যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবারো ট্রাম্প-বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবারো ট্রাম্প-বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বৈরাচারি আচরণের প্রতিবাদ রাজপথে। ছবি-সংগ্রহ।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপসমূহে ক্ষুব্ধ-বিরক্ত আমেরিকানরা শনিবার আবারো রাজপথে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে এটি হচ্ছে সংঘবদ্ধ দ্বিতীয় বিক্ষোভ এবং এতে ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার, অথ্যাচারি শাসক এবং গণতন্ত্রের ঘাতক হিসেবে অভিহিত করে নানা স্লোগান দেয়া হয়। ‘ট্রাম্প-মুক্ত বিশ্ব চাই’, ‘ট্রাম্প হলেন মানবতার লজ্জা’, ‘ট্রাম্পের রাম-রাজত্বের অবসান চাই’ ইত্যাদি লেখা প্লেকার্ড ছিল বিক্ষোভ-মিছিলে অংশগ্রহণকারিগণের হাতে। ৫ এপ্রিলের কর্মসূচির চেয়ে শনিবারের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সংখ্য্গাত দিক কিছুটা কম হলেও ট্রাম্পের আচরণে ত্যক্ত-বিরক্ত সববয়েসি মানুষই ছিলেন। বিশেষ একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে অংশগ্রহণকারির মধ্যে শ্বেতাঙ্গ সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যাই ছিল বেশী।

‘ন্যাশনাল ডে অব প্রটেস্ট’র অধীনে ‘৫০৫০১’ নামে পরিচিত এই কর্মসূচির অর্থ হচ্ছে- ‘৫০টি বিক্ষোভ, ৫০টি অঙ্গরাজ্য, ১টি আন্দোলন’। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্যে বিপ্লবী যুদ্ধ শুরুর ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, জাতিসংঘের শহর ম্যানহাটান, সংবিধান-তৈরীর শহর ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, ডালাস, হিউস্টন, ডেট্রয়েট, আটলান্টা, মায়ামি, ওরেগণ, ফিনিক্স, শিকাগো, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, সানফ্রান্সিসকো-সহ ৪ শতাধিক সিটিতে।
হোয়াইট হাউস ও টেসলা ডিলারদের শোরুমের বাইরে এবং অনেক শহরের প্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন। ভুল করে এল সালভাদরে পাঠানো আব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান অনেকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বৈরাচারি আচরণের প্রতিবাদ রাজপথে। ছবি-সংগ্রহ।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এপ্রিলের শুরুতে ‘হ্যান্ডস অফ’ নামের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাগম হয় । ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে বলে জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শনিবারের এই কর্মসূচিতে ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা। সরকারি চাকরিতে ছাঁটাই এবং ব্যয় কমাতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডোজ) নেওয়া উদ্যোগ এবং এল সালভাদরের নাগরিক আব্রেগো গার্সিয়াকে নির্বাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনাগ্রহের বিষয়গুলো রয়েছে এর মধ্যে। এমনকি, গ্রীণকার্ডধারী ও সিটিজেনদেরকেও গ্রেফতার-হয়রানি-বহিষ্কারের মত বর্বরতারও বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জানানো হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বৈরাচারি আচরণের প্রতিবাদ রাজপথে। ছবি-সংগ্রহ।

বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলো ছিল মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য সুহাস সুব্রহ্মণ্যমের এক্স পোস্টের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ভিড়ের মধ্য দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে রাগান্বিত অবস্থায় সুহাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।

ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ শুরুর বার্ষিকীতে ‘নো কিংস’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন অনেক বিক্ষোভকারী। ম্যাসাচুসেটসে লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধ এবং পল রেভারের বিখ্যাত ঘোড়ায় চড়ার স্মৃতির স্মরণে লোকজন সেভাবেই সেজেছিলেন। ক্ষুব্ধ প্রবীন এক আমেরিকান বলেন, “স্বাধীনতার প্রশ্নে আমেরিকায় এখন খুব বিপজ্জনক সময়। আমি চেয়েছিলাম ছেলেরা এই দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানুক এবং কখনও কখনও যে স্বাধীনতার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে তা শিখুক।”

গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চলতি মেয়াদের প্রথম প্রান্তিকের পরিস্থিতি নিয়ে ৪৫ শতাংশ ভোটার সন্তুষ্ট, যেখানে তার প্রথম মেয়াদের একই সময়ে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বৈরাচারি আচরণের প্রতিবাদ রাজপথে। ছবি-সংগ্রহ।

ট্রাম্পের আগের মেয়াদের চেয়ে জনসমর্থন খানিকটা বেশি হলেও তা ১৯৫২ থেকে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের প্রেসিডেন্টদের গড় সমর্থনের (৬০ শতাংশ) চেয়ে কম। এই রিপাবলিকানের জনপ্রিয়তা কমছে বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে যখন অর্থনীতির বিষয়গুলো আসে। গ্যালাপের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন তার জনসমর্থন ছিল ৪৭ শতাংশ। রয়টার্স/ইপসোস এর সাম্প্রতিক জরিপেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার সময় ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন থাকলেও তা এখন ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তার অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে এখন ৩৭ শতাংশের সমর্থন আছে, যা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ছিল ৪২ শতাংশ। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এ মাসের শুরুতে অর্থাৎ ৫ এপ্রিল দেশজুড়ে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। ওই বিক্ষোভে কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

Facebook Comments Box

Posted ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us