নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ
নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় ‘মাথানষ্ট’তে গ্রাহক-সেবায় ব্যস্ত শেখ ইসলাম। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
ঢাকাইয়া স্বাদের হালিম, লালবাগের মুড়ি ভর্তা আর পাগল পানি-সহ নয়াবাজার দই ফুচকা’র জন্যে প্রতিদিন বিকেলে প্রবাসীদের সাথে ভিনদেশীদেরও দীর্ঘ লাইন দেখা যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় হিলসাইড এলাকায় ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র সন্নিকটে সম্প্রতি চালু ফুচকার দোকান ‘মাথা নষ্ট’র সামনে। ব্যস্ততম সড়কের পাশে দাঁড়ানোর সুপরিসর জায়গা নেই-তবুও ‘মাথা নস্ট’র সুস্বাদু খাদ্যে রসনা পূরণে কেউই বিব্রত হচ্ছেন না। তুলনামূলক কমদামে ঝাল মুড়ি, ফুচকা, হালিম, চটপটি, পাগলা পানি আর দিল খুশ চায়ের লোভ সংবরণ করতে পারছেন না তরুণ-তরুণীসহ তাদের মা-বাবা-খালা-মামা-চাচারা। নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা কুইন্সের ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’তে শেখ মো. তাজুল ইসলাম (শেখ ইসলাম) কয়েক সপ্তাহ আগে ‘মাথা নষ্ট’ নামক এই দোকানটি চালু করেছেন। নামের কারণেও অনেকে আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং ফুচকা কিংবা মুড়ি ভর্তা খেয়ে সত্যি সত্যি অনেকে পাগল হচ্ছেন তা বারবার খেতে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে দেড় দশক আগে সর্বপ্রথম ‘টং’ নামে একটি ফুচকার দোকান বসানো হয়। সময়ের ব্যবধানে জ্যাকসন হাইটসের ‘লিটল বাংলাদেশ’ এলাকায় ডজনখানেক ফুচকার দোকান বসেছে এবং প্রতিটিতেই ব্যাপক ভীড় দেখা যায় পড়ন্ত বিকেলে। কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীরাই বেশী আসছেন এসব দোকানে। এসব দোকানের নামেও ভিন্নতা রয়েছে-চাপ সামলাও, পুরান ঢাকা, বশির হালাল ফুড, কাজী পিঠাঘর, স্বাদের ঘর ইত্যাদি।

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় ‘মাথানষ্ট’র সামনে দীর্ঘ লাইন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
‘মাথা নষ্ট’র মালিক শেখ ইসলাম বললেন, আশাতীত সাড়া পাচ্ছি। সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঢাকাইয়া বীফ হালিম, লালবাগ স্পেশাল মুড়ি, ধানমন্ডি স্টাইল ফুচকা, নয়াবাজার দই ফুচকা, বাচ্চা ফুচকা, আড্ডা বাছা চটপটি এবং মাথা ঠান্ডা করার ‘পাগলা পানি’ আর দিল খুশ চা। এর বাইরেও রয়েছে চিকেনের নবাবী প্ল্যাটার, নাগা মরিচের সংমিশ্রনে ফিফটি ফাইভ থাউজেন্ড ভোল্টের মুড়ি ভর্তা, নিউইয়র্ক সাইটল মুড়ি, ঢাকাইয়া স্টাইল ফুচকা, রাজার রাজ খাচুরি, নাগা বেলপুরি, ভ্রদ্রপুরি, বিউটি লাচ্চি ইত্যাদি। শেখ ইসলাম জানালেন, দিনদিনই গ্রাহকের সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খোলা রেখেও সামাল দিতে পারছি না। আলহামদু লিল্লাহ। গ্রাহকের রুচি ধরে রাখতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য নেই শেফদের।
শেখ ইসলাম বললেন, অনেকে বাসায় নেয়ার জন্যেও অর্ডার দিচ্ছেন। ক্যাটারিং সার্ভিসও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে।
এদিকে, জ্যাকসন হাইটসের ফুচকার দোকানে জায়রোর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে প্রবাসীদের মধ্যে। সাথে রয়েছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বাহারি আয়োজন।

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় ‘মাথানষ্ট’র সামনে দীর্ঘ লাইন। ছবি-এনওয়াইভয়েস২৪ ডটকম।
একইভাবে এস্টোরিয়া, ওজোনপার্ক, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, পার্কচেস্টার এলাকার বাইরে ম্যানহাটানের অলি-গলিতেও বিস্তৃত হয়েছে বাঙালি স্বাদের পরিপূরক এসব খাবারের দোকান। চলতি পথে ‘ফুড কার্ট’ হিসেবে পরিচিত এসব খাবারের দোকানে সবকিছুর দাম নিকটস্থ রেস্টুরেন্টের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এজন্যে ট্যুরিস্ট এবং স্টুডেন্ট-সহ স্বল্প আয়ের লোকজন পারতপক্ষে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে চাচ্ছেন না। আর এই সুবাদে কম্যুনিটির অনেকে স্বল্প পুজিতে অধিক আয়ে সক্ষম হচ্ছেন বলে জানা গেছে। নিউইয়র্ক সিটির রাস্তার পাশে এসব ফুড কার্ট’র সিংহভাগেই রয়েছেন বাঙালিরা। বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি ড্রাইভারের ৩২% হলেন বাংলাদেশী। একইভাবে অলি-গলিতে অবস্থিত ফুড কার্টগুলোর মালিক বাংলাদেশী হওয়ায় নবাগতরা সারাদিন একটি ইংরেজী শব্দ ব্যবহার না করেও সকল সার্ভিসের সুযোগ পাচ্ছেন। বহুজাতিক এ সমাজে এ এক অকল্পনীয় ব্যাপার।
Posted ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24