্থ্য দফতর থেকে ১০ মার্চ প্রেরিত নোটিশে চিকিৎসা-সেবা নিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর অভিপ্রায়ে বহুবিধ অনিয়ম, মিথ্যাচারের গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। নিজ বাসাতেই পুত্র-কন্যা, ভাই-বোনের কাছে থেকে সেবা গ্রহণের এই ব্যবস্থাটি সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ, অসুস্থ মা-বাবা, নানা-নানী, মামা-মামী, খালা-খালুকে সেবা প্রদানের বিনিময়ে বিপুল আয়ের সুযোগ রয়েছে। প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ২৩ ডলার করে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা থেকে ৬০ ঘন্টা পর্যন্ত কাজের বিল ড্র করছেন অন্তত: ৫০ হাজার প্রবাসীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আড়াই লাখ মানুষ। এই অর্থ ব্যয় করছে স্টেট স্বাস্থ্য দফতর। করোনাকালিন সময়ে এই হোমকেয়ার ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। গত ৩/৪ বছরে ব্যাঙের ছাতার মত শতাধিক হোমকেয়ার ব্যবসার আবির্ভাব ঘটেছে কম্যুনিটিতে। নিউইয়র্ক সিটির অলি-গলিতে এই ব্যবসার সাইন এবং তা প্রসারিত হয়েছে পৌণে চার শতাধিক মাইল দূর বাফেলো পর্যন্ত। এই ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কয়েক বছরের ব্যবধানে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন-যা কারোরই দৃষ্টি এড়ায়নি। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অবিশ্বাস্য অর্থ-বিত্তের দাপট কঠোর পরিশ্রমী এবং সচেতন প্রবাসীদের মধ্যেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর এমন অবস্থা শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেই নয়, অন্য কম্যুনিটিতেও। এহেন অবস্থায় নিউইয়র্ক স্টেট গভর্ণর ক্যাথি হোকুল হোমকেয়ার সার্ভিসের সকল কর্মকান্ড একটি সংস্থার কাছে ন্যাস্ত করেছেন। আর সেটি হচ্ছে ‘পাবলিক পার্টনারশিপ এলএলসি’ তথা পিপিএল। সিডিপ্যাপের Consumer Directed Personal Assistance Program (CDPAP) সেবা গ্রহিতা এবং সেবাদানকারিদের ২৮ মার্চের মধ্যে পিপিএল-এ নথিভুক্ত হতে হবে। পিপিএল-কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিরাজমান অব্যবস্থা-অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার অভিপ্রায়ে। আর এমন নির্দেশ জারির পরই অনিয়মের মাধ্যমে মোটা অর্থ উপার্জনকারিদের মাথায় বাজ পড়েছে। কারণ, এখোন তারা যা খুশী তাই করতে পারবেন না। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়োজিত ‘পিপিএল’ ঘন ঘন তদারকি করবে। সেলফোন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তারা জানবে যে সেবাদানকারি নির্দিষ্ট সময়ে রোগীর সাথে আছেন কিনা। এছাড়া, যারা পরিবারের সদস্য নন, তারা রোগীর বাসায় প্রবেশের সময় এবং নির্দ্ধারিত সময় অতিবাহিত হবার পর বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ার সময় নোট করতে হবে। এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টরা আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টেও দেন-দরবার করেছেন। স্টেট গভর্ণরসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে ‘পিপিএল’র পন্থা পরিহারের জন্যে চাপ সৃষ্টির চেষ্টাও করেছেন। এজন্যে মোটা অংকের অর্থ ব্যয়ের কথাও জানা গেছে। কিন্তু স্টেট গভর্ণর তার সিদ্ধান্ত থেকে বিন্দুমাত্র