বার্ষিক আয় ১০৭৯ কোটি টাকা

যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বেতনের ১৫ সিইও’র অন্যতম বাংলাদেশী ড. রায়ান সাদী

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বেতনের ১৫ সিইও’র অন্যতম বাংলাদেশী ড. রায়ান সাদী

ড. রায়ান সাদী

সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে অনন্য নজির হিসেবে বাংলাদেশী আমেরিকান ড. রায়ান সাদী যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেতনের ১৫ জন সিইও’র (চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার) নবম স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। গত বছর স্টক মার্কেটে ড. সাদীর নেতৃত্বাধীন ওষুধ গবেষণা সংস্থা ‘টেভোজেন’র আর্থিক গতি-প্রকৃতি এবং আয়-ব্যয়ের যে তথ্য ‘ইক্যুইলার’ প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস দীর্ঘ পর্যালোচনার ভিত্তিতে সম্প্রতি এ তালিকা প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী পাবনার সন্তান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ড. রায়ানের বার্ষিক বেতন হচ্ছে ৮৭.৭৬ মিলিয়ন ডলার (১০৭৯ কোটি ৩ লাখ টাকা)। এবং নিউজার্সিতে অবস্থিত বায়ো-টেকনোলজি কোম্পানি ‘টেভোজেন বায়ো’র সিইও এবং গবেষণা টিমের প্রধান ড. রায়ান হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের কর্মকর্তা। সেই তালিকায় রয়েছেন দুই ভারতীয় আমেরিকান। এর একজন হলেন সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ‘রুব্রিক’র সিইও বিপুল সিনহা (১৪০ মিলিয়ন ডলার) এবং আরেকজন অনলাইন ড্যাটা স্টোরেজ প্ল্যাটফরম ‘স্নোফ্ল্যাক’র সিইও শ্রীধর রামস্বামী (১০১ মিলিয়ন ডলার)। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেশনসমূহ পরিচালনায় বিশেষ কয়েকটি নীতি অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমদানী-রফতানীর কর প্রদান, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সতর্কতা অবলম্বন, বহুত্ববাদ, সমতা এবং কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা। এর ভিত্তিতে সিইও-গণের সর্বজনীন মর্যাদার ব্যাপারটি নির্দ্ধারিত হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের পর্যবেক্ষণ-প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। সে অনুযায়ী উপরোক্ত সিইও-গণের বার্ষিক বেতনের সাথে একই সংস্থার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেতন পাওয়া কর্মকর্তার সাথে যে বৈষম্য-তা আকাশ-পাতাল। তবে সিইও’রা অন্যায় ভাবে অনেক বেশী বেতন পাচ্ছেন-তা বলার কোন সুযোগ নেই। তারা দিন-রাত মেধার বিনিয়োগ ঘটাচ্ছেন নিজ নিজ সংস্থার সাফল্যের জন্যে-যা নিবেদিত রয়েছে মানবতার কল্যাণে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারির সময়েই টেভোজেন বায়ো’র সিইও এবং গবেষণা টিমের প্রধান ড. রায়ান সাদী উদ্ভাবিত ‘টিভিজিএন-৪৮৯’ ও ‘সাইটোটটিক্স টি লিম্ফোসাইটস’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেয় এফডিএ (ফেডারেল ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন)। ২০২১ সালের ১২ জুলাই শুরু হয় সেই ট্রায়াল। সেটির সফল পরিণতি ঘটলেও আনুষঙ্গিক কারণে সেই ট্রায়ালের সফল পরিণতির তথ্য এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

ক্যান্সারের নির্মূলের জন্যে ড. রায়ান উদ্ভাবিত ‘টি সেল থেরাপি’র গুরুত্ব অনুধাবনের পরই সারাবিশ্বে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) কে-৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. রায়ান সাদী।

১৯৬৪ সালে ৬ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তৈয়ব হোসেন ও আসমা বেগম দম্পতির বড় সন্তান তিনি। টেভোজেন বায়ো কোম্পানির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ডা. রায়ান সহ-ধর্মীনী ডা. জুডি আক্তার এবং একমাত্র কন্যা এমিলিকে নিয়ে নিউজার্সির ওয়ারেন সিটিতে বাস করছেন। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এইচএসসি পাশের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিএস পাশ করেন। এরপর তিনি পাড়ি জমান আমেরিকায়। ডা. রায়ান কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা-বিজ্ঞানে লিডারশিপ, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে হেলথ পলিসি এবং অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেন তিনি।

ড. রায়ান দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ায় বাংলাদেশি আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (ডব্লিউইউএসটি)র বার্ষিক কনভোকেশনে কি-নোট স্পিকার হিসাবে নিজের জীবনের গল্প শোনান এবং বলেন, একটি লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে গেলে জীবনের যে কোনো অর্জন সম্ভব। সময়ের ব্যবধানে তা সত্যে পরিণত হয়েছে তার জীবনে। মৃদুভাষী ড. রায়ান এ সংবাদদাতাকে বললেন, প্রচার-প্রচারণায় আমি বিশ্বাসী নই, মানবতার কল্যাণে কিছু করতে সক্ষম হচ্ছি-এটাই আমার পরম তৃপ্তি। এই মনোভাব যেন বাকিটা জীবন উজ্জীবিত রাখতে পারি সেজন্যে সকলের দোয়া চাই।

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us