
আনিসুর রহমান
প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দকে পাশে নিয়ে কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে বেশ কয়েক ডজন বাংলাদেশীসহ সাড়ে ৩ হাজার মুসলমানের ব্যাংক একাউন্ট বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া একাউন্টধারীর প্রায় সকলেই বিভিন্ন মসজিদের ইমাম অথবা মুসলিম আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে সোচ্চার কম্যুনিটি লিডার। ২ জুন নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপ’ তথা বাগের সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে মুসলিম বিদ্বেষী কান্ডকারখানার উদ্বেগজনক এই তথ্য উপস্থাপন করেন কেয়ার (কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স)এর পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য মীর মাসুম আলী। এ সংবাদদাতার এক প্রশ্নের জবাবে মীর মাসুম আরো বলেন, এহেন অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি স্টেট পার্লামেন্ট এবং কংগ্রেসে দেন-দরবার শুরু হয়েছে। এ সময় বাগের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন এবং মহাসচিব শাহানা মাসুম জানান, কোন ধরনের নোটিশ অথবা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ ছাড়াই কর্তৃপক্ষ একাউন্ট ক্লোজ করে দিয়েছে এবং একাউন্টে থাকা সমুদয় অর্থ প্যাকেটে ভরে একাউন্ট হোল্ডারের কাছে প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এমন অন্যায় আচরণকে রুখে দিতে আমরা স্টেট পার্লামেন্টে ‘ব্যাংকিং বিল অব রাইটস’ শিরোনামে একটি বিল উত্থাপনে স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান যোহরান মামদানিকে উৎসাহিত করেছি এবং ২৭ মে ‘এ১০২২-২০২৫’ এই ক্রমিকে তিনি উত্থাপনও করেছেন। এই বিলের কো-স্পন্সর হয়েছেন স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান নিকি লুকাস, ডানা লুভেঙ্গবার্গ, রেবেকা সীরাইট, রন কিম, ক্রিস বার্ডিক, চার্লস ফল, ফ্যারা সোফরান ফরেস্ট। বিলটি ব্যাংক সম্পর্কিত কমিটিতে পাঠানো হয়েছে পর্যালোচনার জন্যে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই ব্যাংক একাউন্ট ক্লোজের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তা চালুর দাবিতে ইতিপূর্বে বাংলাদেশী আমেরিকান মোহাম্মদ কয়সর আহমেদ নিউইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন (কেস নম্বর-১:১৯-সিভি-০৪৪৩৯)।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, স্কুল-কলেজে ইসলামিক পোশাকধারীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত বাক-ব্যক্তির অধিকারের পরিপন্থি পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের বিরুদ্ধে গৃহিত পদক্ষেপ রুখে দেয়ার অভিপ্রায়ে ‘ফ্রি স্পিস অন কলেজ/ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস বিল’ (এস৭৫৩৬ ২০০২৫-২৬) স্টেট সিনেটে ২৭ মে উত্থাপনে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসনকে অনুপ্রাণীত করা হয় এবং সিনেটর কর্ডেল ক্লিয়ারের সমর্থনে তিনি তা উত্থাপন করেছেন। বিলটি পর্যালোচনার জন্যে সিনেট হায়ার এডুকেশন কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। একইদিন ‘এস৩১৬’ নামক সিনেটে ‘নিউইয়র্ক ডিগনিটি নট ডিটেনশন অ্যাক্ট’ উত্থাপন করা হয়েছে বাগের তদ্বিরে। সাম্প্রতিক সময়ে ইমিগ্রেশনের এজেন্টরা আদালতের নির্দেশ ছাড়াই স্কুল-কলেজ এবং ছাত্রাবাস/বাসভবনে ঢুকে অভিবাসনের মর্যাদাহীন শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে। ইতিমধ্যেই অনেকের ভিসা বাতিলের পর নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমন আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি হিসেবে অভিহিত করে উত্থাপিত বিলে ইমিগ্রেশনের এজেন্টদের তা থেকে বিরত থাকার আইনের প্রস্তাব রয়েছে এই বিলে।
সংবাদ সম্মেলনে বাগ নেতৃবৃন্দ । ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