নড়েননি। এ অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ী টিভি-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, সাক্ষাতকারের মাধ্যমে এমন সব উদ্ভট যুক্তির অবতারণা করেছেন, যা বিদ্যমান আইনের পরিপন্থি। সত্যিকারের অসুস্থরা যাতে সঠিক সেবা পান এবং সেবাদাতারাও যাতে যথাযথ মর্যাদায় উচ্চ পারিশ্রমিক পান-সেজন্যে গভর্ণরের গৃহিত পদক্ষেপে কোন হেরফের না ঘটায় নিজেদের স্বার্থে জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রেরিত নোটিশে সকলকে এহেন মিথ্যাচার, অপপপ্রচারণা থেকে বিরত হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন যে, তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়, তাহলে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। স্বাস্থ্য দফতরের নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিডিপ্যাপে অংশগ্রহণকারিরা, সেবা প্রদানকারিরা কতিপয় হোমকেয়ার ব্যবসায়ীর মিথ্য্চাারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এমনকি, কেউ কেউ সেবা প্রদানকারিকে ন্যূনতম ৪০ ঘন্টা নার্সিং ট্রেনিংয়ের নামে ফি দাবি করছেন-যা পুরোপুরি অণ্যায়। এছাড়া, ট্রেনিংয়ের বিষয়টি সকলের জন্যে বাধ্যতামূলকও নয়। এ ধরনের নির্জলা মিথ্যাচারের জন্যে সংশ্লিষ্টরা অনুতাপ প্রকাশের পর তা থেকে বিরত না হলে কঠোর পন্থা অবলম্বন করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নোটিশে আরো উল্লেখ আছে,
কম্যুনিটির বহুল আলোচিত গোল্ডেন এ্যাজ হোমকেয়ার ইনক Golden Age Home Care Inc. (1826L001), সিএনটি হোমকেয়ার সার্ভিস CNT Homecare Services, LLC (2191L001)), আশা হোমকেয়ার Aasha Services Inc., d/b/a Aasha Home Care (2340L001),মার্কস হোমকেয়ার এজেন্সি Marks Home Care Agency (2654L001), বাংলা এলএইচসিএসএ হোমকেয়ার ইনক Bangla LHCSA Home Care Inc. (2348L001) সহ ১৮টি প্রতিষ্ঠানে নোটিশ প্রদানের তথ্য ফাঁস হবার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
নিউইয়র্কস্থ ‘কমিটেড হোমকেয়ার’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ এ প্রসঙ্গে এ সংবাদদাতাকে শনিবার বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই সকলকে সতর্ক করে বলে আসছিলাম যে, সিডিপ্যাপ থেকে পিসিএল-এ নিচ্ছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে-তা পুরোপুরি অনৈতিক কাজ। সিডিপ্যাপ হচ্ছে ফ্যামিলি মেম্বাররা করবে। কারণ, পরিবারের সদস্যরাই অসুস্থ হওয়া ব্যক্তিটির ব্যাপারে সবকিছু ভালো জানেন। তার কখন কী প্রয়োজন, সেটি ভালো জানেন তারা। এটা ডিজাইন করা হয়েছে পরিবারের লোকের সেবা পরিবারের মধ্য থেকে করার জন্যে। এজন্যে কোন নার্সিং সার্টিফিকেটেরও প্রয়োজন নেই। এজন্যে যারা পরিবারের সদস্য নন তারা সিডিপ্যাপের আওতায় আসতে পারেন না। একইভাবে পিসিএসরা Personal Care Services (PCS) ফ্যামিলি মেম্বার হতে পারবেন। পিসিএস-দের নার্সিং ট্রেনিং লাগে। এতদসত্বেও অনেকে ঢালাওভাবে মিথ্যাচার করে স্বাস্থ্য বিভাগের বিদ্যমান বিধি সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। নোটিশে আরো উল্লেখ আছে, নিজের স্বার্থে প্রচলিত আইনের পরিপন্থি উদ্ভট যুক্তির অবতারণা করে সংশ্লিষ্টরা নিউইয়র্ক স্টেট স্বাস্থ্য বিভাগের ১৮ এনওয়াইসিআরআর ৫০৫.১৪ (18 NYCRR 505.14.) বিধি লংঘন করেছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিপিএল’র এজেন্সি পাওয়া কমিটেড হোমকেয়ারের এমন পোস্টার চোখে পড়ছে প্রবাসীদের অভয় দেয়ার জন্যে। ছবি- এনওয়াইভয়েস২৪।
