
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ
স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভবন।
বহির্বিশ্বে মার্কিন মূল্যবোধ, গতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসনের ধারা বইয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে বহুবছর যাবত কর্মরত দফতরসমূহের বিলুপ্তির পাশাপাশি উগ্রপন্থি রাজনৈতিক নীতির প্রসারে নিয়োজিত কর্মকর্তাগণকে ছাটাইয়ের পরিকল্পনা উস্থাপনা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো। মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল উপস্থাপিত এ পরিকল্পনায় অকারণ ব্যয়ের পরিধিও সংকোচিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মার্কো রুবিয়ো। ক’টনীতিক তৎপরতার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাবাড়ে লিপ্ত কর্মকর্তার বহরও ছোট করা, এমনকি বেশ কটি দেশের কন্স্যুলেট বন্ধ অথবা ছোট আকারে আনার কথাও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ধনকুবের ইলোন মাস্কের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ফেডারেল সরকারের ২ লাখের অধিক কর্মচারিকে ছাটাই করা হয়েছে। এখোন সারাবিশ্বে এবং ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭৩৪ অফিসের ১৮% কমিয়ে ৬০২টি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কো রুবিয়ো। এরফলে বিলুপ্তি ঘটবে ৭০০ পদ। উল্লেখ্য, মোট ৮০ হাজার কর্মকর্তা/কর্মচারির মধ্যে বিদেশী মিশনসমূহে ৫০ হাজার কর্মচারি রয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকেরা। অবশিষ্ট ৩০ হাজারের মধ্যে ১৪ হাজার হলেন আমেরিকান এবং ক’টনীতিক পেশায় অভিজ্ঞ। এরা পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা। অপর ১৩ হাজার কর্মচারির সকলেই ওয়াশিংটন ডিসিতে মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন। বিলুপ্তির তালিকায় আরো রয়েছে রিফ্যুজি দপ্তর। বিলুপ্তির পরিকল্পনায় রয়েছে আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি দেশের মিশনও। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশের মার্কিন কন্স্যুলেট কিংবা দূতাবাস/হাই কমিশনে কাটছাটের কোন পরিকল্পনার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানোর এই অভিপ্রায়ে মার্কিন মূল্যবোধ গোটাবিশ্বে বিস্তৃত করার চলমান কার্যক্রম, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে মার্কিন মোড়লিপনার যে ঘটনাবলি রয়েছে, তা চরমভাবে ব্যাহত হবে বলে অভিজ্ঞজনেরা মন্তব্য করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাথাভারি প্রশাসনকে স্বচ্ছ্বতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার এমন পরিকল্পনা প্রকাশ উপলক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে মার্কো অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ বছরে মন্ত্রণালয়ের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এখোন আমরা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবকিছু করার চেষ্টা করছি। বাহুল্য ব্যয় কমিয়ে খেটে খাওয়া আমেরিকানদের স্বার্থ সুরক্ষায় দ্ধপরিকর ট্রাম্প প্রশাসন। উল্লেখ্য, পেন্টাগণের বার্ষিক বাজেটের মাত্র ৬% হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেট। ট্রাম্প ইতিপূর্বে সরকারী ব্যয় সংকোচনের নীতি ঘোষণাকালে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটের অবসানে আমরা সামরিক অভিযানের পরিবর্তে ক’টনৈতিক তৎপরতাকে প্রাধান্য দিতে চাই। ইরানের সাথে সে অভিপ্রায়েই আলোচনা করা হয়েছে বলেও ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন পদক্ষেপের সমালোচনা করে শীর্ষস্থানীয় ডেমক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্যরা বলেছেন, প্রয়োজনের গুরুত্ব অনুধাবন না করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যা খুশী তাই করছেন। এরফলে সারা দেশে অস্থিরতা দানা বেধেছে। কোন নোটিশ ছাড়াই চাকরি হারানো দু’লাখ মানুষের দিনাতিপাত কীভাবে চলবে-সেটিও বিবেচনায় নিচ্ছেন না। সিনেটে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সিনেটর জীনে শাহিন বলেন, বহির্বিশ্বে আমেরিকার নিরাপত্তা এবং নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিপ্রায়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন পদক্ষেপের পরিণতি খুব ভালো হবে না। এর মূল্য দিতে হবে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে। আমেরিকার নেতৃত্ব যখোন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তখোন ঐ স্থান দখলে মরিয়া হয়ে উঠতে পারে চীন ও রাশিয়া। সিনেটর শাহিন উল্লেখ করেছেন, সংস্কারের যে কোন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রাক্কালে কংগ্রেসের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং তা অবশ্যই হতে হবে বিদ্যমান আইনের আওতায়।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নিউইয়র্কের ডেমক্রাট-কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও মর্যাদাকে বহির্বিশ্বে একেবারেই খাটো করার মতলবে হাটছে ট্রাম্প প্রশাসন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন যে, মানবাধিকার সমুন্নত এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গিকারকে খর্বো করার মত পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে সর্বশেষ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে। ট্যামি ব্রুস দাবি করেছেন যে, আমাদের আমেরিকান মূল্যবোধ অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।
Posted ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24