
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ
২০১৭ সালে ‘ট্র্যাভেল ব্যান’ আদেশ জারির পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন আমেরিকানরা। ছবি-সংগ্রহ।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে হুমকি হিসেবে বিবেচিত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত ১২ দেশের নাগরিকের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ (ট্র্যাভেল ব্যান) এবং আরো ৭ দেশের নাগরিকের জন্যে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৯ জুন সোমবার থেকে কার্যকর হবে এই নিষেধাজ্ঞা এবং এর আওতামুক্ত থাকবে ঐসব দেশের গ্রীণকার্ডধারী অথবা ইতিমধ্যেই পাওয়া নন-ইমিগ্র্যান্ট/ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারিরা। পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় দেশসমূহ হচ্ছে আফগানিস্তান, মিয়ানমার (বার্মা), চাদ, কঙ্গো, গিনী, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন। আর আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় দেশসমূহ হচ্ছে বুরুন্ডি, কিউবা, লাউস, সিয়েলা লিওন, টগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা। ৪ জুন বুধবার ‘ট্র্যাভেল ব্যান’র আদেশ জারিকালে নিজ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছেন, ‘কলোরাডোর বোল্ডার সিটিতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় প্রতিয়মান হচ্ছে যে, ভিসা ইস্যুও ক্ষেত্রে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করা এমন কিছু বিদেশী আসছে যারা আমাদের দেশে জন্যে ভয়ংকর রকমের হুমকিস্বরুপ। একইভাবে অস্থায়ী ভিজিট ভিসায় আসার পর যারা ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া সত্বেও বেআইনীভাবে অবস্থান করছে তারাও কম্যনিটির জন্যে নিরাপদ নন। আমরা কখনোই তাদেরকে দেখতে চাই না।’ তবে উপরোক্ত ১৯ দেশের নাগরিকের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করবেন বলে মনে করা হবে-তাদের ভিসা অবারিত থাকবে-নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে ফেরার দিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ী অভিবাসন-বিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অবৈধভাবে বসবাসরতদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দেশসমূহের শক্রু বিবেচিত বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদকারি ‘বিদেশী শিক্ষার্থী’ ভিসাধারিদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিনই আইসের এজেন্ট এবং রিপাবলিকান শাসিত স্টেটসমূহের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে অবৈধ অভিবাসী ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ বিদেশীদের ধরতে এবং গত সাড়ে ৪ মাসে লক্ষাধিক অভিবাসীকে সরকারী খরচে বহিস্কারের ঘটনাও ঘটেছে। এমনি একটি টলমাটাল অবস্থার মধ্যেই গত রোববার (১ জুন) কলরাডো স্টেটের বোল্ডার সিটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস কর্তৃক অপহরনের পর গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরতদের ওর এক ব্যক্তি ঘরে তৈরী মলোটভ ককটেল (পেট্রোল বোমা) ছুড়ে মারেন। এতে আহত হন ৮ জন। বোমা ছোড়া ব্যক্তিটি হচ্ছেন ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাসরত মিশরীয় নাগরিক মোহাম্মদ সাবরি সোলাইমান (৪৫)। এফবিআই তাকে আটক করেছে এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, সাবরি সোলাইমান বোমা ছুড়ে মারার সময় ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’ স্লোগান দিয়েছিলেন। এঘটনাটি ট্র্যাভেল ব্যান’র যে আশংকা করা হচ্ছিল তাকে ত্বরান্বিত করেছে। যদিও মিশরের নাম নেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে, বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত তালিকায় আরো দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭) জারিকৃত একইধরনের ট্র্র্যাভেল ব্যান’র বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও চ’ড়ান্ত রায়ে মাননীয় আদালত ঐ নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তিসঙ্গত বলে রায় দিয়েছিলেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্র্যাভেল ব্যানকে বৈধতা দেয়া হয়েছে (যদিও জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি সেই আদেশ উঠিয়ে দিয়েছিলেন)। সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপেক্ষিতে এবার নতুন কোন মামলার অবতারণা হবে বলে কেউ মনে করছেন না। আরো উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা দেশসমূহের তালিকা চ’ড়ান্ত করা হয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশক্রমে।
ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার আদেশকে ‘রাজনৈতিক তামাশা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
Posted ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24