গিয়াস আহমেদ উল্লেখ করেন, ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে হোমকেয়ার ব্যবসা। এটা শুধু আমাদের কম্যুনিটি নয়, জুইশ, পাকিস্তানী, চায়নিজ, রাশিয়ান, স্প্যানিশ-সকল সম্প্রদায়েই। সিডিপ্যাপ বন্ধ করে পিপিএল এর আওতায় কেন নেয়া হয়েছে সমস্ত হোমকেয়ার-এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করলেই অনুমান করা সহজ যে, সিডিপ্যাপের আওতায় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকান্ড চলছিল। অনেকে ‘ধরাকে সরাজ্ঞান’ করতেন। অনেক রোগী বাংলাদেশে কিংবা অন্য কোন স্টেটে গেছেন অথবা ইন্তেকাল করেছেন, তাদেরকেও স্বাস্থ্যসেবার ভ’য়া বিল করা হচ্ছে। আবার উল্টোটাও ঘটেছে। সেবা প্রদানকারি হয়তো অবকাশ যাপনে বাংলাদেশে গেছেন কিংবা বাহামা, মায়ামি, কানাডা, ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনোদন ভ্রমণ করছেন, তাদেরকেও ফুলটাইম সেবক দেখিয়ে বিপুল অংকের অর্থ ড্র করা হচ্ছে। তারা মনে করতেন যে, যা খুশী তাই করবো-কর্তৃপক্ষ কিছুই জানবে না। এমন ধারণা যে সঠিক ছিল না তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে। বেশ কিছু সিডিপ্যাপ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার, জরিমানা করা হয়েছে। জেল প্রদানের ঘটনাও ঘটেছে।
পিপিএল’র অথরাইজড এজেন্ট কমিটেড হোমকেয়ারের ভাইস প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ আরো জানান, সিডিপ্যাপ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কোন প্রকার নাসিং সার্টিফিকেটন ছাড়া, বর্তমান ইন্স্যুরেন্স পরিবর্তন না করে আগের মতোই আপনার প্রিয়জনের সেবা দিতে পারবেন। এজন্যে আপনাকে সিডিপ্যাপ থেকে অন্য কোন প্রোগ্রামে যেতে হবে না। আমরা খুব সহজে ট্র্যান্সফার করে দিতে পারি। আপনার প্রিয়জনের সেবার মান যেন অটুট থাকে সে ব্যাপারে আমরা যত্নবান।
উল্লেখ্য, পিপিএল’র ট্র্যান্সফারের জন্যে সংশ্লিষ্টরা ৮৩৩-২৪৭-৫৩৪৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ‘কমিটেড হোমকেয়ার’ এর নাম বলতে হবে। ইতিমধ্যে, নিউইয়র্কের ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে পিপিএল’র এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশী ‘কমিটেড হোমকেয়ার’ও রয়েছে। সর্বশেষ সংবাদে আরো জানা গেছে, ‘আলাদিনের চেরাগ হাতে পাবার মত’ হঠাৎ কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যাওয়া হোমকেয়ার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক তদন্ত চলছে। শীঘ্রই তাদের মুখোশও উদঘাটিত হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে সর্বত্র।
প্রতিটি হোমকেয়ার প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করে প্রেরিত পৃথক পৃথক নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন হেলথ্ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম অফিসের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের পরিচালক ত্রিসা শেল-গাই এবং অফিস অব অ্যাজিং অ্যান্ড লং টার্ম কেয়ারের উপ-পরিচালক ভ্যালারি এ ডীটজ।
Posted ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24