বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ লাখো বিদেশির যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হবার উপক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ২:০২ অপরাহ্ণ

বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ লাখো বিদেশির যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হবার উপক্রম

জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার অভিপ্রায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারি এবং রিফ্যুজি হিসেবে গ্রীণকার্ড আবেদনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্যে। এরফলে কয়েক হাজার বাংলাদেশীসহ ১০ লাখের অধিক বিদেশীর নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে চলেছে। কারণ, এমন আদেশ রদ না হলে চলমান অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযান থেকে এসব আবেদনকারি রেহাই পাবেন বলে অভিজ্ঞজনেরা মন্তব্য করেছেন। অভিবাসন দফতরের অভিভাবক ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়’র মুখপাত্র গণমাধ্যমে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়া অনেক সন্ত্রাসী, খুনী, দাগী আসামী, মাদক পাচারকারি, ধর্ষণকারি আমাদের সমাজে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। এসব অবৈধ অভিবাসীর অনেকে ইতিমধ্যেই নীরিহ মানুষকে হত্যা করেছে। চুরি-ছিনতাই-রাহাজানির সাথেও জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে। এমন যুক্তিকে অবান্তর হিসেবে অভিহিত করে ‘ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন জাস্টিস সেন্টার’র পরিচালক আযাদেহ ইরফানি বলেছেন, সকল অভিবাসীকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্প প্রশাসন ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে-যা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি। ‘এরফলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীগণের স্বাভাবিক অপেক্ষার সময় ৮ থেকে ১০ মাসের চেয়ে অনেক বাড়বে। এভাবে তারা ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানের শিকারও হতে পারেন। যদিও ট্রাম্প অঙ্গিকার করেছেন যে, কেবলমাত্র গুরুতর অপরাধী অবৈধ অভিবাসীরাও তার টার্গেট। কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেক গ্রীণকার্ডধারী এবং ভিসাধারিকেও গ্রেফতারের পর বহিষ্কার করা হয়েছে। গাজায় আগ্রাসের নিন্দা ও প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রীণকার্ডধারী স্টুডেন্টসহ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ছাড়াও ইতিমধ্যেই ৩ শতাধিক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের ভিসা বাতিলের তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো।

এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে অর্থাৎ বাইডেনের শেষ সময়ে ৭৬ হাজার ৮০০ বিদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। একইসময়ে রিফ্যুজি হিসেবে গ্রীণকার্ডের আবেদন করেছেন ৪০ হাজার বিদেশী। এগুলো শুনানীর অপেক্ষায় ছিল। এখোন তা অনির্দিষ্টকালের জন্যে ঝুলে গেল। এর আগের পেন্ডিং লাখ লাখ আবেদনের ভাগ্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়লো বলে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ সার্ভিসের কর্মকর্তারা ২৮ মার্চ এ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশীও আছেন-যারা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল অথবা এলডিপির কর্মী-সংগঠক হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। এবং জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী ঘরানার অনেক নেতা-কর্মীও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তাদের ভাগ্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশংকা তৈরী হয়েছে বলে এটর্নীরা উল্লেখ করেছেন। যদিও ট্রাম্পের এসব আদেশকে অমানবিক হিসেবে অভিহিত করে মানবাধিকার ও অভিবাসনদের অধিকার-মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে বলে সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে।

এদিকে, ইউএসসিআইএস সূত্রে জানা গেছে, গ্রীণকার্ডধারীদেরকেও গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিটিজেনশিপের আবেদনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বিদ্যমান সকল রীতি উপেক্ষা করে এহেন বহিষ্কারের পন্থা অবলম্বন করায় গ্রীণকার্ডধারিদের মধ্যে সিটিজেনশিপের আবেদনের হিড়িক পড়েছে। জানা গেছে, বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীণকার্ডধারীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের বেশী। আর গ্রীণকার্ড পাবার অর্থই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের আইনগত অধিকার পাওয়া। গ্রীণকার্ডধারীকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের বিধি আছে যদি তারা গুরুতর কোন অপরাধে দন্ডিত হয়, তাহলে সেই দন্ডিত ব্যক্তির গ্রীণকার্ড কেড়ে নেয়া হয়। এবং কেড়ে নেয়ার নির্দেশটি জারি করেন একজন ইমিগ্রেশন জজ। একইভাবে গুরুতর কোন অপরাধে লিপ্ত ন্যাচারালাইজড সিটিজেনের সিটিজেনশিপও বাতিলের বিধি রয়েছে, তবে সেটি খুব কম সময়েই ঘটে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষাঙ্গনে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভকারিদেরকেও টার্গেট করেছে-যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চললেও ধর-পাকড় এবং ভিসা বাতিলের উদ্যোগ থেকে বিন্দুমাত্র পিছ পা হয়নি ইমিগ্রেশন বিভাগ। সরকারী সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রীণকার্ডধারী ১৩ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে অন্তত: ১০.৮ মিলিয়ন তথা এক কোটি ৮ লাখের মতোই সিটিজেনশিপের আবেদনের যোগ্য। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী বাস করছে আরিজোনা স্টেটে-১৯৩০০০।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us