একাত্তরের প্রতিশোধ: পারবে না শরিফ, পাকিস্তান!

মাসুদ রানা   প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরের প্রতিশোধ: পারবে না শরিফ, পাকিস্তান!

ফাইল ছবি

২৮ মে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় সাংবাদিক-কলামিস্ট জাহিদ হাসানের ‘A war without end’ শিরোনামের একটি লেখা থেকে জানলাম যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের সাথে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে বিজয় দাবী করে, তিনি এতোদূর গিয়েছেন যে, কথিত এ-‘বিজয়’কে ১৯৭১ সালের পরাজয়ের ‘প্রতিশোধ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। হাসান লিখেছেনঃ “Prime Minister Shehbaz SharifÕs comment that Pakistan has taken revenge for the 1971 war seems highly questionable. Is there really any comparison between a war that led to the disintegration of the country and defeating the recent Indian attack? The 1971 tragedy was more than IndiaÕs military invasion; it was also a war within that we as a nation must never forget. The tragedy is etched in our conscience.” [পাকিস্তান ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ যে মন্তব্য করেছেন, তা সাংঘাতিকভাব প্রশ্নযোগ্য। সাম্প্রতিক ভারতের আক্রমণ পরাস্ত করার সাথে ১৯৭১ সালের দেশ-টুকরো হওয়া যুদ্ধের তুলনা চলে? ১৯৭১ সালের ট্র্যাজেডি ভারতের সামরিক আক্রমণের চেয়ে অধিক; এটি ছিলো নিজেদের ভেতরে যুদ্ধ যা একটি জাতি ভুলতে পারে না। ট্র্যাজেডিটি আমাদের বিবেকের মধ্য প্রলেপিত হয়ে আছে।]

এবার বুঝা গেলো, ১৯৭১-এর বাঙালী-গণহত্যাকারী পাকিস্তানী বাহিনীর বাঙালী-সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর লোকেরা কেনো কাশ্মীরে পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ থেকে উত্তরপূর্ব ভারত আক্রমণের পূর্ব-ঘোষণা দিয়েছিলো। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ পাকিস্তান যেভাবে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো, এবং বাঙালী জাতি যেভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা ও যুদ্ধকরে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো পাকিস্তানী বাহিনীর জন্য অবিস্মরণীয় পরাজয়ের দিকে, তা বানচাল করতে ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান। পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে সংঘটিত পাঁচ-পাঁচটির মধ্যে ১৯৭১-এর ‘বাংলাদেশ যুদ্ধ’ই একমাত্র যুদ্ধ, যাতে পাকিস্তান শুধু পরাজয়ই বরণ করেনি, বরং ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ বাংলাদেশ-ভারত সশস্ত্র-বাহিনীসমূহের যৌথ কমান্ডের কাছে, যা বিশ্বে যুদ্ধের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই জানে, ৯৩ হাজার সৈন্যের পাকবাহিনীকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পেছনে যে-ফ্যাক্টরটি অনন্য এবং যেটি বাকী ৪টি যুদ্ধে অনুপস্থিত, তা হচ্ছেঃ বজ্রকণ্ঠে ‘জয় বাংলা’-গর্জা বাংলার বাঘ – দ্যা বেঙ্গল টাইগার্স!

হে শেহবাজ শরিফ, হে পাকিস্তান, আমরা জানি, তোমরা ভুলে যাওনি যে, বিশ্বের ইতিহাসে নজিবিরহীন ৯৩ হাজার পেশাদার সৈন্যের বাহিনীকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করিয়েছে যে-শক্তি, তা ভারত নয় – ভারত কখনও পারেনি – তা হচ্ছে বাঙালি!

আমরা আরও জানি যে, তোমরা প্রতিশোধ নিতে চাও। তোমরা মুখে বলছো, তোমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিশোধ ভারতের ওপর, যদিও আমরা জানি, আসলে তা বাঙালির ওপর। কিন্তু পারবে না, শরিফ! পারবে না, মুনির! পারবে না, পাকিস্তান! তোমরা কখনও তা পারবে না! যতো ফিল্ড মার্শাল হও। তোমাদের প্রথম ফিল্ড মার্শালকে এই বাঙালিই সিংহাসনচ্যুত করেছিল প্রথম গণ-অভ্যুত্থানে ১৯৬৯ সালে। দেখো, এই জাতি গণ-অভ্যুত্থান অব্যাহত রেখেছে ১৯৯০ ও ২০২৪ সালেও।

জানি, আমাদের মীরজাফরেরা তোমাদের সাথে আছে, তোমাদেরকে খাল কেটে ডেকে আনছে। এরা বরাবরই তা করেছে। এটি নিত্য, কিন্তু নির্ণায়ক সত্য হচ্ছে এই যে, বাংলার বাঘেরা আবার ঐক্যবদ্ধ হবে, আবার ‘জয়বাংলা’ বলে তোমাদেরকে রাজাকার-আলবর-আলশামস বাহিনী-সহ আবার পরাজিত করবে – ইউ ম্যে স্ট্যে এ্যাশিওর্ড!
(২৮/০৫/২০২৫, লন্ডন, ইংল্যান্ড, ফেসবুক থেকে নেয়া)

Facebook Comments Box

Posted ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us