তসলিমা নাসরিনের পর্যবেক্ষণ

”আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার”

নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

”আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার”

তসলিমা নাসরিন। ছবি- সংগৃহীত।

ছাত্র আন্দোলনের ”আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার” স্লোগানটিকে ভেবেছিলাম হাসিনার ইনফেমাস ” কোটা মুক্তিযোদ্ধার বাচ্চারা পাবে না তো কি রাজাকারের বাচ্চারা পাবে?’ উক্তিটিকে কটাক্ষ করে করা হচ্ছে। আসলে এখন বুঝি, ওই স্লোগান কটাক্ষ ছিল না, আসলেই ছাত্ররা তা মীন করেছে। তারা রাজাকারই, তারা সেই দলে বিলং করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, এবং ৩০ লক্ষ মানুষের খুন হওয়া আর ২ লক্ষ মেয়ের ধর্ষিতার হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছিল। তারা আসলেই রাজাকারের বাচ্চা নব্য রাজাকার। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কী করে বুঝলাম যে তারা রাজাকার? এ কি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট নয়? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক যিনি দিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িটি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে তারা, তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীতে কাউকে শোক প্রকাশ করতে দেয়নি, যারা ফুল দিতে এসেছিল তাদের অপদস্থ আর অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যত তাঁর ভাষ্কর্য ছিল, যত স্মৃতি ছিল, জাদুঘর ছিল , সব গুঁড়িয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে। শুধু তাঁরই নয়, যত মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি ছিল দেশে, সব ধ্বংস করেছে। তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে নিজেদের কোটা আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধ বলতে চায়, রাজাকারকে বলতে চায় মুক্তিযোদ্ধা। এত দুঃসময় স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনওদিন আসেনি। একাত্তরের রাজাকাররা ছিল মুসলিম মৌলবাদি, এবং হিন্দু বিরোধী, সে কারণেই নব্য রাজাকার হিন্দুদের টাকাপয়সা সোনাদানা লুঠ করেছে, হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।

হাসিনার দুঃশাসন শেষ হয়েছে, কিন্তু ভয়ংকর এক দুঃশাসন শুরু হয়েছে। মব ভায়োলেন্স এখন নর্ম। ভায়োলেন্ট মব মানুষকে রাস্তাঘাটে হেনস্থা করছে, চাকরি থেকে হিন্দুদের এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হুমকির মুখে পদত্যাগ করাচ্ছে। এনজিও সরকার এইসব ভায়োলেন্সের বিচার করার কথা একবারও বলছে না। বলছে না, কারণ এইসব ভায়োলেন্সকে তারা অ্যাপ্রুভ করছে। তারাও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাতিল করে রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্মান করছে। এই রাজাকারদের অনেকে আমাকে মেসেজ পাঠাচ্ছে, আমি যেন যাই বাংলাদেশে, যেন তারা আমাকে কুপিয়ে মারতে পারে। আমি জানি কারা আমাকে এভাবে ঘৃণামিশ্রিত হুমকি দেয়। দেয় জিহাদিরা। ও হ্যাঁ, জিহাদি সমর্থক সরকার কারাগারে বন্দি সমস্ত জঙ্গী জিহাদিকে মুক্তি দিয়েছে। তারা এখন তাদের মহান জিহাদ চালাবে দেশময়। এই জিহাদিরা ব্লগার কুপিয়ে হাত পাকিয়েছে, এখন যুক্তিবুদ্ধির কথা যে লোকই বলবে, ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাকস্বাধীনতার কথা যে লোকই বলবে, একাত্তরের কথা যে লোকই বলবে, তাকেই কোপাবে। (ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us