বিশেষ সংবাদদাতা
প্রিন্ট
রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
ভারতীয় আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন মতামত/মন্তব্যে সয়লাব হয়ে পড়েছে মার্কিন সোস্যাল মিডিয়া। টিকটক, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব, ফেসবুক এবং এক্স-এ এধরনের বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্যে দায়ী করা হচ্ছে ‘ম্যাগা’ (মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সাপোর্টারদের। ‘এশিয়ান-আমেরিকান এ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার (এএপিআই) ইক্যুইটি এলায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুসা কুলকার্ণি ৩০ আগস্ট মার্কিন গণমাধ্যমে এ অভিযোগ করেছেন। শুল্কারোপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ছাড়াও ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনয়ন প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ না করায় মোদির প্রতি ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এমন তথ্য গণমাধ্যমে আসার পাশাপাশি মোদিও চীন সফরের ব্যাপারটি ট্রাম্প সমর্থকদের ভারতীয়দের বিরুদ্ধে প্রচন্ডভাবে ক্ষেপিয়ে তোলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভ’ত কমলা হ্যারিসের প্রার্থীতা ছাড়াও ঐ নির্বাচনে বিজয়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের স্ত্রী ভারতীয় আমেরিকান উষা ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডি হওয়ার সময় থেকেই শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে এক ধরনের হিংসার প্রকাশ ঘটতে শুরু করে। তার সাথে যোগ হয়েছে মার্কিন কল-কারখানা, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সেক্টরে দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারির ঘাটতি পূরণে এইচ-১বি ভিসায় ভারতীয়দের আগমন ব্যাপকভাবে ঘটার বিষয়টি। ইউএসসিআইএস (ইউনাইটেড স্টেট সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস)’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে এইচ-১বি ভিসার ৭১% পেয়েছেন ভারতীয়রা।
মঞ্জুসা কুলকারনি ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করেছেন যে, বিশ্বে সেরা একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এটি সম্ভব হয়েছে ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ান মেধাবিগণের মেধা নি:স্বার্থভাবে বিনিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে। বিভিন্ন দেশের কঠোর পরিশ্রমী অভিবাসীগণের মধ্যে ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ানরা বরাবরই ঝলসে উঠেছে মার্কিন কোম্পানীগুলোর সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে। এটা কল্পনাপ্রসূত কোন ঘটনা নয়, পরম বাস্তবতা। তারপরও কেন বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে ‘সভ্যতার শীর্ষে আরোহনকারি আমেরিকায়’-প্রশ্ন এএপিআইয়ের এই পরিচালকের। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানরা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় নিপতিত হয়েছেন। এএপিআই ইক্যুইটি এলায়েন্সের তথ্য অনুয়ায়ী গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ‘মুনশুট’ নামক একটি সংস্থার তৎপরতা সোস্যাল মিডিয়ায় অবিশ্বাস্যরকমভাবে বেড়েছে এবং এটি নেতৃত্ব দিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোতে। এ বছরের মে-জুন মাসে ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী কথাবার্তা পোস্ট করার সংখ্যা ৭৫% বেড়ে ৪৪ হাজার হয়। অতি সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে আটিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’র (এআই) সিনিয়র পলিসি এডভাইজার হিসেবে ভারতীয় আমেরিকান শ্রীরাম কৃষ্ণানকে নিয়োগের পরই ম্যাগা সমর্থকদের মধ্যে ভারতীয় আমেরিকান বিরোধী তৎপরতা বেড়েছে। শ্রীরাম কৃষ্ণান এইচ-১বি ভিসা অব্যাহত রাখা এবং অভিবাসন-ভিসার (গ্রীণকার্ড) দেশভিত্তিক কোটার বিলুপ্তির ব্যাপারে সরব হবার পরই ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকেরা সোস্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষী মতামত ব্যক্ত করছেন। যদিও এর আগে ট্রাম্প নিজেই এইচ-১বি ভিসার পরিধি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আমেরিকার বৃহত্তর স্বার্থে। গত জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে ‘এআই শীর্ষ সম্মেলনে’ বক্তব্যকালে আগের অবস্থান পাল্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নমনীয় রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ আমেরিকার সকল সিদ্ধান্তের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থকরাই পাবেন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের অনেক বড় বড় টেক কোম্পানী আমেরিকার উদার নীতির সুযোগে চীনে কারখানা স্থাপন করে, ভারত থেকে দক্ষ কর্মশক্তি আমদানী করে, আয়ারল্যান্ডে বাণিজ্য চালিয়ে অনেক বেশী মুনাফা অর্জন করেছে। ঐসব দিন এখোন আর নেই। ভুলে যান সে সব উদারতার কথা। এখোন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। ট্রাম্পের বক্তব্যের পরিপূরক একটি পোস্ট দিয়েছেন জর্জিয়া থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রীণ। এক্স-এ তিনি লিখেছেন, আমেরিকানদের স্থলে ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসায় নিয়োগের কথা ভুলে যান।
ট্রাম্প এবং মারজোরির উপরোক্ত মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সান ডিয়েগোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গৌরব খান্না বিশ্বখ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকাকে বলেছেন, এমন মন্তব্য সবসময়েই রাজনৈতিক ময়দানকে উত্তপ্ত করে। তবে আমি মনে করছি এহেন মনোভাব পরিত্যাগ করা উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ মেয়াদে বারবারই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়নতার ছাপ দেখতে পাচ্ছি। ডেমক্র্যাটদের কোনঠাসা করার অভিপ্রায়ে রিপাবলিকানরা এমন কিছু বলছেন যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি হচ্ছে। মৌলিক চেতনার সাথে যা কখনো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়-এমন মন্তব্য করতেও রাজনীতিকরা দ্বিধা করছেন না।
২০২০ সালে গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান-সোস্যাল সায়েন্স’র গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৬৫ সালে প্রণীত ইমিগ্রেশন এ্যাক্ট’র আওতায় ভারতীয় ইমিগ্র্যান্টরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। আর এটি ঘটছে ভারতীয়দের মেধা আর কর্মনিষ্ঠার কারণে। অধ্যাপক গৌরব খান্না বলেন, এইচ-১বি ভিসায় ভারতীয় কম্প্যুটার বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই তথ্য-প্রযুক্তির সুফল আসতে থাকে আশাতীতভাবে। বেতন-ভাতাও বেড়ে যায় এ সেক্টরে। ফলে ভারতীয়দের অনেকেই স্থায়ী বসতি গড়েছেন আমেরিকায়-যার সুফল পাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সাউথ এশিয়ান এ্যান্ড ইন্ডিয়ান আমেরিকান ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক চিন্তন পাটেল এহেন বিদ্বেষী আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যে আমেরিকাকে আমরা চিনি তা এখোন অদৃশ্য হতে চলছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণে তার উগ্রপন্থি সমর্থকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে-যা কারোর জন্যেই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
Posted ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24