গ্রীণকার্ডধারীদের জন্যে সতর্কতা

সেলফোন-ল্যাপটপ পরীক্ষা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারপোর্টে

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সেলফোন-ল্যাপটপ পরীক্ষা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারপোর্টে

এয়ারপোর্ট, সীমান্ত এবং নৌ-পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারিদের সেলফোন, ল্যাপটপসহ সব ধরনের ডিজিটাল সামগ্রি পরখ করা হচ্ছে। ভিসাধারি, গ্রীণকার্ডধারীগণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন মতামত, অভিমত অথবা মন্তব্য দেখা গেলে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ তালিকার কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক থাকলে, বা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশসমূহের বিরুদ্ধেও হিংসাত্মক কোন মতামত বা ছবি থাকলে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ভিসাধারী, এমনকি গ্রীণকার্ডধারীকেও ফিরিয়ে দিচ্ছেন নিজ দেশে। গ্রীণকার্ডধারীরা টানা ১৮০ দিনের বেশী বিদেশে অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট, সীমান্ত ফাঁড়ি কিংবা সমুদ্র বন্দরে প্রচন্ড রকমের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন। সিবিপি জানতে চাচ্ছেন কেন তারা এতদিন বিদেশে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কেন তারা ফিরতে চাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ট্যাক্স প্রদান করেছেন কিনা, বাড়ির মালিক কিনা অথবা কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি তথ্য ও ডক্যুমেন্ট। এমনকি কোন গ্রীণকার্ডধারী যদি ফেডারেল সরকারের মঞ্জুরির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন বলে জানতে পারে তাহলে তাকে আর ঢুকতে দিচ্ছে না। সোজা নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহে এয়ারপোর্ট, সীমান্ত থেকে বেশ কিছু বিদেশীকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনায় এক ধরনের আতংক তৈরী হয়েছে অভিবাসন সমাজে। ইমিগ্রেশনে অভিজ্ঞ এটর্নীরা তার গ্রীণকার্ডধারী ক্লায়েন্টদের পরামর্শ দিচ্ছেন পারতপক্ষে বিদেশে না যেতে। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন অভিবাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এটর্নীরা আরো পরামর্শ দিচ্ছেন যে, তার মক্কেলরা যেন কম্পিউটার, সেলফোনে এমন কিছু না রাখেন, এমনকি ইমেলেও এমন কিছু না থাকে, যা দেখলেই সিবিপি এজেন্টরা তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে প্রবৃত্ত হয়। হুয়্যাটসঅ্যাপ, টেক্সট-কথোপকথন ইত্যাদিতেও এমন কিছু যাতে না থাকে-সে পরামর্শও দিচ্ছেন। কারণ, যখোনই কোন যাত্রীকে পরখ অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পৃথক কক্ষে নেয়া হচ্ছে, তখোনই এসব ডিভাইস যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তাই বিব্রতকর কোন পরিস্থিতি এড়াতে ডিভাইসগুলো পুরোপুরি ক্লিন রাখাই শ্রেয় বলে মন্তব্য এটর্নীরা।

এহেন অবস্থার কঠোর সমালোচনা করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এধরনের আচরণে সিবিপি যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী লংঘন করছে। সেই সংশোধনী অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে তল্লাশী অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আদালতের অনুমতি লাগবে। এ ধরনের বক্তব্য খন্ডন করে সিবিপি অবশ্য গণমাধ্যমে বলেছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এসব করার এখতিয়ার রাখেন।

উল্লেখ্য, ফ্রেঞ্চের এক গবেষক যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনফারেন্সে আসছিলেন অস্থায়ী ভিসা নিয়ে। গত সপ্তাহে তাকে টেক্সাসের হিউস্টন এয়ারপোর্টে থামিয়ে দেয়া হয়। কারণ, তিনি নিজ দেশে অবস্থানকালে প্রেসিডেন্ট টাম্পের অনেক পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং তার কম্প্যুটারেও সে সব পাওয়া গেছে। একইভাবে রোড আইল্যান্ড স্টেটে অবস্থিত ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. রাশা আলাওয়ি ছিলেন এইচ-ওয়ানবি ভিসাধারী। ফিরছিলেন নিজ দেশ লেবানন থেকে। তাকে বস্টনের লগোন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোার্টে থামিয়ে দেয়া হয়। কারণ, তার ফোনে ছিল হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ্’র ছবি এবং তিনি লেবাননে নাসরাল্লাহ্’র জানাযায়ও অংশ নিয়েছিলেন।

এ ধরনের তল্লাশী সম্পর্কে সিবিপি তার ওয়েবসাইটে ক্রমবর্দ্ধমান ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের নানা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে যে কোন ব্যক্তির ফোন ও ল্যাপটপ পরখের এখতিয়ার রয়েছে সিবিপির এবং এটা করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে। উল্লেখ্য, সিবিপি হচ্ছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা। সিবিপি অফিসারেরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ক্যামেরাসহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস পরীক্ষার পর যে কোন প্যাসেঞ্জার গতি রোধের ক্ষমতা রাখেন এবং সেই ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার রোধ করতেও পারেন। কারণ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরুপ অথবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে জড়িত বলে সন্দেহভাজন-তাদের যুক্তরাষ্ট্রে কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি আগে যারা জাল ভিসার সাথে জড়িত ছিলেন কিংবা শিশু-আদম পাচার চক্রের সাথে সম্পৃক্ত, মাদক পাচারকারি ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্তরাও বারিত হচ্ছেন এয়ারপোর্টে।

সিবিপির ওয়েবসাইট অনুযায়ী নানাবিধ কারণে যে সব প্যাসেঞ্জারকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের ডিভাইসই পুংখানুপুঙ্খভাবে তল্লাশী করা হয়।

এদিকে, সিবিপির এহেন প্রক্রিয়া অবলম্বনের সংবাদ জেনে নিউজিল্যান্ড, জার্মানী এবং যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আসতে আগ্রহীরা যেন সবকিছু নিশ্চিত হয়েই রওয়ানা দেন-সে বার্তা রয়েছে ঐ ভ্রমণ সতর্কতায়। নিউইয়র্কের খ্যাতনামা ইমিগ্রেশন এটর্নী নরেশ গেহি এবং এটর্নী মঈন চৌধুরি পৃথকভাবে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন মূলত: বিদ্যমান আইনের অপব্যবহার করছেন। যারা কখনোই কোন অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না, তাদেরকেও আদালতের নির্দেশ ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশী এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের পরিপন্থি। কারণ, মাননীয় আদালতের এখতিয়ার রয়েছে কে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন, কে পারবেন না তা নির্দ্ধারণের। বিচার বিভাগের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে ট্রাম্প প্রশাসন আইনের অপপ্রয়োগ ঘটাচ্ছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us