বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শেষ বছরের চেয়ে দৈনিক অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের তুলনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ মেয়াদে প্রায় ৩ গুণ বেশী হলেও সন্তুষ্ট নয় ট্রাম্প প্রশাসন। গ্রেফতারের দৈনিক এ হার ৩ হাজারে উন্নীত করার জন্যে আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট)কে চাপ দেয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বুধবার। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনের অঙ্গিকার অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত এবং সমাজ-জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হৃমকিস্বরুপ-তাদেরকে ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে। সে অনুযায়ী ১০ মার্চ পর্যন্ত ৫০দিনে ৩২৮০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ৬৫৬ জন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শেষ বছরে দৈনিক গড় গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ২৫৫ জন করে। স্টিফেন মিলার বলেছেন যে, আইস বর্তমানে দৈনিক গ্রেফতারের টার্গেট এক হাজার জন করলেও প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন তা ৩ হাজারে উন্নীত করতে। ‘অণ্যথায় বাইডেন আমলের জঞ্জাল পুরোপুরি পরিস্কার করা সম্ভব হবে না এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকিও কমবে না’-মন্তব্য স্টিফেনের।
ট্রাম্পের এই টার্গেট পূরণে আইসকে বারংবার তাগাদা দিচ্ছেন স্টিফেন মিলারের ন্যায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েমও। অভিবাসন দফতরের দেখভালের দায়িত্বে ট্রাম্প-নিয়োজিত এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন, সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধভাবে বসবাসরত দুর্বৃত্তদের শনাক্ত এবং বহিষ্কারের পক্ষেই আমেরিকান ভোটারেরা রায় দিয়েছেন এবং বিভিণ্ন জনমত জরিপেও তা দৃশ্যমান হয়েছে। সে আলোকেই বাইডেনের চার বছরের জঞ্জাল পরিস্কারের কাজ করা হচ্ছে এবং সকল অবৈধকে বহিষ্কারের মধ্যদিয়েই সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত করা সম্ভব হবে। এজন্যে প্রতিদিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাগিদ দিচ্ছেন গ্রেফতার-অভিযানকে জোরদার করতে।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের পরও আইসের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে ৪৮৮৭০ জনকে। তাদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। হোয়াইট হাউজের বাজেট-প্রস্তাবে ডিটেনশন সেন্টারে বেডের সংখ্যা ৩ গুণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সেই বাজেট-প্রস্তাব পুরোপুরি কংগ্রেসে পাশ হবার নিশ্চয়তাও নেই। রিপাবলিকানরাও অনেকে বেঁকে বসেছেন ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে। বাজেট অক্ষতাবস্থায় পাশ হবার সম্ভাবনা না থাকলেও কম্যুনিটিতে অস্থিরতা চলছে। ভীত-সন্ত্রস্ত্র অভিবাসীরা নিতান্তই প্রয়োজন ব্যতিত ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। অনেক বাংলাদেশী মসজিদ-মন্দিরে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। কারণ, এখোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যয় উপাসনালয়েও হানা দিচ্ছে আইসের এজেন্টরা। চলতি সপ্তাহে ফেডারেল কোর্টে অভিযান চালিয়েও অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হার্ভার্ড, কলম্বিয়াসহ আইভি লীগ ভার্সিটিসমূহে বিদেশী শিক্ষার্থী সংকুচনের যে মনোভাব গ্রহণ করা হয়েছে তা নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে সর্বত্র। বিশেষ করে ১১ লক্ষাধিক বিদেশী শিক্ষার্থীর পৌণে ৩ লাখ হচ্ছেন চায়নিজ, তাদের ভিসা বাতিলের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা, চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির সমর্থক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে বড় ধরনের হুমকি। এছাড়া, অপরাপর দেশের শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ হচ্ছেন বামপন্থি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার অনুসারি,তারাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে হুমকি। অর্থাৎ এরা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির পরিপূরক নন। ‘আমরা এমন কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে দিতে চাই না যারা আমাদের বন্ধু-প্রতিম রাষ্ট্রের শত্রু এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরুপ’-উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন যে, চায়নিজদের স্টুডেন্ট ভিসা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং নতুন করে যারা আবেদন করবে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের পর প্রসেস করা হবে। একইসাথে স্টুডেন্ট ভিসার ইন্টারভিউ স্থগিতের আদেশও জারি করা হয়েছে ২৮ মে। এ অবস্থার সমালোচনা ও নিন্দা করেছে খ্যাতনামা ভার্সিটিসমূহের পক্ষ থেকে। কারণ, বিদেশী শিক্ষার্থীরা টিউশনি ফি বাবদ পুরো অর্থ প্রদানের পাশাপাশি অবস্থান ও থাকা-খাওয়া বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সেরা মেধাবিরাই স্টুডেন্ট ভিসায় আসেন এবং উচ্চ শিক্ষা লাভের পর অনেকে কর্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যান। এভাবে ঐসব মেধাবিরা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখে চলছেন বহুবছর ধরে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভিসা নীতি ঢেলে সাজানোর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে চলার গতি স্থবিরতায় আক্রান্ত হবে বলেও সুধীজন মন্তব্য করছেন।
এদিকে, হার্ভার্ড, কলম্বিয়া, ইউপেন, ইয়েল, এমআইটিসহ সেরা ভার্সিটিসমূহের বিদেশী শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই অন্যদেশে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া অব্যাহত রাখার চেষ্টা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই ট্রাম্প প্রশাসনের নিত্য-নতুন কঠোর পদক্ষেপে তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় গত বছর। এমন অবস্থাকে মানতে চাচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন। অথচ নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বক্তব্য-মন্তব্যে মুসলিম ভোটারসহ নতুন প্রজন্মের ভোটারের বড় একটি অংশ আশা করেছিলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা কমবে কিংবা হামাসের সাথে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘটবে ইসরায়েলের। কিন্তু সে প্রত্যাশায় গুড়ে বালি। অধিকন্তু ইসরায়েলকে আরো নগ্নভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
Posted ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24