
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট : ১:৪০ অপরাহ্ণ
শামসুল হক।
নিউইয়র্ক সিটির স্কুল বাস ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে একটি বিশেষ কমিশনের চেয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান শামসুল হককে। সিটির এডুকেশনাল পলিসি প্যানেলের চেয়ারম্যান গ্রেগ ফকলনার ২ অক্টোবর এ নিয়োগ দিয়েছেন।
শামসুল হক বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন তথা বাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি এবং নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট। এ কমিশন স্কুল বাসের দেরি, ভুল বোঝাবুঝি এবং শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার সমস্যা নিয়ে কাজ করবে এবং ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন ও এডুকেশনাল পলিসি প্যানেলকে সুপারিশ প্রদান করবে। নবনিযুক্ত কমিশনের চেয়ার শামসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ, সময়মতো এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন নিশ্চিত করা”। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে পাবলিক স্কুলসমূহে ১০ হাজার বাস রয়েছে যারা বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীকে বাসে উঠায় এবং ছুটির পর বাসায় নামিয়ে দিচ্ছে। শামসুল হক এর আগে নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কমিটির সদস্য ছিলেন, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। অভিভাবক হিসেবে শামসুল হকের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকে এ দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত করেছে।
লেফটেন্যান্ট শামসুল হকের জন্ম সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জের বাঘার গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত আবদুল মুসাব্বির এবং মা প্রয়াত নুরুন নেছা। স্ত্রী রুবিনা হক ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে বসবাস করছেন। তার অন্যান্য ভাই-বোনও যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী এবং নিউইয়র্কে বসবাস করেন। শামসুল হক ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর নিউইয়র্কে বাস-বয়, ডেলিভারী ম্যান, ম্যানেজারসহ নানা চাকরি করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ১৯৯৭ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে তিনি নিউইয়র্কের লাগোয়ার্ডিয়া কমিউনিটি কলেজ থেকে এএস এবং বারুক কলেজ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বারুক কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সিএনইওয়াই ট্রাস্টির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন এবং উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যান। পরে তিনি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মুসলমানদের দোষারোপ করার পর শামসুল হক সিদ্ধান্ত নেন তিনি পুলিশ বিভাগে যোগ দেবেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারীতে শামসুল হক এনওয়াইপিডিতে পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগদানের পর ২০১০ সালে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি পেয়ে ব্রঙ্কসে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পেয়ে এনওয়াইপিডি’র অভিজাত অভ্যন্তরীণ বিষয়ক তদন্ত গ্রুপে নিযুক্ত হন। আমেরিকান গোয়েন্দা স্কোয়াডে প্রথম বংলাদেশী তথা দক্ষিণ এশীয় লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টির অনুভ’তি প্রকাশকালে লেফটেন্যান্ট শামসুল হক বলেছিলেন, ‘যদিও আমি প্রথম এই কীর্তি গড়েছি, তবে আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই পদে আরো অনেক বাংলাদেশীকে দেখবেন।’
চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর শামসুল হক ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সেটির ব্যানারে গত দু’বছর ধরে মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের জোরালো ভ’মিকায় অবতীর্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের বড় ধরনের আয়োজনে তাকে টেবিল পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সিটিজেনশিপ গ্রহণকারিগণকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তির কাজ করেন শামসুল হক। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও অবহিত করেন সকলকে। ‘যাকে পছন্দ হয় তাকেই ভোট দিন এবং ব্যালট যুদ্ধে অবতীর্ণ হউন’-এমন আকুতি উচ্চারিত হয়। শামসুল হক জানান, কম্যুনিটি হিসেবে মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে গুরুত্ব বৃদ্ধি এবং ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভোটে অংশগ্রহণের ব্যাপারটি নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। কম্যুনিটির মানুষের কল্যাণে নিবেদিত মৃদুভাষী শামসুল হকের এই নিয়োগে সকলেই আপ্লুত। যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তম শিক্ষা দফতরের শিক্ষার্থীগণের যাতায়াত-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর এই দায়িত্বে শামসুল হক যথাযথ ভ’মিকা পালনে সক্ষম হলে মূলত: বহুজাতিক সমাজে প্রবাসীদের দিপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার পথকে আরো সুগম করবে বলে সুধীজনের ধারনা।
Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫
nyvoice24 | New York Voice 24