নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ২:০৪ অপরাহ্ণ
নিউইয়র্কে ২০ বছর যাবত ট্র্যাভেল ব্যবসা করে আসা ‘ডিজিটাল ট্রাভেলস এস্টোরিয়া’র প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড সিইও এবং আটাব’র সিনিয়র নির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এবারের মত মন্দা কখনোই হয়নি। গত বছরের তুলনায় ৯০% কম টিকিট বিক্রি করেছি। আমি শুধুমাত্র নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ রুটে টিকিট বিক্রি করি বিধায় মহাসংকটে পড়েছি এবার। মৃদুভাষী নজরুল ইসলাম বললেন, বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনে ইচ্ছুক প্রবাসীগণের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছেন দেশের স্বজনেরা। তারা জানিয়েছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। সর্বত্র সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। অভিভাবকেরা বলছেন, ডোন্ট কাম নাউ। এমন কথা আমার অনেক কাস্টমার জানাচ্ছেন। তারাও বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি অবাধে চলছে। এখোন ফোন করলেও পুলিশ আসে না। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিত বিপদে কে ঝাঁপ দেবেন? নজরুল ইসলাম উল্লেখ করলেন, আমার মত প্রায় প্রতিটি ট্রাভেল ব্যবসায়ীই পরিস্থিতির ভিকটিম হয়েছেন। আশা করছি এহেন অবস্থার দ্রুত অবসান ঘটবে।
গতবছরের ঈদুল ফিতরের সাথে তুলনা করলে এবার আপনার ব্যবসার অবস্থা কী, জবাবে নজরুল ইসলাম বললেন, মাসে গড়পরতা ৩ লাখ ডলারের অধিক ব্যবসা করি। গতবছর মার্চে বিক্রি করেছি ৩১৭টি টিকিট। এবার মার্চে বিক্রি হলো মাত্র ৫৭টি। এ অবস্থায় কীভাবে চলবো-বুঝতে পারছি না। এর আগে বাংলাদেশে নানা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তবুও এমন অবস্থা দেখিনি।
ঈদ উপলক্ষে ২৪ মার্চ কথা হচ্ছিল সিলেটের মৌলভীবাজারের সন্তান এবং নিষ্ঠার সাথে ট্রাভেল ব্যবসায়ীর পরিচিতি অর্জনকারি নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি আরো বললেন, এখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাংলাদেশে যাচ্ছেন না। আবার আমেরিকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রীণকার্ডধারীরাও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি এবং গ্রেফতার ও বহিষ্কার আতংকে তটস্থ গোটা কম্যুনিটি। ইতিমধ্যেই ওয়ার্ক পারমিট কিংবা গ্রীণকার্ড থাকা লোকজনকেও গ্রেফতারের সংবাদ পাচ্ছি। নিজ দেশ থেকে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট বা সীমান্ত ফাঁড়িতে গ্রীণকার্ডধারী এবং ভিসাধারীদেরকেও থামানো হচ্ছে। দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কয়েকজনকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বিশ্বের দু’প্রান্তে অসম অর্থনীতির দুটি দেশে প্রায় একই ধরনের উদ্ভট পরিস্থিতির অসহায় বলি হচ্ছি আমরা কঠোর পরিশ্রমী প্রবাসীরা। এমন নাজুক পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশীদের জন্যেই নয়, সকল কম্যুনিটিতেই। চলতি পথে প্রিয়-পরিচিত অনেক মানুষ আর দেখছি না। ট্রাম্পের গ্রেফতার-বহিষ্কার আতংকে অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন ঠিকানা পাল্টিয়ে। প্রিয়-পরিচিত ঠিকানা এখন অনেকের জন্যে কাল হয়ে পড়েছে।

