ট্রাম্পে অভিবাসন-বিরোধী অভিযান রুখে দিতে

লসএঞ্জেলেসে তুমুল বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

লসএঞ্জেলেসে তুমুল বিক্ষোভ

অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে উত্তাল লসঅ্যাঞ্জেলেস শহরে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার ট্রাম্পের নির্দেশমতো ন্যাশনাল গার্ডের ২০০০ রক্ষী ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় শহরটির সড়কগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে নগরীটিতে তিন দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ স্থানীয় সময় রোববার রাতে এক নিউজ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, শনিবার রাতে ২৯ জন ও রোববার অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তারের পরও পুলিশ গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে।

নগরীটিতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা লসঅ্যাঞ্জেলেসের ফেডারেল ভবনগুলো পাহারা দিচ্ছে, সিটির অন্য এলাকায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ছুঁড়ছে এলএ পুলিশ। মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারিদের সরাতে ঘোড়া নিয়ে পুলিশের তৎপরতাও দেখা গেছে রোববার সন্ধ্যা নাগাদ। সন্ধ্যার পর ড্রাইভারহীন কয়েকটি গাড়িতে বিক্ষোভকারিরা আগুন ধরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। রাস্তার পার্শ্ববর্তী লাইট পোস্ট এবং সড়কদ্বীপের সাইন সম্বলিত খুটি উপড়ে ফেলতেও দেখা গেছে। এভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দেখে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বেশ কয়েকটি সমাবেশকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেছে। কিছু বিক্ষোভকারীকে পুলিশের দিকে ক্রংক্রিটের টুকরা, বোতল ও অন্যান্য দ্রব্য ছুড়ে মারতে দেখা যায়। এছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেসের কেন্দ্রস্থলের সড়কগুলোতে রোববার সন্ধ্যায় আলফাবেটস ওয়েমোর বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে। আর ঘোড়ার উপরে থাকা লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে চিৎকার করে বলছে ‘তোমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত!’, কিছু বিক্ষোভকারীকে কিছু ছুড়তে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের একটি দল সিটির কেন্দ্রস্থলের একটি রাস্তা আটকে রেখেছিল। বিক্ষোভকারীদের কিছু দলের বেশ কয়েকজন মেক্সিকোর পতাকা বহন করছিলেন আর তারা সিটির বিভিন্ন অংশে জড়ো হয়ে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। পার্টি ফর সোশ্যালিজম এন্ড লিবারেশন’র লসঅ্যাঞ্জেলেস শাখা বিকালে সিটি হলের সামনে একটি সমাবেশ করে।

অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে তিন দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলছে। জ্বলছে সহায়-সম্পদ। ছবি: সংগ্রহ।

অপরদিকে ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর নিউজম লসঅ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এমএসএনবিসিকে রোববা সন্ধ্যায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিউজম জানিয়েছেন, এই মোতায়েন নিয়ে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরিকল্পনা করেছেন। তার দাবি, প্রতিবাদকে ঘিরে ‘এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের কারণে’। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, “ট্রাম্প একটি সংকট তৈরির চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্ব লংঘন করছেন।”
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ স্টেট গভর্ণর লিখেছেন, “এগুলো একজন স্বৈরশাসকের কাজ, একজন প্রেসিডেন্টের না।” লসঅ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনাল রোববার রাতে গণমাধ্যম বিফ্রিংয়ে বলেছেন, প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল গার্ড দরকার কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুলিশ এখনই সেরকম কিছুতে যাবে না।” কিন্তু এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, “আজ রাতের সহিংসতা দেখে আমার মনে হচ্ছে আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।” সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প ম্যাকডোনালকে সেটিই করতে বলেছেন।

ট্রাম্প লিখেছেন, “তার করা উচিত, এখনই!!! এরপরও এইসব গুন্ডাদের পার পেতে দিও না। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন!!!” হোয়াইট হাউজ নিউজমের সঙ্গে দ্বিমত করে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, “প্রত্যেকেই এই বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও অনাচার দেখেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান কমান্ড জানিয়েছে, লসঅ্যাঞ্জেলেসের তিন এলাকায় ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের ৩০০ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। তারা শুধু ফেডারেল কর্মী ও সম্পত্তিগুলোর সুরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সতর্ক করে বলেছেন, যদি লসঅ্যাঞ্জেলেসে সহিংসতা অব্যাহত থাকে তাহলে পেন্টাগন সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত আছে। নিকটবর্তী ক্যাম্প পেন্ডলটনে মার্কিন মেরিনা সেনারা ‘উচ্চ সতর্কাবস্থায়’ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নর্দান কমান্ড জানিয়েছে, আদেশ পেলেই প্রায় ৫০০ মেরিন সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

লসঅ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়ে উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দায়ী করেছেন আর সহিংস হয়ে ওঠার জন্য বিক্ষোভকারীদেরও নিন্দা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার লসএঞ্জেলেস সিটির একটি হোম ডিপোটে অভিযান চালায় আইস। সে সময় বেশ কয়েকজন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের সংবাদ জানাজানি হবার পরই এই সিটির অভিবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ক্ষোভ অব্যাহত থাকে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ। সর্বসাধারণের বিক্ষোভকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘চলমান আইসের অভিযানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’র সামিল বলে মনে করেই শনিবার রাতেই প্রেসিডেন্ট টাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এমন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই রোববার হাজারো জনতা জড়ো হন বিক্ষোভের জন্যে। লসএঞ্জেলেস সিটিতে বসবাসকারিরা আইসের অভিযানকে বরদাশত করতে চান না। কারণ এই সিটির অধিকাংশ মানুষই অভিবাসী এবং তারাই গড়ছেন লসএঞ্জেলেস সিটিকে। এদিকে, লসএঞ্জেলেস সিটির এই বিক্ষোভের লেলিহান শিখা ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, মিশিগান, শিকাগো, টেক্সাসেও ছড়িয়ে পড়েছে। শীঘ্রই তা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের নায় সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ার অশংকা করছেন মানবাধিকার ও অভিবাসীদের সুরক্ষায় কর্মরত সংগঠনগুলো।

Facebook Comments Box

Posted ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us