
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১:১৩ অপরাহ্ণ
৪৫ বছর আগের একটি অপরাধে গ্রেফতারের পর পরবর্তীতে কোর্টে হাজিরার শর্তে মুক্তি পাওয়া এক প্রবাসীর কাছে সম্প্রতি ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে নোটিশ এসেছে। অবিলম্বে তাকে হাজির হবার নির্দেশ রয়েছে ঐ চিঠিতে। ১৯৯৬ সালে পাতানো বিয়ের মাধ্যমে স্ট্যাটাস এডজাস্টমেন্টের আবেদন নাকচ হওয়া আরেক প্রবাসীর কাছেও নোটিশ এসেছে নিকটস্থ কোর্টে হাজিরার জন্যে। ২০ বছর আগে একটি স্টোরের সেলসম্যানের কাজ করার সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরির কাছে বিয়ার বিক্রি এবং ঐ কিশোরির সংবেদনশীল স্থানে হাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জ্যাকসন হাইটস এলাকার এক প্রবাসী। আদালতে সোপর্দ করার পর মাননীয় আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন পরবর্তীতে হাজিরার শর্তে। তিনি কখনোই আর আদালতে যাননি। গত সপ্তাহে নোটিশ পেয়েছেন আদালতে হাজিরার জন্যে। কারণ, ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে তিন দফা রায় হয়েছে এবং সে অনুযায়ী গ্রেফতারী পরোয়ানা ঝুলছে অর্থাৎ তিনি ফেরার। এরা তিনজনই নানা প্রক্রিয়ায় ওয়ার্কপারমিটধারী অর্থাৎ এক ধরনের অবৈধ অভিবাসী-যাদেরকে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের কয়েক শত প্রবাসীর কাছে ইমিগ্রেশন কোর্ট অথবা ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী অথবা ক্রিমিনাল কোর্টের চিঠি আসছে অবিলম্বে হাজিরার জন্যে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানে বাংলাদেশীরাও সন্ত্রস্ত। অনেকে সেলফোনের সিম ফেলে দিয়েছেন। ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। ক্রেডিক/ডেবিট কার্ড গার্বেজ করেছেন। নতুন ঠিকানায় একেবারেই সাদাসিধে জীবন-যাপনের পথ বেছে নিয়েছেন। এমন ভীতিকর তথ্য জানা গেছে নিউইয়র্ক অঞ্চলের ইমিগ্রেশন এটর্নী, ল’ ফার্মে কর্মরত প্রবাসী এবং কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে। দিন যত যাচ্ছে ততই এহেন ভীতিকর সংবাদও বেড়ে চলছে। উল্লেখ্য, প্রায় দিনই ইমিগ্রেশনের এজেন্ট (আইস) এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা হানা দিচ্ছে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের জন্যে। বাসা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পর এখোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির-গীর্জাতেও হানা দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। ফলে পরিচিত অনেক প্রবাসী এখোন আর জনসমক্ষে আসছেন না। অথবা চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে। ইতিপূর্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অফার অনুযায়ী নগদ এক হাজার ডলারের পকেট খরচসহ সরকারী টিকিটে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাবার কথা এখোন পর্যন্ত কম্যুনিটি থেকে জানা যায়নি। অর্থাৎ সকলেই চেষ্টা করছেন ট্রাম্পের অভিযান এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যাবার। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন-যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে অনেক আগেই। এতদিন যারা জাল ওয়ার্ক পারমিট কিংবা গ্রীণকার্ড বানিয়ে দিনাতিপাত করেছেন-তারা এখোন ডাবল অপরাধে অভিযুক্ত হবেন গ্রেফতারের পরই-এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন ইমিগ্রেশন এটর্নীরা। এছাড়া, কম্যুনিটিতে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত এবং ফেডারেল আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত কোন কোন অবৈধ অভিবাসী কম্যুনিটির জন্যে চরম এই দু:সময়েও সহজ-সরল প্রবাসীদের সহযোগিতার ফাঁদ পেতে নবউদ্যমে প্রতারনায় লিপ্ত বলে শোনা যাচ্ছে। এই চক্রের নেটওয়ার্ক লসএঞ্জেলেস-ফ্লোরিডা-মিশিগান-টেক্সাস-ওয়াশিংটন মেট্র হয়ে পেনসিলভেনিয়া-নিউজার্সি পেরিয়ে নিউইয়র্ক পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইমিগ্রেশন বিভাগ অথবা ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে নোটিশ প্রাপ্ত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন বিষয়ক এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেছেন, ডিপোর্টেশনের নির্দেশ থাকলে কিংবা গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবার নির্দেশকে যারা অমান্য করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন-তাদের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হাজিরা দেয়া। উভয় ক্ষেত্রেই নিজের এটর্নী সাথে রাখতে পারেন। আর যদি এটর্নী না থাকে তাহলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এটর্নী সাথে নিতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যেই অনেকে ফেডারেল কোর্ট অথবা ইমিগ্রেশন কোর্ট কিংবা ক্রিমিনাল কোর্টে পূর্ব নির্দ্ধারিত তারিখে হাজিরা দিতে গিয়ে আইস কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছেন। তাই যারা ফেরার হিসেবে চিহ্নিত তাদেরকে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে প্রাপ্ত নোটিশের সাড়া দিতে। এটর্নী মঈন উল্লেখ করেছেন যে, সবার আগে প্রাপ্ত নোটিশের সত্যতা যাচাই করতে হবে। কারণ, ইদানিং প্রতারকরাও বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে অবৈধভাবে বসবাসরতদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিতে।
Posted ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24