পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাবার পর কে কি বলেছিলেন

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাবার পর কে কি বলেছিলেন

ফাইল ছবি

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সেই সময় দেশ-বিদেশে নানা আলোচনা, সমালোচনা এবং সংশয়ের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা সরকার। কিন্তু সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসিক সিদ্ধান্ত নেন।

আজ সেই সেতু বাস্তবতা, দেশের গর্ব, উন্নয়নের প্রতীক। আর সময়ের বিচারে ভুল প্রমাণিত হয়েছে সে সময়ের সমালোচনাগুলো।

চলুন ফিরে দেখা যাক, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পর কে কী বলেছিলেন—

🔻 বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া

  • ১৭ অক্টোবর ২০১১: “স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করলো।”

  • ২ জানুয়ারি ২০১৮: “পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এটি জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে, অনেক রিস্ক আছে।”

🔻 অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান

  • ১ জুলাই ২০১২: “বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখা হবে। বিকল্প অর্থায়নে খরচ বাড়বে, মান নিয়েও প্রশ্ন থাকবে।”

🔻 সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বদিউল আলম মজুমদার

  • “এই ঘটনা প্রমাণ করে দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

🔻 পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আলী আহসান মনসুর

  • “সুশাসনের অভাবে দেশের বৃহত্তম প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।”

🔻 টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

  • “বিকল্প অর্থায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে না, বরং এটি মূল অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল।”

🔻 বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

  • ১০ জুলাই ২০১২: “বিশ্বব্যাংক সরাসরি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।”

  • ২৪ জুলাই ২০১২: “আবুল হোসেনের পদত্যাগই প্রমাণ করে দুর্নীতির অভিযোগ সত্য।”

🔻 সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার

  • “বাংলাদেশের পক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”

🔻 বিএনপি’র বিবৃতি

  • ২৩ জুলাই ২০১২: “যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগই প্রকল্পে দুর্নীতির স্বীকৃতি।”

🔻 বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন

  • “আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক নন, প্রধানমন্ত্রী একজন দুর্নীতিবাজকে রক্ষা করেছেন।”

🔻 অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ

  • “প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক সুরক্ষা দেয়।”

🔻 নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না

  • “প্রধানমন্ত্রী কেন কাউকে ‘দেশপ্রেমিক’ সার্টিফিকেট দেবেন?”

🔻 শাহদীন মালিক, আইনজীবী

  • “দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু সম্ভব নয়।”

🔻 ড. আহসান এইচ মনসুর

  • “ডলারের দাম বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি হবে, শেষ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ অসম্ভব।”

🔻 সিপিডি’র ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

  • “বৈদেশিক মুদ্রার ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়বে, সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

🔻 অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডি

  • “নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প শুরু হলে দেশের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন থমকে যাবে।”

শেখ হাসিনা যা করলেন

সব আশঙ্কা, বিরোধিতা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করার ঘোষণা দেন এবং সেটিকে বাস্তবে রূপ দেন।

এই পদক্ষেপ শুধু অবকাঠামোগত অগ্রগতির চিহ্ন নয়, বরং এক দৃষ্টান্ত – যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাস, সাহসিকতা ও জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করে, সে বড় স্বপ্নকেও বাস্তবে রূপ দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংক যখন সরে দাঁড়ায়, তখন অনেকেই বলেছিলেন, পদ্মা সেতু আর হবে না। কিন্তু সময়ের পালা ঘুরেছে। ২০২২ সালে উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু এখন দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সংযোগ, লাখো মানুষের জীবনে পরিবর্তনের প্রতীক।

প্রমাণিত হয়েছে, শুধুমাত্র বাজেট নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দৃঢ়তা, নেতৃত্ব ও সাহসিকতা।


সময়ের বিচারে আজ স্পষ্ট, বিশ্বব্যাংক যখন ফিরিয়ে নিয়েছিল অর্থায়ন, তখন শেখ হাসিনা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এক জবাব— “বাংলাদেশ পারে।”

Facebook Comments Box

Posted ১১:২০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us