ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত?

‘কপাল পুড়লো’ আমেরিকায় এসাইলাম প্রার্থীগণের

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

‘কপাল পুড়লো’ আমেরিকায় এসাইলাম প্রার্থীগণের

ফাইল ছবি

‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক হানাহানি কমেছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এজন্যে বাংলাদেশে ফিরলেই ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়বেন বলে যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে এসাইলামের আবেদন করেছিলেন তাদের কপাল পুড়ছে’-এমন তথ্য জানিয়ে ইমিগ্রেশন এটর্নীরা ২৭ মে এ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কোর্ট অনেক বাংলাদেশীর এসাইলামের (রাজনৈতিক আশ্রয়) আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং ইমিগ্রেশনে বিশেষ খ্যাতি অর্জনকারি (জুরিস ডক্টর) এটর্নী জান্নাতুল রুমা পৃথক পৃথকভাবে জানিয়েছেন যে, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি পাল্টেছে বলে বদ্ধমূল একটি ধারণা জন্মেছে ইমিগ্রেশন কোর্টের। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ মনে করছেন যে, বাংলাদেশে এখোন রাজনৈতিক হানাহানি নেই বললেই চলে। তাই যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন তাদের আবেদন বিবেচনার আর কোন সুযোগ নেই। গত দুতিন মাসে এ ধরনের অনেকের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। উভয় এটর্নী আরো জানিয়েছেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আবেদনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হিয়ারিংয়ের তারিখ দেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সাবমিটের সুযোগ না দিয়েই শুনানীর তারিখ ধার্য করার ঘটনায় আবেদনকারিরাও হতভম্ব। অথচ এর আগে এসাইলাম তথা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন সাবমিটের পর বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে শুনানীর তারিখের জন্যে। এটর্নী জান্নাতুল রুমা উল্লেখ করেছেন যে, কান্ট্রি কন্ডিশনকে গুরুত্ব দিয়ে এসাইলিদের ভাগ্য নির্দ্ধারণ করা হচ্ছে। যা কারো জন্যেই মঙ্গলের হচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থে এখোন আরো ভয়াবহ। তবে এমন বাস্তবতা বিচার বিভাগকে তথ্য-প্রমাণের আলোকে অবহিত করা হচ্ছে না বলেই অনেকে হতাশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কম্যুনিটি লিডার এ সংবাদদাতাকে জানান, বর্তমানের পরিস্থিতির অসহায় ভিকটিম যারা তাদের পক্ষ থেকে কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বিচার বিভাগে লবিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এবং এ দায়িত্বটি এখোন বর্তেছে আওয়ামী লীগের ওপর। কারণ, এখোন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের কর্মী হিসেবে অনেকেই আবেদন করছেন। তারা উল্লেখ করছেন যে, দেশে ফিরলেই ক্ষমতাসীন সরকারের নির্দয় আচরণের শিকার হতে হবে। বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। অনেকের বাড়ি-ঘর ইতিমধ্যেই জ্বালিয়ে দেয়ার ডক্যুমেন্টও সাবমিট করা হয়েছে। কিন্তু বিচার বিভাগ বিশ্বাসই করতে চান না যে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হানাহানি চলতে পারে।

এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো উল্লেখ করেছেন, এ অবস্থায় অনেক আগে যারা আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, ‘দেশে ফিরলেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অকথ্য নির্যাতন-আক্রমণের ভিকটিম হতে হবে-তাদের আবেদনও এখোন আর গুরুত্ব পাচ্ছে না। ফলে হাজারো বাংলাদেশী হতাশার সাগরে ভাসছেন।’

ইমিগ্রেশন এটর্নী অশোক কর্মকার অবশ্য জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। গত সপ্তাহেও তার মাধ্যমে করা তিন আবেদনকারির এসাইলাম মঞ্জুর হয়েছে ইমিগ্রেশন কোর্টে। এটনী কর্মকার উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশে ফিরলে আবেদনকারি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা সামাজিকভাবে চিহ্নিত দুর্বৃত্ত কর্র্তৃক হয়রানির শিকার হবেন এমোন বিষয়টি মাননীয় আদালতকে কনভিন্স করতে পারলে এসাইলামের আবেদনটি সুবিবেচনায় আসছে।’

