নিউইয়র্কে বিশ্বজিতের রেমিট্যান্স ফেয়ার প্রতিহত করার হুমকি

অনলাইন ডেস্ক   প্রিন্ট
রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৫:৩০ অপরাহ্ণ

নিউইয়র্কে বিশ্বজিতের রেমিট্যান্স ফেয়ার প্রতিহত করার হুমকি

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।

নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলো ১৯ ও ২০ এপ্রিল নিউইয়র্কে পতিত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তির কথিত রেমিট্যান্স ফেয়ারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুরের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের সংবাদ জেনে। নিউইয়র্ক সিটির একটি রেস্টুরেন্টের পার্টি হলে অনুষ্ঠিতব্য এ ফেয়ারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ড. হাবিবুর রহমান এবং পরিচালক মনোয়ারউদ্দিনসহ বেশ কটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিরাও আসবেন বলে আয়োজকরা প্রচারের পরই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমন্বয়কারি হাসান সিদ্দিক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কথিত রেমিট্যান্স ফেয়ারে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর সহ পদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তারা যোগদান থেকে বিরত না হন তাহলে সচেতন দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা তাদের রুখে দিতে বাধ্য হবেন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সমন্বয়কারি আব্দুল কাদের বলেন, নিউইয়র্কের কন্সাল জেনারেল, জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সমীপে আহবান রাখছি ফ্যাসিস্ট’র দোসর ঘোষিত কথিত রেমিট্যান্স ফেয়ার বন্ধ করার জন্যে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অতিথি হিসেবে আসছেন বলে বেশ কটি ব্যাংক মোটা অর্থ অনুদান হিসেবে (স্পন্সরশিপ) দিচ্ছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপবব্যবহার করা হচ্ছে। কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর মুক্তধারা নামক একটি অর্গানাইজেশন রোড শো, ট্রেড ফেয়ার, রেমিট্যান্স ফেয়ারসহ নানা নামে অনুষ্ঠানের আড়ালে বাংলাদেশের অর্থ এদেশে পাচার করছে। কাদের আরো উল্লেখ করেন, কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থের বড় একটি অংশ আমরাই বাংলাদেশে পাঠাচ্ছি। অথচ আমরা রেমিট্যান্স ফেয়ারের কোন তথ্যই জানতে পারিনা। কারণ, এটি কোন ফেয়ার নয়, কিছু অসাধু আমলার বিলাসী ভ্রমণের অবলম্বন এবং কিছু দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তির অর্থ পাচারের অন্যতম বাহন।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান অতিথি ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমাস অ্যান্ড ইন্ডার্স্ট্রি’ ও ‘জেবিবিএ’র (জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন)প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, স্বৈরাচারের ১৫ বছরই এ ধরনের রেমিট্যান্স ফেয়ারের আড়ালে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচারের পাশাপাশি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্দ্ধরকেরা নিউইয়র্কে এসে বিলাসী সময় কাটাতেন। গতবছরও অবাক বিস্ময়ে আমরা অবলোকন করেছি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘে যোগদানকালে ঐ একই চক্র রেমিট্যান্স ফেয়ারের নামে তামশা করেছে। ফেয়ারের মূলপর্বে বক্তা ছিলেন ১০ জন, আর দর্শক ছিলেন মাত্র ৫ জন। এভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরেরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার নীল নক্সা অনুযায়ী এহেন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪।

সংবাদ সম্মেলনে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান এবং আইবিটিভির সিইও জাকারিয়া মাসুদ জিকু অভিযোগ করেন, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈকট্য লাভকারি রেমিট্যান্স ফেয়ারের আয়োজক বিম্বজিৎ সাহা বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের লুটেরা শ্রেণীর সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অন্যতম অবলম্বন হিসেবে এ ধরনের রেমিট্যান্স ফেয়ারের নামে প্রহসন করেছেন। স্বৈরাচারের পতন ঘটার পরও একইধারায় বিশ্বজিৎ সাহার রেমিট্যান্স ফেয়ারের তামশা চলছে।

এ সময় কথিত রেমিট্যান্স ফেয়ার বন্ধ করা না হলে নিউইয়র্কের প্রবাসীদের নিয়ে তা প্রতিহত করার সংকল্প ব্যক্ত করেন সমন্বয়কারি ফরহাদ হোসেন, তানজিদ আহমেদ, নাসির হোসেন, মামুনুর রশীদ ও দেলোয়ার শিপন। সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ মোস্তফা আল আমিন রাসেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ এবং মনিরুল ইসলামও কথা বলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয় যে, রেমিট্যান্স ফেয়ারের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘সানাই পার্টি’ হলকে। সেটির ধারণ ক্ষমতা ১৮০ জনের। সেখানে প্রবাসীদের প্রবেশাধিকার অবারিত করা হলে কোন রেমিট্যান্স কোম্পানীর স্টল বসানো সম্ভব হবে না। আবার ৮/১০ স্টল বসানো হলে কোন আলোচনা অনুষ্ঠানের সুযোগ হবে না। এমনি একটি জায়গায় সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রনী ব্যাংক, আইএফআইসি-সহ ডজনখানেক ব্যাংকের স্টল দেয়া হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। অর্থাৎ এগুলো কেবলই কাগুজে প্রচারণা। বাস্তবে কিছুই থাকেনি গত কবছরের রেমিট্যান্স ফেয়ারে। সাধারণ প্রবাসীরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যা হয়েছে এখনো যদি তাই ঘটতে থাকে-তাহলে এত রক্তপাতের প্রয়োজন ছিল কী।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ প্রত্যাখান করে বিশ্বজিৎ সাহা এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, বাংলাদেশ-ইউএসএ চেম্বা র অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ডা. জিয়াউদ্দিন  আহমেদ এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়হানুল ইসলামের নেতৃত্বে গত চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে বৈধভাবে রেমিট্যান্স প্রেরণের পক্ষে কাজ করে আসছে।

বিশ্নবজিৎ উল্লেখ করেন,  নতুন  বাংলাদেশ বিনির্মাণে গত অক্টোবরে তৃতীয় রেমিট্যান্স ফেয়ার সাফল্যের সাথে করেছি। এবং গত নভেম্বর থেকে আমেরিকা বৈধ রেমিট্যান্স প্রেরণে সারাবিশ্বের প্রধান দেশ হিসেবে অবস্থান করছে। বিশ্বজিৎ সাহাকে ব্যক্তি হিসেবে আক্রমণ করা খুব সহজ। কিন্তু বিশ্বজিৎ সাহা ১৯৯২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত গত ৩৪ বছরে বাংলাদেশকে আমেরিকায় সাহিত্যত, সংস্কৃতি, বাণিজ্যিকভাবে তুলে ধরতে যেসব কাজ করেছেন তা দেখলে প্রতিয়মান হবে কোন বিশেষ সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখে কাজ করেননি। যখোনই যে সরকার ক্ষমতায় ছিলো সে সরকারের সাথে বাংলাদেশকে আরো উজ্জ্বল করার অভিপ্রায়ে কাজ করেছে বিশ্বজিৎ সাহার সম্পৃক্ত থাকা সংগঠনসমূহ। সর্বশেষ চলতি বছরও নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে একটি রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে যা বাংলাদেশ নতুন বছরকে বার্ষিক ক্যালেন্ডারে স্থান করতে সক্ষম হচ্ছে।

Facebook Comments Box

Posted ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us