কাস্টমারের সাথে নজরুল ইসলাম। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।
নিউইয়র্কে ট্রাভেল ব্যবসায় এখনো চলছে প্রতারণা-ধাপ্পাবাজি। গণমাধ্যমে ‘বিশাল সেল’ এবং অবিশ্বাস্য রকমের কম দাম উল্লেখ করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমন টোপে যারাই পা দিচ্ছেন তারা প্রতারিত হচ্ছেন, ঠকছেন। যখনই ঐসব ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে যাচ্ছেন প্রবাসীরা, তখন নানা অজুহাতে টিকিটের প্রকৃত মূল্য আদায় করছেন। এহেন অপকর্মে লিপ্ত ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ জানতে পারছি যে, এয়ারপোর্টে গিয়ে কোন ঝামেলায় পড়লে অথবা গন্তব্য বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় টিকিটের কনফার্মেশন নেই জানা কাস্টমারদের ফোনও ধরতে চায় না ঐসব ব্যবসায়ী। প্যাসেঞ্জাররা আমার কাছে আরো জানিয়েছেন, কখনো টেলিফোন ঐসব ট্রাভেল ব্যবসায়ীকে পাওয়া গেলেও কনফার্মেশনের জন্যে পুনরায় টাকা চান। সেটিও অবিশ্বাস্য রকমের। এভাবে যারা নিষ্ঠার সাথে কাজ করছি তারা পড়েছি মহাসংকটে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ভাসছি আমরা।
এছাড়া, নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে চলাচলকারি ফ্লাইটের সংখ্যাও কমেছে। আগে ১১/১২টি এয়ারলাইন্স চলাচল করতো। এখন মাত্র ৩/৪টি। আগে কুয়েত এয়ারওয়েজের ছিল সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট। এখন মাত্র ৪টি। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ৫টা ছিল, এখন দুটি। কাতার এয়ারওয়েজের ছিল ৪টি, এখন দুটি ফ্লাইট। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের থাকলেও না থাকার মতোই। কারণ তার অধিকাংশ প্যাসেঞ্জারই ভিনদেশী। সৌদি এয়ারলাইন্সে মানুষ যেতে চান না, কারণ, ট্র্যাঞ্জিট ১০ ঘন্টার মত। সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে নজরুল ইসলাম আরো জানান, আগে বাঙালি মার্কেট ছিল ৩৪/৩৫ মিলিয়ন ডলারের। এখন কম্যুনিটি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ৭৬ মিলিয়ন ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ একদিকে মানুষ বেড়েছে, অপরদিকে ফ্লাইটের সংখ্যা কমেছে। এ অবস্থায় কোন কোন গণমাধ্যমে ৪৯৯ ডলার এবং ৬৯৯ ডলার টিকিটের মূল্য উল্লেখ করে বিজ্ঞাপণ প্রকাশিত হচ্ছে। ‘বিশাল সেল’ উল্লেখ করা হচ্ছে। এই ‘সেল’ (মূল্যহ্রাস) জিনিষটা অনেকের মাথায় ঢুকে গেছে। নজরুল উদাহরণ হিসেবে জানালেন, দু’মাস আগে আমার কাস্টমারকে কুয়েত এয়ারওয়েজের রাউন্ট ট্রিপ টিকিটের মূল্য জানিয়েছিলাম ১১৭৬ ডলার। তখোন ঐ কাস্টমার বলেছিলেন যে, এখোন নেব না। ‘সেল’ আসলে নেব। আর সেই কুয়েত এয়ারওয়েজের টিকিট এখোন ১৪৫২ ডলার এবং সেই দরেই ক্রয় করলেন সেই কাস্টমার। এভাবে আর কদিন পর হয়ে যাবে ১৭০০/১৮০০ ডলার। সেলের অপেক্ষায় থেকে অনেক কাস্টমারই চড়ামূল্যে টিকিট ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই আমি প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যারা আসন্ন গ্রীষ্মে দেশে যাবেন তারান এখনই টিকিট ক্রয় করুন। ‘সেল’র আশায় থেকে আরো অনেক বেশী দামে টিকিট ক্রয়ের মত ঝুঁকি নেবেন না। কারণ, ‘সেল’ আর আসবে না।

Posted ২:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24