যদিও এটর্নী রুমা জানিয়েছেন, এখোন আসলে এসাইলামের আবেদনের সঠিক সময় নয়। আর যদি করতেই হয় তাহলে আবেদনের সমর্থনে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সাবমিট করা জরুরী। তাহলে স্বল্পতম সময়ে হিয়ারিংয়ের তারিখ ধার্য করলেও সমস্যা হবে না। তাই যারা একান্তই এসাইলামের আবেদনে আগ্রহী তারা যেন সমস্ত ডক্যুমেন্ট সংগ্রহ করেন সাবমিটের আগেই।

এদিকে, কয়েক বছর আগে ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে যাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে কিংবা আবেদনটি নাকচের সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের মুচলেকা দিয়েছিলেন কিন্তু সে অনুযায়ী নিজ দেশে ফিরে যাননি, তেমন অবৈধ প্রবাসীরাও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাচ্ছেন অবিলম্বে চলে যাবার জন্যে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ অফার অনুযায়ী সে সব চিঠিতে উল্লেখ করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্টের কপির সাথে গন্তব্যের এয়ারপোর্টের নাম জমা দিতে। ফ্রি টিকিট দেয়া হবে এবং এয়ারপোর্টে প্রবেশের পরই দেয়া হবে নগদ এক হাজার ডলার। অন্যথায় দৈনিক ৯৯৮ ডলার হারে গুণতে হবে জরিমানা। ইমিগ্রেশন এটর্নীরা জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধর-পাকড় এড়ানোর অভিপ্রায়ে যারা ঠিকানা পাল্টেছেন তারাও স্বস্তিতে নেই। ইতিপূর্বে বেশ ক’বার আবেদন নাকচের পর অনেকে আবারো আপিলের পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করছেন। তাদের ধারণা, আপিল পিটিশন গৃহিত হলে গ্রেফতার-বহিষ্কারের ঝুঁকি থেকে অব্যাহতি লাভ করা যাবে। যদিও তার নিশ্চয়তা নেই।

ইমিগ্রেশন এটর্নীগণের অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দালালকে বিপুল অর্থ দিয়ে গত কয়েক বছরে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে আগত শতশত বাংলাদেশী যুবক এসাইলাম প্রার্থনা করেছেন। তাদের প্রায় সকলেই বিএনপি অথবা এলডিপির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তবে যাদের আবেদন পেন্ডিং আছে তারা মহাদুশ্চিন্তায় নিপতিত হয়েছেন। কারণ, বাংলাদেশে এখোন আর ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় নেই। সকলেই নিরাপদে দিনাতিপাত করছেন বলে ট্রাম্পের বিচার বিভাগের ধারণা। এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্র্তৃক নিষিদ্ধ ঘেষিত ছাত্রলীগের একজন নেতার আবেদনও গত সপ্তাহে নাকচ করা হয়েছে শুনানীর পর। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন পথ ঘুরে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন রাজনৈতিক প্রার্থনার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাসের অভিপ্রায়ে, তারা গভীর হতাশায় নিপতিত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সিলেট থেকে ২৭ মে জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পর এক প্রবাসীকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছিল। ইউএস সিটিজেন এবং বৈধ পাসপোর্টধারী হওয়া সত্বে তাকে কাস্টমস অফিসাররা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন এটর্নী এহসানের সহযোগী ড. রফিক আহমেদ। ড. রফিক বলেন, সিটিজেনরাও অকারণে নাজেহাল হচ্ছেন। আমাদের ঐ ক্লায়েন্টকে নাজেহালের পর বিশেষ একটি কক্ষে আটকে রাখার সংবাদ জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে জানার পরই ফোন করেছিলাম সংশ্লিষ্ট কাস্টমস অফিসারকে। এরপরই তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। এটা অযথা হয়রানির সামিল। এধরনের নির্দয় আচরণের ভিকটিম অনেক গ্রীণকার্ডধারীকেও হতে হচ্ছে। ফলে লিগ্যাল স্ট্যাটাসওয়ালা অনেক প্রবাসী এবার বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। এমনকি পার্শ্ববর্তী কানাডায় যেতেও চাচ্ছেন না। কারণ, প্রতিদিনই এয়ারপোর্ট ও সীমান্ত ফাঁড়িতে অনেকের হেনস্তার ঘটনা ঘটছে।

ছবির ক্যাপশন-ইউএসসিআইএস লগো
=+++++=

Facebook Comments Box

Posted ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

nyvoice24 |

.

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us