
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ
সোনালী স্বপ্নে ভাসতে ভাসতে ২০২২ সালের জুনে কানাডায় আসার ঠিক আড়াই বছর পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে হতাশার সাগরে ভাসতে ভাসতে কানাডা ছাড়েন অ্যাশ দম্পতি। ছবি-সংগ্রহ।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং রন্ধন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের পর অ্যাশ হক বাংলাদেশ থেকে মালয়েষিয়ায় গিয়েছিলেন উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে। এরপর হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কাজের অভিপ্রায়ে অস্থায়ী আবাসন পারমিটে ২০১৮ সালে পর্তুগালে গিয়েছিলেন। করোনা মহামারিকালে অ্যাশ হক তার অস্থায়ী আবাসন পারমিট খোয়ান। সে সময়েই জানতে পারেন যে, কানাডায় শ্রমিক সংকট পূরণে অভিবাসী নেয়া হচ্ছে।
ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের একজন রেস্টুরেন্ট মালিক তাকে চাকরির অফার দেন। সে অনুযায়ী তার ওয়ার্ক পারমিটের স্পন্সরও করেন। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে অ্যাশ চৌধুরী কানাডায় পদার্পণ করেন। রেস্টুরেন্টের রাধুনী হিসেবে তিনি নিজেকে অত্যন্ত সক্ষম ভেবে এলাকাবাসীর সাথেও বন্ধুত্ব রচনা করেন। এভাবেই গত বছর আগস্টে তার স্ত্রী তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন কানাডাতেই। সেপ্টেম্বরে তারা কানাডার ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের আবেদন করেছিলেন কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্যে তাদের বসও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু কানাডা সরকার তা গ্রাহ্য করেনি। ফলে গত নভেম্বরে কানাডায় জন্মগ্রহণকারি সন্তানসহ অ্যাশ দম্পতি ফিরে গেছেন বাংলাদেশে। সে সময় ৩ সদস্যের এই পরিবারের বিমান-টিকিটের জন্যে টাকা ধার নেন তার গ্রীস প্রবাসী ভাই এবং জার্মানিতে বসবাসরত এক বন্ধুর কাছে থেকে। কানাডা সরকারের অভিবাসন প্রক্রিয়ার এহেন তামাশার কথা গভীর হতাশার সাথে অ্যাশ চৌধুরী (৩৬)ব্যক্ত করেছেন কানাডার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘দ্য স্টার’র কাছে। কারণ, ঢাকায় এখনো তিনি কোন কাজ খুঁজে পাননি। ‘আমি সবকিছু হারিয়েছি এবং সুন্দর ভবিষ্যতের যে স্বপ্ন লালন করতাম-তাও ফেলে এসেছি কানাডার অলি-গলিতেই। সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং সাবেক ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মার্ক মিলার আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন কানাডা থেকে’-উল্লেখ করেছেন অ্যাশ চৌধুরী। এ সময় তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আমি মিথ্যা কথা বলে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা কিংবা টাকার বিনিময়ে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ’য়া চাকরির অফারের পথেও হাটিনি। যা অনেক অভিবাসীই করছেন। ‘আমি পরিস্থিতির অসহায় শিকার। আমার মতো অসংখ্য দক্ষ অভিবাসীকে কানাডার নির্দয় আচরণের ভিকটিম হতে হচ্ছে। অথচ পর্তুগাল এবং ইউরোপে রাধুনির চাকরির অনেক সুযোগ ছিল -সেটিও কানাডার টোপে হারিয়েছি’-মন্তব্য অ্যাশ হকের। বলেন, ‘এখোন আমি ভাবছি আমি দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’।
বাংলাদেশী এই মেধাবি ও উদ্যমী রন্ধন শিল্পীর মতো শত-সহস্র অভিবাসন প্রত্যাশীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে বলে আদি কানায়িানরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা নিজেরাই কাজ পাচ্ছেন না, এ অবস্থায় বিদেশীদের ঠাঁই দেয়ার প্রয়োজন নেই বলে আওয়াজ উঠেছে। এ অবস্থায় কানাডা সরকারও অভিবাসন কোটার লাগাম টেনে ধরেছে। পর্যায়ক্রমিক এই অভিবাসন-কোটায় কাটছাটের পরিণতিতে শুধু রেস্টুরেন্ট কর্মীই নন, অন্য পেশার ওয়ার্ক পারমিট ধারিরাও তা নবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন না। সকলেই ভাবছেন যে, কানাডা তাদের সাথে প্রতারণা করছে। স্থায়ীভাবে বসবাসের টোপ দিয়ে কানাডায় নিয়ে এখোন ‘লাথি মেরে বের করছে’। এটা বেঈমানীর সামিল বলেও মূলধারার গণমাধ্যমে মতামত ব্যক্ত করা হচ্ছে। কানাডায় এহেন অবস্থা শুরু হয়েছে বছরখানেক আগে থেকে। কারণ, লিবারেল পার্টির সরকার অস্থায়ী ভিসার সংখ্যা কাটছাট শুরু করেছে। কানাডার সিটিজেনরা স্লোগান উঠিয়েছেন যে, অভিবাসীদের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে, আবাসন সমস্যা চরমে উঠেছে, বাড়ি-ঘরের দামও বেড়েছে। এ অবস্থার জন্যে দায়ী করা হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। জানা গেছে, বার্ষিক অভিবাসনের (স্থায়ীভাবে বসবাস) কোটা ২০২৫ সালে ২০% কমিয়ে ৩৯৫ হাজার করা হয়েছে। একইভাবে ২০২৬ সালে ৩৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালের কোটা করা হয়েছে ৩৬৫ হাজার। এভাবেই জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভের পরিসমাপ্তির উদ্যোগে অস্থায়ী ভিসা নবায়নের সুয্গো ক্ষিণ হচ্ছে।
Posted ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24