হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানলেও কিছু করতে পারেনি ভারত: জয়শঙ্কর

অনলাইন ডেস্ক   প্রিন্ট
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানলেও কিছু করতে পারেনি ভারত: জয়শঙ্কর

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে একটি গণঅভ্যুত্থান তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়টি ভারত সরকার আগেই জানত বলে দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় পরামর্শক কমিটিকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

তিনি বলেছেন, আগে থেকে জানতে পারলেও এ বিষয়ে বিশেষ ‘কিছু করার মত অবস্থানে’ ভারত ছিল না, কারণ শেখ হাসিনার ওপর তাদের ‘যথেষ্ট প্রভাব ছিল না’ এবং তাকে কেবল ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সুযোগ ছিল।

ছাত্র জনতার সেই প্রবল আন্দোলনেই গত বছরের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান; এখনো সেখানেই আছেন তিনি।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দু লিখেছে শনিবার পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি হন জয়শঙ্কর। তিনি ইঙ্গিত দেন, আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মত ভারতও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফোলকার টুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ফলকার টুর্ক সম্প্রতি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল, যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।

হিন্দু লিখেছে, জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এই আলোচনায় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি প্রাধান্য পায়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি রয়ে গেছে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় বিষয়টিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগের সূচনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

তবে আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর সেরে ফেলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ মাসের শেষে যাচ্ছেন চীন সফরে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান সংযোগ বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সে সময় স্বাক্ষরিত হতে পারে।

হিন্দু লিখেছে, পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সামনে জয়শঙ্কর বাংলাদেশে ‘বহিঃ শক্তির’ ভূমিকার কথাও বলেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, চীন “প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও শত্রু নয়।”

দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ভবিষ্যত নিয়েও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সঙ্গে জয়শঙ্করের কথা হয়।

সার্কের সবশেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এরপর ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও ওই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর উরি হামলার পর ভারত সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাতে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর থেকে ভারত বিমসটেকের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অধ্যাপক ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার তাগিদ দিয়ে আসছেন।

হিন্দু লিখেছে, পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, সার্ক ‘পুরোপুরি বাতিল হয়নি’, আপাতত ‘থমকে’ আছে।

সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বৈঠকে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর ‘ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আগামী এক দশকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য ভারত কী পরিকল্পনা নিয়েছে তা জানতে চান।

মিয়ানমারে চলমান সংঘাত নিয়েও জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়। এই সংঘাতের কী প্রভাব ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওপর পড়ছে, সে বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

Facebook Comments Box

Posted ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

.

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us