বাগের দেন-দরবার অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির মত সারা স্টেটের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই ঈদের দিনকে ছুটি ঘোষণার একটিন বিলও স্টেট পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাগের সভাপতি ও মহাসচিব আরো জানান যে, গত ১১ বছর থেকেই তারা অভিবাসী তথা কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সুরক্ষার জন্যে নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টে সশরীরে গিয়ে সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে সাক্ষাত করছেন এবং নিজেদের ভোট-ব্যাংক অটুট রাখতে অন্যায়-অবিচার রুখে দেয়ার আইন তৈরীর জন্যে বিল উত্থাপন ও পাশ করতে উজ্জীবিত করছেন। এ সময় তারা আরো জানান, নিউইয়র্ক স্টেটে মোট জনসংখ্যার ৩.৬% তথা ২৫ লাখ হলেন মুসলমান। আর নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ। বিরাটসংখ্যক এই ভোটার ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশী তথা মুসলিম আমেরিকানদের অধিকার সুরক্ষায় নিবেদিতভাবে নির্বাচিত করা কঠিন কিছু হবে না। সে আহবানই তারা জানাচ্ছেন এবং ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল পদে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হতে আগ্রহীগণের মধ্যে যারা কম্যুনিটির পরীক্ষিত বন্ধু তাদেরকে বিজয় দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। ভোট দানের মধ্যেই প্রশাসনে কম্যুনিটির উপস্থিতি নির্দ্ধারিত হয়। তাই সিটিজেনশিপ নেয়া ১৮ বছরের অধিক বয়েসী সকলের উচিত ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া। জয়নাল আবেদীন এবং শাহানা মাসুম আরো জানান, নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টে আরেকটি বিল পাশের চেষ্টা চলছে যার মধ্যদিয়ে ‘মুসলিম-আমেরিকান এডভাইজারি কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। এই স্টেটে ২৫ লাখের অধিক মুসলমান বাস করছি, কিন্তু তাদের পক্ষে সরাসরি কথা বলার মত প্রাতিষ্ঠানিক কোন অবলম্বন নেই। সেই সংকট দূর করতে এমন একটি বিল অপরিসীম ভ’মিকা রাখবে বলে মনে করছি।
এ সংবাদদাতার অপর এক প্রশ্নের জবাবে মীর মাসুম আলী জানান, গত ৪ মে নবম বছরের মত ‘কাউন্সিল ফর মুসলিম অর্গানাইজেশন’ তথা সিএমও সারা আমেরিকা থেকে ৫ শতাধিক মুসলিম নেতৃবৃন্দ নিয়ে ক্যাপিটল হিলে লবিং চালিয়েছে। আড়াই শতাধিক কংগ্রেসম্যানের সাথে তারা আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেছেন। এই টিমে ৭০ জনের মত বাংলাদেশী আমেরিকানও ছিলাম। উল্লেখ করেন যে, সামনের বছরের নভেম্বরের মধ্যবর্তি নির্বাচনে অভিবাসী সমাজের কল্যাণে বিশ্বাসীগণকে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে এখোন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছেন।
জ্যাকসন হাইটসে ‘শেফ মহল’ পার্টি হলে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে বাগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন কোষাধ্যক্ষ ইনজিনিয়ার মো রহিম, সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস দিলরুবা চৌধুরী শোভন, পার্লামেন্টারিয়ান মাহতাব খান, পরিচালক মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন ও আদিল মোহাম্মদ, সামিরা নাজনীন প্রমুখ। আরো ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক কাদের মিয়া। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, গত ২৭ মে বাগ নেতৃবৃন্দ নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনিতে পার্লামেন্ট ভবনে গিয়ে সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন এবং উদ্ভ’ত পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। দিনটিকে বাগ ‘লেজিলেটিভ এডভোকেসি ডে’ হিসেবে পালন করেছেন এবং সে সব তথ্য বিস্তারিতভাবে জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
Posted ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24