বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ
২০ বছর আগে ট্রাফিক আইন লংঘনের জন্যে গ্রেফতারের তথ্য গোপন করেছিলেন বাংলাদেশী এক ইঞ্জিনিয়ার। গ্রীণকার্ডের পথ বেয়ে সিটিজেন হবার দরখাস্তে সে তথ্য কেন উল্লেখ করা হয়নি-তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস)’র এমন নোটিশ আরো অনেকে পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। টেক্সাসে উচ্চ বেতনে কর্মরত এই বাংলাদেশী আমেরিকানের সিটিজেনশিপ কেড়ে নিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রাথমিক এ প্রক্রিয়ায় বিচলিত তার গোটা পরিবার। উল্লেখ্য, গ্রীণকার্ড পাবার ৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন হবার আবেদন জানাতে হয়। সে সময় একটি সুযোগ থাকে অতীতের ভুল-ভ্রান্তি শোধরে নেয়ার। অর্থাৎ নাম সংশোধন, কোন অপকর্মে লিপ্ত থাকার জন্যে দন্ডিত হলে তা উল্লেখ করা অথবা অন্য যে কোন অপরাধের তথ্য সবিস্তারে বর্ননার। যারা এমন তথ্য গোপন করেছেন বা মিথ্যা বলে সিটিজেন হিসেবে শপথ নিয়েছেন-তাদের সিটিজেনশিপ বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে ইউএসসিআইএসের।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং আইসের মিডিয়া দফতর থেকে ১৪ জুলাই সকালে এ সংবাদদাতাকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর চলমান অভিযানকে ব্যপকতা দেয়া হয়েছে। সিটিজেনশিপ গ্রহণকারীদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে অপরাধের তথ্য গোপন করার জন্যে। ইতিমধ্যেই শতাধিক সিটিজেনকে আটক করা হয়েছে। এদেরকে দেওয়ানি আদালতে পাঠানো হচ্ছে না। নয়া বিধি অনুযায়ী ক্রিমিনাল কোর্টে সোপর্দ করা হচ্ছে অর্থাৎ খুব দ্রুত এদের ব্্যাপারে চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশী ঐ ইঞ্জিনিয়ার নোটিশ পাবার পর একাধিক এটর্নীর শরনাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু কেউই তাকে অভয় দিতে পারেননি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঐ প্রবাসী ভেঙ্গে পড়েছেন এবং ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন গ্রেফতারের আশংকায়।
ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন মেট্র এলাকা থেকে আরো ৩৩ বাংলাদেশীকে গ্রেফতারের সংবাদ পাওয়া গেছে-যারা অবৈধ অভিবাসী নন। তারা সকলেই গ্রীণকার্ডধারী। বিভিন্ন ধরনের অপরাধে তারা লিপ্ত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গিকার ছিল গুরুতর অপরাধে লিপ্ত অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পরই বহিস্কার করার। কিন্তু এখোন অবৈধদের পাশাপাশি গ্রীণকার্ডধারীরাও টার্গেট হয়েছেন অপরাধে লিপ্ত থাকায়। এরফলে গোটা কম্যুনিটি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবৈধ অভিবাসীরা ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। কর্মস্থলে হাজির হচ্ছেন না। সেই পরিস্থিতির মধ্যে ছোট-খাটো অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন কিংবা মামলা বিচারাধীন রয়েছে-তারাও স্বস্তিতে নেই। কারণ, গত মাস থেকে আদালত চত্বর, এমনকি এজলাশেও হানা দেয়া হচ্ছে টার্গেটেড লোকজনকে গ্রেফতারের জন্যে।
এদিকে, লসএঞ্জেলেস সিটির সন্নিকটে ভেনচুরা কাউন্টির গাজা ক্ষেতে হানা দিয়ে এ সপ্তাহে ৩৬১ জন চাষীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা সকলেই অবৈধ অভিবাসী। এ অভিযানে বাধা দেয়ায় ৪ সিটিজেনকেও গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এজেন্টরা। নিউইয়র্কের মত ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটেও গাজা চাষ এবং গাজা সেবনের বৈধতা রয়েছে। তবে চাষাবাস করতে হবে বৈধ লোকজন দিয়ে। সেই নির্দেশ লংঘনের জন্যে চাষীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ঐসব খামারের মালিকের বিরুদ্ধেও মোটা জরিমানার নোটিশ দেয়া হচ্ছে। এর আগে রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি, দোকান, নির্মাণ ব্যবসা প্রভৃতি স্থানে হানা দিয়ে লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের পর নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐসব অবৈধ অভিবাসীকে যারা কাজ দিয়েছিলেন তাদেরকেও মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েম বলেছেন, অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের অভিযানে যারাই বাধা দেবে তারাও গ্রেফতার হবে এবং যারা অবৈধদের কাজ দিয়েছেন তাদেরকেও মোটা অংকের অর্থ জরিমানা গুণতে হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃতদের তৃতীয় কোন দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অনুমতিও এসেছে ইউএস সুপ্রিম কোর্ট থেকে। অর্থাৎ ট্রাম্পের ঢালাও গ্রেফতার ও বহিস্কারের মনোবাঞ্ছা এখোন আর অপূর্ণ থাকার কোন অবকাশ নেই।
Posted ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24