
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ
ইহুদি-বিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপণমূলক আন্দোলন-কর্মসূচি থেকে বিরত হবার উপর্যুপরি আহবানে সাড়া না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো। এরফলে বাংলাদেশসহ ১৪০টিরও অধিক দেশের মেধাবি শিক্ষার্থীর বৈচিত্রমন্ডিত উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বন্ধ হয়ে পড়লো। ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন নির্দেশকে অমানবিক এবং বেআইনী হিসেবে অভিহিত করেছে হার্ভার্ড কর্র্তপক্ষ। অপরদিকে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় অধ্যয়নরতরা মনে করছেন যে, হোয়াইট হাউস এবং হার্ভার্ডের দ্বন্দ্বের মধ্যে তারা দাবার ঘুঁটি হলেন। এটা খুবই অমানবিক। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রশাসন বৃহস্প্রতিবার ২২ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে; পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরও বন্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্টুডেন্ট ভিসা পরিবর্তনের সুযোগও রহিত করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে যাদের কোর্স সমাপ্তির গ্র্যাজুয়েশন পার্টির প্রস্তুতি চলছে তাদের অবস্থান কী হবে এবং তেমন হাজারো শিক্ষার্থী বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উচ্চতর ডিগ্রির সার্টিফিকেট আদৌ হাতে পাবেন কিনা এবং তারা কর্মসূত্রে ভিসার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের বিদ্যমান রীতি অনুসরণে সক্ষম হবেন কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিলো আচমকা এমন নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিত্রে।
এর আগে গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাধারী কয়েকজনের তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তা না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাতে পারে বলে সতর্ক করেছিল। মাসখানেকের মধ্যে সেই পথেই হাঁটল দেশটির প্রশাসন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে লিখেছেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন’(এসইভিপি) বাতিল করেছে প্রশাসন।
ক্রিস্টি নোয়েম উল্লেখ করেছেন, ‘‘এটি সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা হবে।’’ এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশটির প্রশাসনের দূরত্ব আরও বাড়ল। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে হার্ভার্ড এক বিবৃতিতে একে ‘বেআইনি’ বলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী এবং পন্ডিতদের সুযোগ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও এই জাতিকে অমিতভাবে সমৃদ্ধ করতে হার্ভার্ডের যে ক্ষমতা, সেটি ধরে রাখতে আমরা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ভুক্তভোগীদের দ্রুত সহায়তা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রতিশোধমূলক এই পদক্ষেপ হার্ভার্ড সম্প্রদায় এবং দেশের জন্য গুরুতর হুমকি। এটি হার্ভার্ডের অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে দুর্বল করে দেবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, গত শিক্ষাবর্ষে ৬,৭০০ জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে হার্ভার্ডে, যা এর মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।
২০ জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা তহবিল ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘চরম বামপন্থী, মার্ক্সবাদী ও মার্কিন-বিরোধী’ চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের।
হার্ভার্ডের পাশাপাশি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও কথিত ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, তারা শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি সীজ বা বাতিল করে। সবশেষ গত সোমবার ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও জাতিগত হয়রানির অভিযোগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৬০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস)।
বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি হতাশা সৃষ্টি হয়।
Posted ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24