
ডিসি থেকে সংবাদদাতা
প্রিন্ট
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ
‘১ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল (ইউবেক)’র নেতৃবৃন্দের সাথে অতিথিবর্গ। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী সংলগ্ন ম্যারিল্যান্ড স্টেটের বাল্টিমোর সিটিতে ১৪ জুন শনিবার “ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল (ইউবেক)” এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভ’মিকা’ (“দ্য ফিউচার অব ডেমেক্রেসি এ্যান্ড দ্য রোল অব ইনটেরিম গভর্ণমেন্ট ইন বাংলাদেশ”) শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারি সাবেক দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা এবং মার্শা বার্নিকাট ও মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিক ফজল আনসারী অভিন্ন সুরে উচ্চারণ করলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পলায়ন বাংলাদেশের বিপ্লবের ইতিহাসের স্বর্ণালী দিন”।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্ণিক্যাট। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিলের সমন্বয়কারী কবি, লেখক ও সংগঠক সামছুদ্দীন মাহমুদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কপিল স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিন প্রফেসর জামালউদ্দিন। আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন মেজর (অবঃ) মনজুরুল হক, ডাঃ মাকসুমুল হাকিম, ডাঃ আহমেদ নেওয়াজ খান সেলাল, মুশফিকুর রহমান, শামারুখ মহিউদ্দিন, খুরশিদ সাব্বির, স্যামরিয়া, হাসান চৌধুরী, রফিকুল হক. শামীমা সেলিমুদ্দীন, নওশের আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মেজর (অবঃ) সাফায়াত আহমেদ ও রাইশা ফারিন।
অনুষ্ঠানে তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন শামায়লা নারমিন ইরশিয়া এবং ইংরেজী ও বাংলা গান পরিবেশন করেন কনিকা খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ মেধার জন্যে শামায়লা নারমিন ইরশিয়া ও মিউজিকে কনিকা খানকে এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “বছরের পর বছর ধরে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নির্যাতন, ভোট কারচুপি এবং নিষ্ঠুর অত্যাচার কাে ক্ষমতার গদি আঁকড়ে ছিলো। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক মানবাধিকার রিপোর্ট অনুসারে হাসিনার সরকার বিচার বর্হিভূত হত্যা, গুম এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ওপর ক্রমাগত নির্যাতনসহ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত।” তিনি বলেন, “ভোটাধিকার, মুক্তমত এবং মানবিক মর্যাদার মতো সাধারণ মৌলিক দাবির কারণে এই পতিত স্বৈরাচারের খুনের শিকার হয়েছেন নিরীহ মানুষ, হাজার-হাজার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষ। আরও মর্মান্তিক হলো জুলাইয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর পতিত সরকারের নির্যাতন। অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামায় তাদের অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের এই আত্মত্যাগ ভুলার নয়। তারা আমাদের সময়ের নৈতিক মেরুর উদাহরণ।” রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদৃত শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। তার নেতৃত্বে সাংবিধানিক পথ, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র এবং সকল নাগরিকের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে তার সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে।”
রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এরই অংশ হিসাবে লন্ডনে প্রধান উপেদষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকটি বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথে একটি টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে সরকার।”
রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, “আপনি ওয়াশিংটন, কানাডা, যেখানেই অবস্থান করেন না কেন, আপনার মত প্রকাশ গুরুত্ব পূর্ণ। আপনার মতপ্রকাশে বাংলাদেশের চিত্র বিশ্বে প্রতিফলিত হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ কী ভয় না স্বাধীনতা দ্বারা পরিচালিত হবে। মতপ্রকাশের এই দূতিয়ালি গুরুত্বপূর্ণ।”
রাষ্ট্রদুত মুশফিক আরো বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের বিপ্লবের এক নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ৫আগস্ট এক ভিন্ন ধরনের বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সহযোগিতা করা। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার চলমান সংকট উতওে দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে কাজ করছে।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেন, “আমি কয়েক বছর হাসিনার শাসন দেখেছি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি খুব সহজে এই সরকারের পতন ঘটবে। আমরা দেখেছি তরুণরা কী না করতে পারে। তারা জুলাইয়ে এটা করে দেখিয়েছে। ৫আগস্টকে আমরা কখনো ভুলে যাবো না। তিনিবলেন, “তরুণরা একক কোন দলকে ক্ষমতার সুবিধা দেয়নি, এক স্বৈরাচার সেনা শাসক থেকে আরেক স্বৈরাচার সেনা শাসকের হাতে ক্ষমতা যায়নি বরং ১৫বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটানো হয়েছে।” রাষ্ট্রদূত মোজেনা বলেন, “এই বিপ্লব ছিলো ভিন্ন ধরনের একটি বিপ্লব। বিপ্লবের পর কোনো ধরনের বিপর্যয় ঘটেনি বরং স্থিতিশীল গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি যখন ৫আগস্টের দিকে তাকাই এবং হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাবার দৃশ্য দেখি, তখন মনে হয় এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের বিস্ময়কর ঘটনা।”
রাষ্ট্রদূত মোজেনা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আবার তাদের পুরনো ভুলে ফিরে যাক এটা আমি যুক্তিযুক্ত মনে করিনা। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কাজ হবে তাদেরকে নৈতিক আচরণের বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ না দিয়ে সহযোগিতা করা। এরজন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন। আমি মনে করি বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকারের বিপ্লব এবং এর সফলতা ছাড়া অন্যকিছুকে তারা গ্রহণ করবে না।”
রাষ্ট্রদূত মোজেনা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথনির্মাণ, সংস্কার এবং গণতন্ত্রে যাত্রার পথটি সহজ নয়। তবে ইউনূস সেই ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশকে সেই পথে টেনে নিয়ে যেতে পারবেন।”
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্ণিকাট বলেন, “গুগল করলে আপনি দেখতে পাবেন বাংলাদেশ সম্ভাবনার সমারোহে পুরস্কৃত। দেশটি শতশত নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। বাংলাদেশ কৃষি এবং বনায়নের উন্নয়নে অংশীদারদের সঙ্গে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। দেশটি পৃথিবীর অন্যতম চাল এবং পাট উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের কৃষক এবং বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেরা উপকৃত হচ্ছে এবং উদ্ভাবনী সুবিধাগুলো বিদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে বন্যা সহনশীল শস্য। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর মৎস্য খামার রয়েছে।”
রাষ্ট্রদূত বার্ণিকাট বলেন, “অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা এদেশের উন্নয়ন এবং সাফল্যে ভূমিকা রাখছে। প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, অভিবাসী শুধু দেশের অতীত ইতিহাসে ভূমিকা রাখে বিষয়টি এমন নয় বরং তারা ভবিষ্যত উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নে অভিবাসীরা যেমন ভূমিকা রাখছে ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ন এবং বিনিয়োগে তারা ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা রাখি।”
সভাপতির বক্তব্যে সামছুদ্দীন মাহমুদ, ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল(ইউবেক) এর মিশন ও ভিশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইউবেক গণতন্ত্রের সমর্থক অরাজনৈতিক এবং পক্ষপাতহীন মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে উন্নত করার জন্য কাজ করছে। ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল ওয়াশিংটন এবং ঢাকার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করছে। ইউবেক রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রত্যাখ্যান করে। এর লক্ষ্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু অসম্ভব নয়। সকলের অব্যাহত সমর্থন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আমাদের অংশীদারিত্ব এবং বিভেদ দূর করার দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে, আমরা এমন একটি উত্তরাধিকার গড়ে তুলব যা উভয় জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপকারী হবে।
Posted ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24